somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদ ডাঃ মিলন,গনতন্ত্রের জন্ম এবং সেই সময়ের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৭ নভেম্বর, ১৯৯০। সকাল দশটার দিকে বকশীবাজারের মোড়ে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা। রিকশায় জালাল ভাই আর লালবাগ আওয়ামী লীগ কর্মী নজরুল ভাই। সালাম দিতেই বললেন, 'পিজিতে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ডাক্তারদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে, তোমরা আস'। শাহবাগ যাওয়ার পথেই ডা. শামসুল আলম খান মিলন ভাইয়ের সঙ্গে জালাল ভাইয়ের দেখা, মিলন ভাই তার রিকশা ছেড়ে এসে উঠলেন জালাল ভাইয়ের রিকশায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই, রিকশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা পেরুনোর পথেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিক থেকে ঘাতকের বুলেট ছুটে এসে ছিন্নভিন্ন করে দেয় ডা. মিলনের হৃৎপিণ্ড। তাৎক্ষণিক জরুরিভিত্তিতে ডা. মিলনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সহকর্মী চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে অচিরেই ডা. মিলন ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।


ডা. মিলনের মৃত্যুর খবরে শোকাহত ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক-ছাত্র-কর্মচারীরা গর্জে ওঠে বারুদের মতো। তাৎক্ষণিক ছাত্র সংসদ ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ডা. মিলন হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে জোরালো দাবি জানানো হয়। এ ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডাকেন তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক কবিরউদ্দিন। মিটিংয়ের আগে অধ্যাপক নাজমুন নাহার আমাকে আর ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ফরহাদ আলী খানকে কলেজ শহীদ মিনারের পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, 'আমরা পদত্যাগ করতে রাজি, তোমরা তোমাদের দাবি অব্যাহত রাখ'। একাডেমিক কাউন্সিলের সভা চলাকালীন আমরা সভাটিকে বাইরের থেকে ঘিরে রেখেছিলাম। সভা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্যোগে এক বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি জগন্নাথ হল পেরিয়ে টিএসসিতে এসে পেঁৗছলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যোগ দেয়।
ডাঃ মিলন, পুরো নাম শামসুল আলম খান মিলন। ডাঃ মিলন নামেই আজ তিনি গণতন্ত্রের অতন্ত্র প্রহরী হয়ে সবার মাঝে বেঁচে আছেন। ডাঃ মিলন একজন সাহসী প্রগতিশীল রাজনীতিক ছিলেন। সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে একটি প্রগতিশীল, আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করাই ছিল তার স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে লালন করতে গিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিলেন তিনি।
ডাঃ মিলন বাংলাদেশে পেশাজীবী আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। নিজের চিকিৎসা পেশায় সেবা ও মানবকল্যানে নিবেদিত থাকার পাশাপাশি পেশার দক্ষতা, গুরুত্ব ও পেশাজীবীদের দাবী আদায়ে সব সময়ই ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্য দিয়ে এ দেশের চিকিৎসকদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনকে এবং পেশাজীবীদের সংগঠন (প্রকৃচি) আন্দোলনকে ডাঃ মিলন তার জীবনের বিনিময়ে দেশবাসীর সামনে গৌরবান্বিত করে গিয়েছেন তিনি।
গণ বিরোধী স্বাস্থ্যনীতি, চিকিৎসকদের ২৩ দফা বাস্তাবায়নের আন্দোলন করতে গিয়ে এক পর্যায়ে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করতে হলো ডাঃ মিলনকে। ডাঃ মিলন কেন স্বৈরাচারের টার্গেট হলেন? পেশাজীবীদের দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিয়ামক ভূমিকা পালনের স্বপক্ষে তিনি সক্রিয় ছিলেন এটাই কি তার মূল অপরাধ?
ডাঃ মিলন বিশ্বাস করতেন, পেশাজীবী আন্দোলন দেশের সামগ্রীক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তা না হলে রাজনৈতিক আন্দোলন বা পরিবর্তন পরিপূর্ণ হয় না। পেশাজীবীরা যেহেতু রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ অবকাঠামো গঠন এবং জনসেবায় যুক্ত থাকেন,সেহেতু তাদের দেশ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উন্নয়নে অন্তর্নিহিত নিয়ামক ভূমিকা অপরিহার্য। ডাঃ মিলনের এই চিন্তা চেতনাকে দমানোর জন্যই হয়তো তিনি স্বৈরাচারের টার্গেট ছিলেন। যেমনি এদেশের বুদ্ধিজীবীদের ৭১’ এ পাকহানাদার বাহিনী জাতিকে মেধা শুন্য করার জন্য নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
একজন মেধাবী চিকিৎসক, পেশাগত সততা, দক্ষতা, সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় ডাঃ মিলন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ডাঃ মিলন তৎকালীন বিএমএর নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং ঢাকা কলেজের বায়ো কেমিষ্ট্রি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রিয়জন ও প্রিয়মুখ ছিলেন।
আজ পেশাজীবী ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ গণতন্ত্রের আত্ম নিবেদিত সৈনিক ডাঃ মিলনের ২০ তম শাহাদাত বার্ষিকী। অথচ কি বিচিত্র এই দেশ! যার রক্তের বিনিময়ে একটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থানে রূপ নিল, দেশের এত বড় পরিবর্তন হলো, মৃত্যুর ২০ বছরেও ডাঃ মিলনের হত্যাকারীদের কোন বিচার হলো না।
ডাঃ মিলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবনদান করেছেন। সেই গণতন্ত্র কতিপয় ক্ষমতা লিপ্ত, দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিক, অসাধু ব্যবসায়ী, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির হাতে বন্দী থাকতে পারে না। মানুষের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক মানবাধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করে জন কল্যানমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হোক ডাঃ মিলন দিবসের অঙ্গীকার।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×