একদা নবীন নওজোয়ান একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে গেলো। অনুষ্ঠান মাত্র শুরু হয়েছে, তেমন কেউই আসেনি। কনে বসে আছে যথাস্থানে আর সাথে আছে কনের মা-বাবা, কয়েকজন আত্মীয়, বান্ধুবী আর কাজিন। নবীন নওজোয়ান উপহার জমা দিয়ে ভিতরে এসে চারদিকে তাকালো। লোক সমাগম হতে আরও ঢের সময় বাকি। হঠাৎ নবীন নওজোয়ােনের চোখে পড়লো একটা সুন্দর মেয়ে সামনের একটা চেয়ারে বসে আপনমনে মোবাইল স্ক্রল করছে। মেয়েটির পরনে সোনালি রঙের চকচকে লেহেঙ্গা। নবীন নওজোয়ান ভাবলো, মেয়েটির সামনে একটু ভাব মারা যাক। কিন্তু মেয়েটা কি পাত্তা দিবে? সেও তো স্যুট-প্যান্ট পরে হ্যান্ডসাম হয়ে আছে। আর কয়েকদিন আগেই তো ইন্টার্নশিপ শেষ করে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে জয়েন করেছে। ওর নামের আগে এখন ডাক্তার উপাধি যুক্ত হয়। পাত্তা না দিয়ে যাবে কোথায়?
ছবি ক্রেডিটঃ pixabay.com
নবীন নওজোয়ান মেয়েটির দিকে এগোচ্ছে আর ভাবছে, বিয়েতে আগে আসার এটাই তো সুবিধা। ভাবতে ভাবতে ও যখন মেয়েটার পাশে বসতে যাবে একটা ৪-৫ বছরের বাচ্চা মাঝখানে বসে পড়লো। এখন দৃশ্য হয়েছে মেয়েটা আর ওর দুই চেয়ারের মাঝখানের চেয়ারে বাচ্চাটা দেয়াল হয়ে বসে আছে। নবীন নওজোয়ান অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে একবার বাচ্চাটার দিকে একবার মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো স্ক্রল করছে। এরপর সে সামনে তাকালো। সামনে ষ্টেজে কনের সাথে আন্টিরা সব ছবি তুলছে। নবীন নওজোয়ান ভাবলো, আরে এই বাচ্চাটা কার! এই বাচ্চাকে কাবাব মেইন হাড্ডি হওয়া থেকে তো সরতে বলতে পারিনা। পাছে না আবার মেয়েটার কাছে ইম্প্রেশন খারাপ হয়ে যায়।
এইবার সে মেয়েটাকে ইমপ্রেস করার একটা নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছে। 'হাই, বাবু তোমার নাম কি? .... হায়রে আমার গল্লু গল্লুটা (ছেলেটার দুই গাল টানতে টানতে)। নবীন নওজোয়ান মেয়েটার দিকে তাকালো, মেয়েটার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে এখনো একমনে মোবাইল স্ক্রল করছে। 'আলে আমার টুকু টুকু লে (ছেলেটার থুতনি টানতে টানতে)। একটা অশ্রাব্য গালি। বাচ্চা ছেলেটার গালি শুনে মেয়েটা হতচকিত হয়ে মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকালো। আর নবীন নওজোয়ান থতমত খেয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকালো। 'আমাল নাম বাবু না। বাবু আমি ছোতো বেলায় চিলাম, একন আমি বল(বড়) হইচি। আমলাও আদল(আদর) আর অন্নেক আদল বুজি।' মেয়েটা একবার নবীন নওজোয়ানের দিকে তাকালো। তারপর চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। কি ভেবেছিলো আর কি হলো এটা ভেবে না দুঃখে না নিজের বোকামিতে নবীন নওজোয়ানের দুই চোখ দিয়ে পানি ফেটে আসলো। এরপর বাকিটুকু ইতিহাস হয়ে গেলো।
[একটা সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে]