দেশের জাতীয় সংবাদপত্রগুলো এই আন্দোলনে ভাঙ্গচুরকে সমার্থন না দিলেও শ্রমিকদের দাবির মধ্যে যে যথার্থতা আছে তার স্বীকৃতি দেন। তারা পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার দাবিতে সম্পাদকীয় ছেপেছে। আবার প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়া পোশাক শ্রমিকের নতুন মজুরি কাঠামোর জন্য গঠিত মজুরি কমিশনের বৈঠকগুলোকে ফলাও করে প্রচার-প্রকাশ করেছে।
বলা হয়, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী। বিগত কয়েক সরকার আমলে সংবাদ মাধ্যম যে ভুমিকা রেখেছে তা বিশ্বে সবর্ত্র প্রশংসিত হয়েছে। যদিও প্রতি সরকারই সংবাদ মাধ্যমে অতিরঞ্জন নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছে। তারা চেয়েছে সংবাদ মাধ্যম তাদের কাছের পক্ষে থেকে "সাফল্যের গুনগান" তুলে ধরুক। এমনকি গত কয়েকদিন আগে একই কারণে বোধহয় সাংবাদিকদের কারফিউদের মধ্যে "উর্দিওয়ালা মনের ঝাল মিটিয়ে নিয়েছেন পিটিয়ে"!
আমার যেসব বন্ধু-বান্ধবরা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে তারাও নিজেদের একেকজন বিরাট ক্ষমতাবান মনে করেন। আসলে তাদের কিছু ক্ষমতাতো আছে বটে। ধরেন, মন্ত্রী-এমপি, রাজনীতিবিদ, গভর্নর, সচিব, আইজি সবার কাছেই তাদের ইজি এক্সেজ থাকে। ফলে তাদেরতো ক্ষমতা কিছু হয়ই।
কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশে সাংবাদিকদের জীবন হারাতে হয়েছে সাংবাদিকতার জন্য। এ দৃষ্টিতে এটা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। দেশে অনেক সাংবাদিক গডফাদারদের হাতে নিহত হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারেননি।
কিন্তু এই যে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাদের জীবন মান কেমন, এমন প্রশ্ন করেছিলাম এক বন্ধুজনের কাছে। যা জবাব মেলে তাতে আমি খুবই হতাশ হই।
বর্তমান তদারকি (তত্তাবধায়ক শব্দটা লেখা গেল না) সরকার গত কয়েক মাস ধরে দেশের দুর্নীতিবাজদের ধরতে কত কিই না করছেন। সংবাদ মাধ্যমই কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দুর্নীতিবাজদের তথ্য তুলে ধরেছে।
নাম না বলে একটা উদাহরণ দিই। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু সাংবাদিক ঢাকার বাইরে এক বিভাগীয় শহরে গিয়ে কয়েক শত কোটি (অর্ধ হাজার কোটি টাকারও বেশি) টাকার ব্যাংক জালিয়াতির তথ্য উদঘাটন করে সংবাদ পত্রে লিড নিউজ ছাপেন। আফসোস করে সে আমায় বলছিল, ওই শহরে গিয়ে নাকি তাকে মাত্র ৫০০ টাকার হোটেল খুজে বের করতে হয়েছে। কেননা তার টিএ-ডিএ দিয়ে এই ৫০০ টাকার হোটেলে থাকাই নাকি কষ্টকর। যে সাংবাদিক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হিসাব খোঁজে, যে সাংবাদিক প্রতিনিয়ত রাজা-উজির মারে, ব্যাংক লুটেরা-খেলাপিদের খুজে বেড়ায়, শত শত কোটি টাকার জালিয়াতি বের করে তার বেতন কত এই প্রশ্ন স্বভাবতই উঠে আসে।
আচ্ছা ব্লগেতো দেখি অনেক সাংবাদিক পোষ্ট লেখেন। সংবাদপত্রেও দুনিয়ার সমস্যা নিয়ে পোষ্ট ছাপান। নিজেদের জীবনের পোষ্ট কোথায় লেখেন? নিজেদের জীবন চলেতো? চালের কেজিতো নিদেন পক্ষে ৩০ টাকা।
ব্যারিষ্টার সাহেবতো সরকারের বড় স্পকম্যান। সাংবাদিকের নতুন ওয়েজবোর্ডের খবর কি? আর যারা পোষ্টালেন (সংবাদপত্রে উপসম্পাদকীয় লেখেন) যে ১৯৯৪ সালের পর পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো হয়নি, তাদের মজুরি বোর্ডের খবর কি?
সাংবাদিকদের প্রতি সম্মান রেখে আমি শিরোনামে অপুষ্টি না লিখে লিখেছি "ম্যালনিউটেশন"। যে বেতনভাতা তারা পান তাতে সাংবাদিকরাতো আসলেই অপুষ্টিতে ভুগছেন। এসব অপুষ্টিতে ভরা সাংবাদিকরা জাতির জন্য কি পুষ্টি বয়ে আনবেন?
যতটুকু জানি প্রথম আলো, স্টার, ইত্তেফাক, নিউএজ, যুগান্তর (আংশিক), সমকাল, জনকন্ঠ (আংশিক) ছাড়া (হয়ত আরো এক-দুইটা থাকতেও পারে) আর কোনো সংবাদপত্রে বর্তমান প্রচলিত ওয়েজ বোর্ডও বাস্তবায়ন হয়নি। কি সাংবাদিকতা আমরা আশা করতে পারি। ধান্ধাবাজ ছাড়া আর কোনো সাংবাদিকতো (প্রিন্ট মিডিয়ার) ভালো থাকার কথা নয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে অবশ্য কিছুটা বেতন-ভাতা বেশি। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়াতেতো মারাত্মক অবস্থা।
আচ্ছা সাংবাদিকরা নিজেদের কথা তুলবে কবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



