somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাইকে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা (জেনে নিন গৌতম বুদ্ধের জীবন ও কর্ম)

০৬ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ৬ই মে, ২০১২, শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ এইদিনে জন্মগ্রহণ* করেন, বুদ্ধত্ব লাভ** করেন, এবং দেহত্যাগ*** করে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই ত্রিস্মৃতি বিজরিত দিনকে বৌদ্ধরা শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করে থাকেন।

* আজ থেকে অনেক বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে কুমার গৌতমের জন্ম হয়। বুদ্ধ শব্দের অর্থ 'জ্ঞানী'। তাঁর আরেক নাম সিদ্ধার্থ। এছাড়া শাক্য বংশে জন্ম বলে তিনি শাক্যসিংহ নামেও পরিচিত। তাঁর পিতার নাম শুদ্ধোধন, মাতার নাম রাণী মহামায়া। রাজা শুদ্ধোধনের প্রধান রাণী মায়াদেবী।

তখন কপিলাবস্তু (বর্তমান ভারত) নগরে আষাড়ী পূর্ণিমা উৎসব চলছিল। আষাড়ী পূর্ণিমা শেষে রাণী মহামায়া ঘুমিয়ে পড়লেন। শেষ রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন চারদিক থেকে চার দিকপাল দেবতা এসে তাকে শয্যাসহ হিমালয়ের এক মনোরম স্থানে নিয়ে গেলেন। তাঁদের মহিষীরা এসে মায়াদেবীকে মানস সরোবরে স্নান করালেন এবং দিব্যবস্ত্র পরিধান করালেন।

অদূরে রৌপ্যময় এক পর্বত, তার ওপরে সোনার প্রাসাদ। সেখানে রাণীকে তাঁরা সোনার পালঙ্কে পূর্বদিকে মাথা রেখে শুইয়ে দিলেন। তারপর পাশের স্বর্ণ পর্বত থেকে এক সাদা হাতি নেমে এলো। সেই সাদা হাতির শুঁড়ে ধরা ছিল একটি শ্বেতপদ্ম। হাতি প্রাসাদে এসে রাণীর শয্যা তিনবার প্রদক্ষিণ করে শ্বেতপদ্মটি রাণীর জঠরের দক্ষিণ দিকে প্রবেশ করিয়ে দিল। রাণীর দেহমনে এক অপূর্ব শিহরণ খেলে গেল।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে রাণী তাঁর স্বপ্নের কথা রাজাকে জানালেন। রাজা সাথে সাথে জ্যোতিষীদের ডেকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে বললেন। তাঁরা বললেন, মহারাজ আনন্দ করুন, মহারাণীর পুত্রসন্তান হবে। আপনার এই পুত্র ভবিষ্যতে মহাতেজস্বী ও যশস্বী মহাপুরুষ হবেন। শ্বেতহস্তী স্বপ্নে শান্ত, গম্ভীর, জগৎ দুর্লভ, জীবের দুঃখদূরকারী, মহাজ্ঞানী পুত্র লাভ হবে।

ক্রমে দিন যায়। এলো শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা। এ সময় রাণীর পিতৃগৃহে যাওয়ার ইচ্ছে হলো। রাজা সব ব্যবস্থা করলেন। কপিলাবস্তু থেকে দেবদহ পর্যন্ত পথ সুসজ্জিত করা হলো। রাণী মহামায়া সহচরীসহ সোনার পালকিতে চড়ে পিত্রালয়ে চললেন। রাণীর নির্দেশে দুই নগরীর মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে (বর্তমান নেপাল) শালগাছের এক মনোরম স্থানে পালকি থামলো। শালবনের শাখায় শাখায় ফুল, পাখিদের কাকলী। রাণী একটু বিশ্রাম নিতে শালতরু তলে দাঁড়িয়ে তার একটি ডাল ধরলেন। অমনি তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হলো। সহচরীরা চারিদিক কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। সেই লুম্বিনী কাননে শুভ বৈশাখী পূণিমায় জগতে ভাবী বুদ্ধ সিদ্ধার্থ গৌতম জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে জন্মের পরপর তিনি সাত পা হেঁটে যান এবং সাত পায়ে সাতটি পদ্মফুল ফোঁটে। এরপর তিনি বলেন, "আমি অগ্র, আমি শ্রেষ্ঠ, এই আমার শেষ জন্ম"। সকল জীবের প্রতি তাঁর মৈত্রী ও করুণা অপরিমেয় বলে তাকে মহাকারুণিক বলা হয়।

** কালে গৌতম পরিণত হন। মানুষের জীবনের বার্ধক্য, রোগ, শোক, মৃত্যু তাকে ভাবিয়ে তুলে। তিনি এইসব দুঃখ এবং দুঃখ থেকে মুক্তির পথ ভাবতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন সংসারের বন্ধন ছিঁড়তে না পারলে মুক্তি অসম্ভব। মনস্থির করেন গৃহত্যাগের। গৌতম ঊনত্রিশ বছর বয়সে রাজ্য, বিপুল অর্থবিত্ত, পিতামাতা, স্ত্রী-পুত্র সব ছেড়ে গৃহত্যাগ করেন।

নৈরণ্জনা নদীর তীরে দীর্ঘ ৬ বছর কঠোর সাধনা করলেন। শরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেল। হাঁটতে গেলে পড়ে যান, বসলে উঠতে পারেন না। তবুও দুঃখের শেষ কোথায় জানা হলো না। তখন তিনি বুঝলেন কঠোর সাধনা বৃথা। তাই তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিলেন। একবোরে কঠোর সাধনা নয় আবার বিলাসী জীবনও নয়। বৈশাখী পূর্ণিমার দিন নতুন উদ্যমে ধ্যান শুরু করলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন হয় ধ্যানে সিদ্ধিলাভ, নয় মৃত্যু। এছাড়া আর কিছু চান না তিনি।

বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে। অশ্বথ বৃক্ষের তলে বসে তিনি প্রথম মারকে (পড়ুন শয়তান) জয় করলেন। ধ্যানে বসে তিনি প্রথম প্রহরে জাতিস্মর জ্ঞান বা পূর্বজন্মের বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। রাতের দিব্য প্রহরে তিনি দিব্যচক্ষু সম্পন্ন হলেন। ফলে তিনি যে কোনো সময় যে কোনো স্থান দেখতে পারবেন। তৃতীয় প্রহরে জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারলেন। দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ নিরোধ এবং দুঃখ নিরোধের উপায় তিনি খুঁজে পেলেন। এরই নাম 'চার আর্যসত্য'। তারপর তিনি জগতের মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য 'শান্তির বানী' প্রচার করবেন এই সংকল্প গ্রহণ করলেন। তখন তাঁর বয়স ৩৫ বছর।

*** কপিলাবস্তু থেকে শ্রাবস্তী, বৈশালী, চুনার, কৌশাম্বী, কনৌজ, মথুরা, আলবী (বর্তমান নেপাল, ভারত, ভূটান, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, তামিলনাড়ু) ইত্যাদি বহু জায়গায় তিনি ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে তিনি রাজগৃহ (বর্তমান ভারত) থেকে কুশীনগর গমন করেন। কুশীনগরের কাছে পাবা নগরে উপস্থিত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মল্লদের শালবনে শালগাছের নিচে শয়ন করেন। তখন আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আনন্দ(বুদ্ধের সেবক) সহ অন্যান্য ভিক্ষু(বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু) দের ডাকলেন তিনি। প্রিয় শিষ্য আনন্দ কাছে এলেন। বুদ্ধ তখন তাঁর শেষ বাণী বললেন, "হে ভিক্ষুগণ! উৎপন্ন হওয়া জীবমাত্রই ক্ষয় অবশ্যম্ভাবী। তোমরা সাবধান হয়ে অপ্রমাদের সাথে নিজ নিজ কাজ করবে।" তথাগতের এই শেষ বাণী।
তারপর আস্তে আস্তে বুদ্ধ গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। রাতের শেষ প্রহরে ধ্যানের ৪র্থ স্তরে পৌঁছে জগতের আলো মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।

বস্তুত বৌদ্ধ ধর্ম কর্মবাদী ধর্ম। গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধদের 'শাস্তা' বা শিক্ষক/পথপ্রদর্শক, সৃষ্টিকর্তা বা প্রভু নন। আমি তোমাকে মুক্ত করব, বুদ্ধ একথা বলেন নি। তিনি বলেছেন, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল এবং খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্থ, নিরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞানী-মূর্খ ইত্যাদি ফল ভোগ করে। মানুষ কর্মের অধীন। বিশ্বের অপরাপর ধর্মগুলোতেও ভালো কাজের কথা বলা হয়েছে। তাই আসুন আমরা সকল পাপকাজ থেকে বিরত থাকি যাতে দেশ, জাতি তথা সকল প্রাণীর মঙ্গল হয়। সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা।

"সবেব সত্তা সুখীতা ভবন্তু"
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১২ রাত ২:০৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×