somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ৩

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ১
মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ২

ভ্রমণের সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের ঘটন ঘটে, কিছু আছে হাস্যরসাত্মক আবার কিছু আছে বিরক্তি কর আবার কিছু আছে দুঃখ জনক। ভ্রমণে এই রকম মজার মজার ঘটনা বিস্তর ঘটতে থাকে, তবে বেশীরভাগই আমরা ফিরতে না ফিরতে ভূলে যাই। স্মৃতির পাতা থেকে এই ঘটনাগুলি লেখা শুরু করলাম। আজকে এই বিষয়ের তৃতীয় পোষ্টঃ

ঘটনা – ৪

২০০১ সালের ঘটনা, অল্প কয়েকদিন হল বিশ্ববিদ্যালয় ফেরত হয়েছি। কর্ম জীবন মাত্র শুরু, তখনো গা থেকে ছাত্রত্বের গন্ধ মুছে যায়নি। এমন সময় থাইল্যান্ডের একটা প্রফেশনাল ট্রেনিং এর সুযোগ পেলাম। দুই সপ্তাহের ট্রেনিং! আমি যারপরনাই খুশী আর উত্তেজিত, ট্রেনিং এর সুযোগ আর নতুন কি শিখব এইটা বড় কথা না, আমার উত্তেজনার কারণ হল জীবনের প্রথম বিদেশ যাব, একটা দেশ দেখব, জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমণ এই সব নিয়ে :)

যথারীতি সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক বিকেলে ব্যাংককের ডং মং বিমান বন্দরে নামলাম। তখনও গুগল মামুর এমন স্বর্ণ যুগ শুরু হয়নি যে আগে থেকে ব্যাপক জ্ঞানী হয়ে যাব, তেমন কিছুই জানি না, আয়োজনকারীদের পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী ভয়ে ভয়ে টেক্সি ভাড়া করে পূর্ব থেকে নির্ধারিত হোটেলে পৌছালাম। সমস্যা হলো যে হোটেল হল পাঁচ তারকা বিশিষ্ট, তখন পর্যন্ত আমার এমন হোটেল তো দুরের কথা জীবনে একবার মাত্র হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল তাও আবার টাংগাইলের ভূয়াপুর ঘাটের পনের টাকার ছিট ভাড়ার এক চিত-কাত বোর্ডিং ( এই বিষয়ে মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ২ এ লিখেছি)। এখন হঠাত করে এত চাকচিক্যময় বড় পাঁচ তারকা মারকা হোটেলে এসে আমার তো অল্প পানির মাছের মত খাবি খাওয়ার দশা :) :)। যে পোর্টার আমার ব্যাগ সহ আমাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে গেল সেও দেখি স্যুট পরা নিপাট ভদ্রলোক আর আমি মোটামুটি ঘষামষা জিন্স পড়া ভ্যাগাবন্ড টাইপের বোর্ডার।

রুমে ঢুকে দেখি ইংরাজী সিনেমায় দেখা হোটেল রুম, বিশাল রুম যেন ফুটবল খেলা যাবে। সুন্দর আঁকিবুঁকি ওয়ালা চাদরে ঢাকা বিশাল বিছানা, দুই জনের বসার মত সোফা, পাশে লেখাঝোকার জন্য টেবিল, রুমে ছোট একটা ফ্রিজ তার মধ্যে হাল্কা আর কড়া পানিয়, চা বানানোর সরঞ্জাম, কিছু ফল হা...হ কি নাই। বাথরুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম আরোও বাহারী, বিশাল বাথটাব এক গাদা সাদা ঝকঝকে তোয়ালে। চারদিকে ঝকমক করছে। বলতে দ্বিধা নেই সবই আমার চোখে নতুন। আমি ব্যাপক খুশী তবে বিড়ম্বনার শুরু কারন এগুলো ব্যবহারের নিয়ম-কানন জানি না। টেলিফোন ঘাটতে ঘাটতে না বুঝে একটা কলই হয়ে গেল, ওপাশ থেকে হ্যালো বলায় তারাতারি কেটে দিলাম। সাথে সাথেই আবার দেখি কল আসলো, আমি আর ধরি না, দুই বার বাজাতে অনিচ্ছা সহ ধরলাম দেখলাম রিসিপশন থেকে কল করেছে, কোন সমস্যা কি-না, আমি ‘No Problem’ বলে তারাতারি কেটে দিলাম।

প্রথমেই গোছল করার জন্য বাথরুমে বাথটাব পানিতে ভর্তি করলাম খুজে মুজে বাথফোম দিয়ে ফেনা তুলে আয়েশ করে গোছল করলাম, যেহেতু বাথরুমে অনেক গুলো বিভিন্ন সাইজের তোয়ালে আমি ভাবলাম কয়েকদিনের জন্য ব্যাবহার করার তোয়ালে একবারে দিয়ে গেছে তাই বাথটাবের উপরে যেটা ছিল সেইটা দিয়ে আরামছে গা-টা মুছলাম, লক্ষ্য করে দেখলাম এই তোয়ালেতে লেখা “Welcome” তাতে কি আসে যায় তোয়ালেতে তো কত কিছুই লেখা থাকে। যাক খাবার টাবার খেয়ে শুয়ে পরেছি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে বিছানার উপড়ে যে সুন্দর নকশাকাটা চাদর ধরে দেখি একটু মোটা নিচে আবার সাদা পাতলা চাদর আমি ভাবলাম বাহ বেশ এরা আবার লেপও দিয়েছে আমি ওইটা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন খসখসে মনে হলে খুব একটা আরাম লাগছে না। ভাবলাম পাঁচ তারকা হটেলে লেপ-টেপ মনে হয়ে এমনই হয় :) :) । যাক প্রথম রাত কাটলো সকালেই আমি ট্রেনিং এ চলে গেলাম।

বিকেলে রুমে ফিরে ভালো করে দেখে আমি একটু টাস্কিত হলাম। দেখলাম আমার মনে করে গায়ে দেয়া লেপ রোল করে ওয়ারড্রোবে তোলা আর সেই পাতলা সাদা চাদর বিছানায় এক কোনা আবার একটু ভাজ করা তাতে দেখা যাচ্ছে নিছে আসল চাদর আর উপরে একটা পাতলা চাদরের নিচে কম্বল। আসলে কম্বলের উপরে আর নিচে পাতলা সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। নিজেরে বেশ বেকুব মনে হলো আমি আসলে গত রাতে এই কম্বলের উপরে শুয়ে মোটা বেড কভার গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি B-) । বাথরুমে ঢুকে আরো ধাক্কা খেলাম দেখি আমি কালকে যে ওয়েলকাম লেখা তোয়ালে ব্যাবহার করেছি তা বাথটাবের পাশে মেঝেতে বিছানো। হা...হ তাইলে এই হইলো ঘটনা! মানে বাথটাব থেকে নেমে এই টাওয়ালের উপরে দাড়াতে হবে যাতে বাথরুমের মেঝে যাতে না ভিজে যায় B-)

পরে রাতের খাবারের জন্য নিচে নামলে আমার কাছে মনে হচ্ছিল যে হোটেলের সব লোকজন মনে হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে...B-)B-)...মনে মনে বলতাছে ওই যে বেটা খ্যাত আসছে পা মোছার তোয়ালে দিয়ে গা মোছে আর রাতে বেড কভার গায়ে দিয়ে ঘুমায়। তবে আমার কৃতজ্ঞতা ওই হোটেলের হাউজকিপারদের উপরে তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে এই ব্যাটা আসলে এগুলো ব্যাবহার জানে না তাই সুন্দর করে ব্যাবহার গুলো বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে একটা কাজ করেছিলাম, সপ্তাহান্তের ছুটির দিনে হাউজকিপিং এর সময় আমি ইচ্ছা করে বাইরে চলে গিয়েছিলাম যাতে তারা আমাকে না দেখতে পায়।

কর্ম জীবনে এর পরে নানা দেশের কত ধরনের হোটেলে যে থাকলাম, তার পরেও যখনি কোন হোটলে ঢুকি আমার সেই মুহূর্তে আমার এই অম্লমধুর স্মৃতি মনে পরে সেই সাথে কৃতজ্ঞতা বোধ করি সেই না দেখা না চেনা হাউস কিপারদের উপরে যারা সুন্দর গোছানো উপস্থাপনায় আমাকে এই বিষয়গুলো শিখিয়েছিল :) :)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×