বঙ্গে থাকি রঙ্গে থাকি জঙ্গ সারাৎসার, আপদে-বিপদে আছেন নজরুল আমার
এখনই সময় সবার সংঘবদ্ধ হবার
বঙ্গে থাকি রঙ্গে থাকি জঙ্গ সারাৎসার, আপদে-বিপদে আছেন ফররুখ আমার
কাল বয়ে যায় কাল তরঙ্গে সাত সাগরের মাঝি হবার
বঙ্গে থাকি রঙ্গে থাকি জঙ্গ সারাৎসার, আপদে-বিপদে আছেন কায়কোবাদ আমার
যায় বয়ে যায় সময় আমার আজান ঊষা দেখার ।।
আজ মেঘদরদী চোখে আমার অশ্রু পারাবার, গাইতে গাইতে যাই চলে যাই গায়েনের পয়ার
মেঘ জলসায় গোলাম আলী বাজান বিদ্যুৎ বাহার
আজ জলসা দারুণ, শায়ের-শোকর, মজলুমের মৌসুম, কন্ঠে আমার গহীন গোপন বেলালের জবান
কবির খাতায় ঝুঁকে আছে বিলাপি আসমান
আজ দহন বড়ো, জ্বালা বড়ো, আজ গুপ্ত বিদ্যা উপ্ত করে আমন রুয়েছি, আজ অশ্রুঅঝর কাল
আজ চাষির হালে তাঁতের টানাপোড়েন, আমার ফসল খেয়ে পেলে অচেনা পয়মাল।।
আজ পলিপালন করে নদী যায় বয়ে যায়, মোহনা নাই আজ নদীর ঠিকানায়
আজ ফকিরি হয়, বেশ-ভূষণে, গজল গীতল হাফিজের সন্ধ্যায়
আজ গালিব যখন সেজদারত, কবি গজল লিখেন তাজিম করে দুনিয়ার খাতায়
আজ বেতমিজ পয়ার হারায় ভাববিভোর এই জীবনের অধ্যায়।।
আঞ্জা করে আবেগ ধরি, আঁজলাভরা নয়নবারি, আজ রোদনলীলায় যায় ভেসে যায় প্রাণধারায়
আজ কান্না গলায় চোখের কাজল, বিগলিত মর্মবেদন
অপ্রাপ্তবয়স্ক হিয়া আমার, হিন্দোলনে বিছমিল্লাহ খাঁর সানাই শূন্য খাঁ খাঁ হাহাকার, আমারই মূলধারায়।।
আজ নিটোলনিদ্রা খোয়াব ক্ষুরধার, ডানায় ডানায় প্রাণপাঙ্খায়, দুনিয়া বিহার
আজ সূর্যস্বাক্ষরিত দিন, আজ মেঘের দস্তখতে বৃষ্টির সীমার কাটে আমারই ব্জ্রঘুড়ির দীপ্তিহার
তসবিহ দানার মতো ছড়ালো আলো, আজ মহব্বতে মিলনমিত্রকলি বাগানে ফুটেছে
আজ জমজ দিগন্তে শেষ বাঁশী বেজে যায় এই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্ধ্যায়
আজ কবির কান্নায় মেঘ ধাবমান ধায়, আজ ইতিহাস আবদার করে আহাজারি আহা-য়
সমস্ত আগামী রাখেন কবির জিম্মায়, কবি দুনিয়ার জায়নামাজে বার বার অবনত রুকু ও সেজদায়।।
আজ মেঘমঞ্জিলে আমি ফুটে থাকা মুকুল, আজ মকসুদের বিধান পাঠে ইহজাতিকতার উশুল
হয়েছে রোদনে, চোখ থেকে খাড়া পাহাড়ের নীচে অশ্রুনৈসর্গিক এবাদতের প্রবাহ
সোজা খাড়ি, বাঁক, ছড়া, ঝরণা ধরে আমার গহীন খুঁড়ে খুঁড়ে
নিজের দহনে নিজে স্রোত হয়ে যাই, নিজের সত্য নিজে আজও চিনি নাই।।
দুনিয়ায় এতো প্রত্যক্ষণ বিহার, ভ্রমণের সুখে করি সংসারের সুখ পরিহার
প্রজ্ঞার প্রজ্ঞাপনে বিদ্যায়তন ঝুপড়ি ঘর
দুনিয়ায় এতো আস্বাদন আধার, এতো নিয়ামৎ অপুষ্পক জিহ্বায় ফুটে উঠে না
শোকর গুজার করে না জিহ্বা, স্বাদের সুস্বাদ সে পায়নি কখনো
দুনিয়ায় এতো আলো, এতো অন্ধকার, এতো ঠাঁট, রুপরেখা, জিজ্ঞাসার জিন্দেগানি
বয়ে আনে শোকর গুজার ক্ষণে গুঞ্জরিত আমাদের আগামি।।
দুই
শোকসুর বাজে আজ নীশিথের হাহাকার, আমার কন্ঠের যিনি আদি সুরকার
আসর ভাঙার আগে গীতের বাহার কানের লতির মতো লতানো হৃদয়ে
শোকসুর বাজে আজ, অশ্রুরা স্বাধীনতাকামী, পূর্ণ তিথীর প্রতীতি অশ্রুত জয়ধ্বনি
শোনা যায়, সুরেলা দীর্ঘ বেলা, বাসন্তী দুপুর, রাঙা ডিম ফাটা রৌশন, সব ধরা পড়ে যায়
চৈতন্যের এন্টেনায়।
শোকসুর বাজে আজ, আমি প্রতিটি হাহাকার আলাদা আলাদা চিনি, হাহাকারের ভাষায়
আমি পাঠ করি আমারই কাব্যের ভাষা
শোকের রোল আর মানুষের রোল নিনাদ প্রকল্পে আমি ভাঙি আমারই সাজানো সংসার
আমরা হাহাকারের ভাষায় লিখি ফেরত খামে চিঠি
হাহাকার হু হুংকারে বাতি জ্বলে উঠে
মানুষের ভাষা থাকে বুকের ভেতরে, অপ্রকাশিত অবোধ শুধু শিখা ও সলতে ধরে
আলিঙ্গন আকুল, প্রতিটি আর্তি আরতির ক্ষণে, প্রতিটি ছিদ্দত ছিন্নভিন্ন এই দুনিয়ার ভারে
এবাদতে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে
মানিকজোড় আজ বিজোড়ে বিধূর
মানিক চাঁদ আজ মহাঝড়ে আজ পিপাসার্ত সিন্ধুর
আমি কলসি উপর চিরায়ত ধারা
চাঁন আমার যায় একি সাজে দয়াল চাঁদের দেশে
আমিই আমার হাহাকার পুষি সদা বক্ষদেশে
ঘুমায়_ আমারই আনন্দনন্দন আমারই অস্তিত্বে অবশেষে।।
দেখেছি অন্ধকারে আলোর পাহারা
দেখেছি নাচুনী চাঁদ আমারই জলস্থিরচিত্তে
দেখেছি দখলদীর্ণ ভূমি, দেখেছি দৃশ্যলুটেরা শহর
এই সব দেখাদেখি, প্রত্যক্ষণ, পর্যবেক্ষণ, মনীষার সীমানায়
দাঁড়ায়, পুঞ্জপুঞ্জ রাগিনীর মুদ্রা
দেখেছি আঁচলে মোচা চোখ, হাহাকার হুহু হাওয়ায় উড়ালউচ্চন্ড কাতর কিশোর
যতোদূর চোখ যায় শুধু পথ, যখন ভেতরে তাকাই, মাতৃমোহিনীর ছায়ায় শুধু চিন্তার রূপরেখা
বিরল বিভূতি আজ দেখেছি
দেখেছি সাপের মাথায় জোছনার ছোবল
চরাচরে রাখালিয়া নদীর শুদ্ধ কন্ঠস্বর, কলকল_
চর থেকে চরে ভূ-ভূমিষ্ঠা আমার প্রিয় নদী
ফারায়েজী লাঙ্গলে চষেছি
চরাচরে শুধু চর ভূমির ভূজঙ্গে ধারা জ্যামিতিক হয়
কে কার জননী, কার জন্মভূমি কে করে লালন
পলাতক গেরিলার মতো নদী দূরে যায়
ভূমিষ্ঠা ভূজঙ্গিনী ভূধর কামড়ায়
ছোবলে ছোবলে আমি জ্যোৎস্না সুন্দর
আমার বাঁশীময় জগতের সুর
জাগ্রত বঙ্গীয় তরু জগদীশ সম্ভাবনায়।।
তিন
দেখেছি মহিষের পিঠে শিবের সফর
পর্যট্ন পবিত্র দরবেশের নাও
কালকালিমা মুছে দেয় নদীর আঁচল
কাল কলন্দর সেই কাল ফের আসে
কেবল হাঁটি, খুঁজি কান্না, হাহাকার
পর্যটনপ্রবল এই দুটো পা পুরু গোড়ালি
আজ শুধু দরবেশী সফর
আমাকে অটলনিটোল স্বচ্ছ তৃষ্ণা দেয়
আমি শুধু হাঁটি, জলধির সব সঞ্চয়
আমার বুকের হাহাকার, তৃষ্ণাকাতর।।
আমার তৃষ্ণায় হয় জল ছলছল
যে সকল নদীর অশ্রু অব্যয়
আমি মানুষের ধারা, চরের পরাণে যে তৃণ
নিজের তাড়নায় গজায়, ঘাসের উচ্চারণে
হাহাকার কিছুটা হায় চর সামলায়
এতো হাহাকার খুঁজছি কেনো! পলিপ্লাবনের সার কথা জানতে চাই। মীনের মীনস্থান যে প্লাবনভূমি, হারায়। হায় হায়! নন্দনতত্ত্ব নিজস্ব সীমানায় অপসৃত দৃশ্যে কাঁদে। কোথায় জোয়ার অভিমুখী উচ্ছ্বাসের ঢল। মাছের কাঁদে।
আজ যাই, যাই, প্লাবনভূমির কাছে
আমি যাই যাই মেচুয়া প্রকৃতির কাছে
নিকারির ছদ্মবেশে, মাছ শুধু খেলায় খলবল।।
ভাইসব, বোনেরা আমার! আজ এই পদ্যবাহার ক্ষণে প্লাবনপবিত্র ভূমি আমাদের হয়। আশ্বিনের আশায় ভাদরআদর ভুলে যায় প্রকৃতি। আমরাই আমাদের অতিথিদের দিয়েছিলাম প্রাণের প্রতিশ্রুতি। ছোট ছোট মাছ আমাদের মতোই বংশ পরম্পরায় এইখানে ছিলো। এই খানের শোলের ছানারা স্বচ্ছ জলের নীচে সাঁতার কেটেছে। আজ প্লাবন ভূমির চোখ শুকনা। এইখানে ছিলো এক দাঁড়ি ওয়ালা বোয়াল, সব দেখেছে।
এসো প্লাবনপ্রকৃতির জন্য রুখে দাঁড়াই
আমরা সাঁতার সাতকূলে চাই
আমরা মেঘেরপটল গ্রামে মেঘ ফুটাই
প্রাণের মরণ ধারায় মানুষের প্রাণ যায় যায়
প্রাণপ্রকৃতির কথা, এসো, আজ শুধু বলি, বলে যাই।
বোনেরা আমার! প্রিয় ভগিনীগণ! অংশ আংশিক নয়। সমগ্র সং হার হলে, সমগ্রে অংগীভূত অংশ না হলে, তা চিহ্নে ও চিন্তায় সমগ্রসার নয়। বাংলা কবিতার প্রকৃতি ফেরত চাই। সঙ্গে ফেরত চাই শোভাও। বাংলা কবিতার সরোবর ফেরত চাই। প্রতিটি ফুল ফেরত চাই। একই চোখে হারায় বর্তমানও।
সঙ্গে ফেরত শোভা, বিরিক্ষির কাটা মুন্ড উড়ে গেছে কোথায়
ব্জ্রপাত সারা বাংলায়, সব গাছ পাতায় পাতায় চমক জাগায়
বিদ্যুৎবহ্নিলতায় ধরেছে বিপ্লব, একতারাফল চিন্তকবিরিক্ষের ডালে
অচেনা রাতে ফুটে। সমগ্র সং হার হলে পদ্য ও পয়ার
কলসি ডোবা কলংকিনী জলে ডুবে যায়, পদ্মার শীর্ণ শাখায়।।
যদি বাংলাদেশের প্রকৃতি হারাই, তবে পদ্য থাকে না। পদ্য প্রকৃতিরই চেতনা। কোথায় সেই মাঝি মাল্লা। কোথায় গোপাট! আমাদের প্রকৃতি লোপাট। প্রাকৃতিক সম্পদ ও শোভার ধারাবাহিকতা না থাকলে কাব্যের নন্দনতত্ত্ব থাকে না।
আমি শোভা চাই, আমি শোভা চাই
আমি শোভায় শোভায় শুদ্ধ হতে চাই
আমি পরাগের সন্তর্পণ প্রাণ রসায়ন
আমি প্রাণ চাই, পরাণের দর্পণ ।।
আমি আমার ইন্দ্রিয়ের ইতিহাস ফেরত চাই। পরম্পরার গল্পের খোঁজে সরোবরে ফিরে যেতে চাই। এই যে মাঠে সোয়াদসমৃদ্ধ ধান তার সব প্রজাতি ফেরত চাই। আমি বুনো হাঁস, বউন্যা মোরগ। স্মার্ট বড়ো বড়ো নখের, উড়াল দেয়া রাতা ফেরত চাই। প্রজাপতি ফেরত চাই। প্রজাপতি প্রদীপ্ত ডানায় ডানায় ফুলের আনন্দ চাই। জীবনপ্রবাহের সামগ্রিকতার সমসাময়িকতা চাই। ভাই- বোনেরা!
আমি প্রজাপতির ডানার অলংকারে নিজের পদ্য পয়ার উপহার দিতে চাই
আমি সাদা বকের ডানায় ঝলসে উঠা দুপুর চাই
আমি আমার ইন্দ্রিয়ের ইতিহাস ফেরত চাই
আমি আমার শোভা ফেরত চাই
সেই রাতার নখের আঁচড়ে, তার আঙ্গুলে আঙ্গুলে গন্তব্যের সাক্ষর । আমি দু’শ প্রজাতির মোরগ ও মুরগী আমার আঁতালে চাই। সেই রাতা চাই যাকে শিয়াল ডরায়। আমি শিন্নৎ বেগুন চাই। আমি চাই দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের আগের কৃষি চাই। ভাই ও বোনেরা
আমার রাতা ফেরত চাই, সাদা রোদের রাঙা রাতার চরণ পড়ে উঠানজুড়ে
খুঁদে কুড়ায় আমার রাতা করকরায়
আমার রাতা ফেরত চাই, আমার ছায়ায় আমি হাঁটি, তবু ছায়াচিত্ত বিরিক্ষির ডালদোলানী
হাওয়ার ভেতর, আমার জিরানিকাল জিরান ছাড়াই হয়েছে রোদলাল

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




