'সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'

'নারী' এই কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারী-পুরুষ অর্ধেক-অর্ধেক বলেন নাই, তিনি বলেছেন নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তিনি এত আগে এই কথাটি বুঝতে পেরেছিলেন, আর আমরা এখনো সমাজের সেই পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে বসে আছি। হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রী বলতে আমরা ৫০-৫০ বলি। এই ৫০-৫০ মানে স্বামী অর্ধেক স্ত্রী অর্ধেক তা নয়। এই ৫০-৫০ মানে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। এই পৃথিবীতে কেউই পরিপূর্ণ নয়। সবারই কিছু না কিছু কমতি থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক হয়ে এই কমতি পূরণ করে। তারপরই এই পবিত্র সম্পর্ক হয় পরিপূর্ণ। হ্যাঁ, আল্লাহ নারী-পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক করে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন।

আজকাল একটা ব্যাপার খুব দেখা যায়, নারীরা নিজেদের পুরুষের সাথে তুলনা করছেন। এই কাজটা যদি পুরুষ করতে পারে, তবে আমরা পারব না কেন! আর আমি ভেবেছি, এই কাজটা যদি অন্য মানুষ করতে পারে, তবে আমি পারব না কেন। আমি নিজেকে মানুষ ভেবেছি। হ্যাঁ, নারীরাও মানুষ। নারীদেরও মাথা সমুন্নত করে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

তবে কিছু মহিলাকে দেখা যায়, তারা সমাজের শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসতে চায় না। তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের পায়ে সমাজের শেকল পরে। আর যখন দেখে কোন নারী সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তার ইচ্ছের ডানা মেলতে শুরু করেছে সাথে সাথে ওই নারীর পায়ে সমাজের শেকল পরাতে উদ্যত হয়ে পড়ে। যেন আমি শেকলটি পরেছি, তোমাকেও শেকলটি পরতে হবে! ডানা মেলে ধরবার আগেই ওই ডানা কেটে দিতে হবে! সমাজে নারীর অবস্থানের জন্য পুরুষকে দোষ দেবার আগে নারীকে তার সম্মান সম্পর্কে অবগত করতে হবে। নারীদের নিজের চিন্তা ভাবনার উন্নতি ঘটাতে হবে। নারীকে সমাজের এই শেকল ভাঙতে হবে। কোন বড় ধরণের পরিবর্তন চাইলে নারীর অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সমাজের বেঁধে দেয়া শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যদি নারীরা জিজ্ঞ্যাসা করে, এত বাঁধা অতিক্রম করে আমরা কিভাবে সামনে এগোব? তো আমি বলব, 'Be Brave!' সাহস আর ধৈর্য এর বলে সামনে এগোও। তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা পুরুষের সাথে শেয়ার কর, তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার কাজে লেগে পড়। তাইতো কাজী নজরুল ইসলাম আবারও বলেছেন-
'সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!'