লক্ষীপুর গ্রামের ইকবাল সাহেবের মেয়ে আজকে গলায় ফাস নিয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগেই মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। শান্ত স্বভাবের মেয়েটাকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি । আপুর ছোট ভাই আমার বন্ধু। হাসপাতালে পৌছে দেখি আত্মীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে। পুলিশও আছে বেশ কিছু। লোকজন বলাবলি করছে, ময়না তদন্ত হবে কি হবে না, টাকা খাওয়ালে ময়না তদন্ত নাও হতে পারে। এদের টাকা আছে এরা সব পারে।
হাসপাতালের সামনে বেশ কিছু জটলা হতে শুরু করেছে। একে একে লাশ দেখতে যাচ্ছে। ফিরে এসে কেউ বলছে," কি ফর্সা মেয়েরে বাবা ! " । সংসারের সব কিছু তুচ্ছ করে চলে যাওয়া মানুষটার প্রতি এইটাই হয়ত তাদের একমাত্র মন্তব্য। কেউ আবার কোনো কথাই বলতে পারলো না। শুধু কয়েকজন দেখতেও গেলো না, স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। মায়েরা তাদের শিশুদের আড়াল করতে লাগলো । "রাতে ঘুমাতে পারবে না লাশ দেখলে " এই বলে কড়া চোখে তাকাতে লাগলো।
বাইরে যে মানুষ জমা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। দলে দলে মানুষ বিভিন্ন বিষয় আলোচলা করতে লাগলো। কেউ মোবাইল ফোনের দোষ দিল, কেউ হিন্দি সিনেমার দোষ দিতে লাগলো। কেউ আবার হাসাহাসি করতে লাগলো।
"বুঝলা মিয়া , ব্যাপারটা আন্দাজ করো। বিয়ার সপ্তাহ পার হইয়া গেল এখন তুই গলায় ফাস নিবি কেন? যা হইবার তো হইছেই।" কথাটা শেষ করেই চাপাভাবে হাসতে লাগলো। সাথে তার যোগ দিলো আরো কিছু লোক। তারাও মজা নিতে চায়।
মুরব্বিদের দলের মধ্যে চলছে অন্য আলোচনা। এর আগে কেউ এইরকম ঘটনা দেখেছে কিনা? তার নিজের মেয়ে এমন কিছু করতে গেলে সে কিছুতেই করতে দিত না। ভাবটা এমন যে তার মেয়ে ফাস নিলে তাকে বলে ফাস নিত। "আব্বা আজ ইশার ওয়াক্তে আমি ফাস নিবো,আমি চাই আপনি আর আমার ছোট মামা উপস্থিত থাকবেন।আম্মার থাকার দরকার নাই ,আম্মা বেশি কান্নাকাটি করে।"
রাত বাড়তেই মানুষ কমতে শুরু করলো । এক সময় হাসপাতালে পড়ে থাকলো একটা চটে বাধা লাশ আর শোকে পাথর হয়ে যাওয়া কিছু আপনজন। পরেরদিন সকালে ফাস নেয়া লাশের দাফন হবে কিনা এই নিয়ে বিতর্ক চলতে লাগলো। তবে খুব চাপাভাবে যেন কেউ শুনতে না পায়। এরা প্রভাবশালী মানুষ এদের কাজে বাধা দিলে পরে নিজের সমস্যা হতে পারে। তাই অনেক সাবধানে ফিসফিস করে কথা বলছে সবাই। লাশ দাফনের সময় ভেতর বাড়ী থেকে কান্নার শব্দ আসতে লাগলো। মেয়ের মা এখনো কাদছে না। কি পরিমান পাষন হলে মেয়ের মা না কেদে থাকতে পারে তাও আলোচনা হলো। লাশ দাফন হয়ে গেল একে একে সবাই চলে গেল। তখন মেয়ের মা শূন্য বাড়ীতে চিতকার করে কাদতে লাগলো।
দাফন শেষ বাসায় ফিরলে মা আফসোস করে বলল,"জামাই পছন্দ হয় নাই তো ছাইড়া দিত। পালাইয়া যাইতো। গলায় ফাস কেন নিলো? আহারে।" একই গ্রামের আরেক মেয়ে ঠিক এই কাজটাই করেছে। পালিয়ে গেছে। পরিনামে তার বাবা মা তার মুখ দেখেনি কখনো। গ্রাম ছেড়ে চলেও গেছে। লোকে বলতো "কি পরিমান পাপ করলে এই রকম মেয়ের জন্ম হয়? বাপের ইজ্জত ডুবাইয়া দিল।এমন মাইয়া মরাই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫৯