কলেজ থেকে পিকনিকে যাচ্ছি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নুহাশ পল্লীতে। কলেজের বন্ধুদের সাথে এই মনে হয় শেষ ঘুরতে যাওয়া। এরপরে আর কোনদিন এইভাবে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা মজা করা হবেনা। নুহাশ পল্লীতে পৌছাতে এখনো প্রায় ২ ঘণ্টা মত সময় লাগবে। বন্ধুরা সবাই বাসের পেছনের দিকে হইহুল্লোড় করছে। আমি বাসের সামনে বামের এক সিটে বসে আছি। ডানের দিকের অন্য দুই সিটে আমাদের ক্লাস টিচার এবং ম্যানেজমেন্ট টিচার বসে গল্প করছেন। পিকনিকে যাচ্ছি কিন্তু তেমন কোনো আনন্দ পাচ্ছিনা। আজকে হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে খুব মনে পড়ছে। স্যারের সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের কারনে স্যার আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছেন। রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি ঘুমে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে। একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক। বন্ধুরা পেছনে আনন্দ করছে করুক।
আমি এখন নুহাশ পল্লীর বিশাল বড় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিক নিশ্চুপ, এখানে অনেক মানুষের আনাগোনা থাকার কথা ছিল কিন্তু কেউ নেই। আমার কলেজের কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা। সবাই কোথায় গেল ঠিক বুঝতে পারছিনা। আমি গেটে ২ বার বাড়ি দিলাম। কিছুক্ষণ পর বড় গেটের মাঝ থেকে ছোট একটি দরজা খুলে গেল। আমি ছোট দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম দেখলাম, হলুদ পাঞ্জাবী পরা একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে । পা খালি, চুল আবার জেল দিয়ে স্পাইক করা। আমি বললাম, হিমু ভাইয়া না?
লোকটি বলল, হ্যা। তুমিই তো শুভ্র?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
হিমু ভাই বলল, আমার অনুমান শক্তি ভালো তাই অনুমান করে বলেছি। ভেতরে এসো স্যার তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আমি বললাম, স্যার! কোন স্যার?
হিমু ভাই বলল, হুমায়ূন আহমেদ স্যার।
আমি বললাম, স্যার তো মারা গেছেন এখানে কিভাবে স্যার আসবেন।
হিমু ভাই তার সেই বিখ্যাত হাসি হাসলেন এবং হাঁটতে শুরু করলেন। এই হাসি সম্পর্কে আমি অনেকবার স্যারের বইয়ে পড়েছি। আমি হিমু ভাইয়ের পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন আহমেদ স্যার খোলা মাঠে রোদের ভেতরে খালি গাঁয়ে বসে, চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছেন। আমি স্যারকে সালাম দিলাম কিন্তু স্যার কোনো জবাব দিলেন না। চোখ বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় থাকলেন। হিমু ভাই পাঞ্জাবী খুলে স্যারের সাথে ধ্যান করতে বসে পড়লেন। আমি আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষণ পর আমিও শার্ট খুলে তাদের সাথে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করা শুরু করলাম। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছি কিন্তু স্যার এবং হিমু ভাইয়ের কোনো শাঁড়া শব্দ পাচ্ছিনা। হঠাৎ স্যার বললেন, কি অবস্থা শুভ্র তুমি কেমন আছো? আমি চোখ খুললাম দেখলাম স্যারের মুখ হাসি হাসি। আমি বললাম, জি স্যার আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
হুমায়ূন স্যার বললেন, হ্যা আমিও ভালোই আছি। সকালে কিছু খেয়েছ?
আমি বললাম, না স্যার এখনো কিছু খাওয়া হয়নি।
হুমায়ূন স্যার হিমু ভাইকে বললেন কাজের ছেলেটা যেন এখানে খাবার দিয়ে যায়। হিমু ভাই খাবারের কথা বলতে চলে গেলেন। খাবার আগে থেকেই রেডি ছিল। ২ মিনিট না হতেই খাবার চলে আসলো। স্যার, হিমু ভাই এবং আমি মাঠের মাঝে খেতে বসেছি। খাবার আইটেম হচ্ছে খাসির মাংস, পরটা আর ঝোল ওয়ালা মিষ্টি। আমি একটুকরো মাংসের সাথে একটু পরটা মুখে দিলাম, তৃপ্তিতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এমন সুস্বাদু খাসির মাংস রান্না আমি এর আগে কখনো খাইনি। হুমায়ূন স্যার মাংস মুখে দিতে দিতে বললেন, শুভ্র গান টান পারো নাকি কিছু?
আমি বললাম, জি স্যার একটু আধটু পারি।
হুমায়ূন স্যার বললেন, ধরো তাহলে একটা গান।
আমি গান গাওয়া শুরু করলাম……
একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরণ কেশ
স্যার আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আরে এটা না। হিন্দি একটা গান আছে না মুন্নি বাদনাম হুয়ি ঐটা গাও।
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলাম স্যার স্যারের গান শুনবেন না এটা ঠিক আছে। আজীবন স্যারের বইয়ে পড়লাম স্যারের রবীন্দ্র সংগীত পছন্দ। আর আজকে স্যার হিন্দি গান গাইতে বলছেন তাও আবার মুন্নি বাদনাম হুয়ি। ব্যাপার টা ঠিক হজম করতে পারছিনা।
হিমু ভাই বলল, আরে এত সময় নিচ্ছ কেন? শুরু করে দাও এটা আমারও ফেভারিট গান।
আমি আবার গান গাওয়া শুরু করলাম……
মুন্নি বাদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে
ম্যাই ঝান্ডু বাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে
মাঝে মাঝে হিমু ভাই আহা উহু শব্দ করছে। গান শেষে হিমু ভাই বলল, স্যার দেখছেন কারবার গানের কি ভাষা! মুন্নি বাদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে।
হুমায়ূন স্যার বললেন, হুম। গানের লেখক আর গায়িকাকে নোবেল টাইপের কোনো পুরস্কার দেয়া দরকার। আমার হাতে থাকলে আমি একটা নোবেল পুরস্কার দিয়ে দিতাম।
হিমু ভাই বলল, বেবিডল এইটা পারো নাকি? পারলে শুরু কর।
আমি বেবিডল গাওয়া শুরু করলাম……
হুমায়ূন স্যার হাত ধুতে ধুতে বললেন, শুভ্র তুমি কি সাতার পারো?
আমি বললাম, না স্যার পারিনা। অনেক চেষ্টা করেও শিখতে পারিনি।
হুমায়ূন স্যার বললেন, সমস্যা নেই এখানে টিউব রয়েছে। তুমি টিউবে করে লীলাবতীতে ভেসে বেড়াতে পারবে। হিমু তুমি টিউবের ব্যবস্থা কর। আমি আর শুভ্র দিঘির পাড়ে গেলাম।
হিমু ভাই টিউবের সাথে লুঙ্গিও নিয়ে এসেছে। আমি বললাম, স্যার আমিতো লুঙ্গি পরতে পারিনা শুধু খুলে যায়। স্যার কিছুক্ষণ ভাবলেন তারপর নিজের হাতে আমাকে লুঙ্গি পরিয়ে দিলেন। লুঙ্গির গিঁটের মাঝে ইটের টুকরোও দিয়ে দিলেন আর বললেন, ইটের টুকরোর কারনে তোমার লুঙ্গি খুলবে না। এবার টিউব নিয়ে পানিতে নেমে পড়। হিমু তোমার সাথেই থাকবে। পানিতে নামতে যাবো এমন সময় দিঘির অন্যপাশ থেকে পানিতে কে যেন লাফ দিলো। যিনি লাফ দিয়েছেন তিনি সাঁতরে আমাদের দিকেই আসছেন। কাছে আসলে বুঝতে পারলাম যিনি পানিতে লাফ দিয়েছেন তিনি হচ্ছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। হুমায়ূন স্যার বললেন, আরে ফারুক তুমি কখন এলে?
ফারুক ভাই বলল, স্যার আপনি যখন লুঙ্গিতে গিট বাঁধছিলেন তখন এসেছি। আপনাকে ভোড়কে দেবার জন্য দেখা না করে দিঘির অন্যপাড় থেকে লাফ দিয়েছি। স্যার আপনি কি একটু ভোড়কিয়েছেন?
হুমায়ূন স্যার বললেন, হ্যা কিছুটা অবাক হয়েছি।
ফারুক ভাই বলল, এই ছেলেটা কে? ঠিক চিনতে পারলাম না।
হুমায়ূন স্যার বললেন, এর নাম শুভ্র। এ আজকে আমার গেস্ট।
ফারুক ভাই বলল, বলেন কি স্যার আপনার গেস্ট মানে আমারও গেস্ট। এই শুভ্র পানিতে নেমে আসো দাঁড়িয়ে আছো কেন। এসো এসো।
ফারুক ভাই আমার হাত ধরে পানিতে নামিয়ে নিলেন। হিমু ভাইও লুঙ্গি পরে পানিতে নেমে পড়লো। হিমু ভাই ও ফারুক ভাই আমাকে ধরে লীলাবতীর মাঝ খানে নিয়ে গেলেন। যদিও আমার সাথে টিউব ছিল এরপররেও ভয় লাগছে। স্যার নামলেন না তিনি পাড়ে বসে সিগারেট খাচ্ছেন। ফারুক ভাই হিমু ভাইকে বললেন, হিমু তুমি কি লুঙ্গি ফুলিয়ে পানিতে ভেসে থাকতে পারো?
হিমু ভাই বলল, না পারিনা।
ফারুক ভাই বললেন, থামো তোমাকে দেখাচ্ছি। তার আগে একটা লুঙ্গি দরকার। স্যারকে ভোড়কে দেবার জন্য প্যান্ট পরেই পানিতে নেমেছি। ঐতো স্যারের পাশে একটা লুঙ্গি দেখতে পাচ্ছি থামো আমি লুঙ্গি নিয়ে আসি।
ফারুক ভাই লুঙ্গি নিতে পানি থেকে উঠলেন। উঠার সময় তিনি আছাড় খেলেন। নাটকে আমরা যেমন দেখি ফারুক ভাই তেমনি মাটিতে লাথি দিয়ে গালি দিলেন এবং থুথু ফেললেন। আমি আর হিমু ভাই দিঘির পাড়ে চলে এসেছি। ফারুক ভাই লুঙ্গি পরে আবার পানিতে লাফ দিলেন। এরপরে লুঙ্গির ভেতরে বাতাস দিয়ে লুঙ্গিকে বেলুনের মত ফুলিয়ে ফেললেন। তারপর ছোট বাচ্চাদের মত পানিতে ভাসতে শুরু করলেন। ফারুক ভাইয়ের দেখাদেখি হিমু ভাইও লুঙ্গি ফুলিয়ে পানিতে ভেসে বেরালো। প্রায় ১ ঘণ্টা পানিতে দাপাদাপির পর আমরা পানি থেকে উপরে উঠে আসলাম। আমাদের দেখে হুমায়ূন স্যার বললেন, হিমু কিছু ভালো লাগছেনা। কিরা যায় বলতো?
হিমু ভাই বলল, স্যার চলেন আমরা পাশের বন থেকে ঘুরে আসি। প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটানো যাবে।
হুমায়ূন স্যার বললেন, হ্যা চলো যাওয়া যাক। তার আগে তোমরা কাপড় বদলিয়ে নাও।
নুহাশ পল্লীর পেছনেই বন রয়েছে। বনে বিভিন্ন ধরণের গাছপালার সাথে মাঝে মাঝে বানর ও বন মোরগ দেখতে পাওয়া যায়। হুমায়ূন স্যার কাউবয়দের টুপি পরেছেন। হিমু ভাই আবার চুল জেল দিয়ে স্পাইক করেছে। অবশ্য এবার পরনে ফুল প্যান্টের বদলে থ্রি কুয়াটার প্যান্ট ও গোল গলা গেঞ্জি। এই থ্রি কুয়াটার প্যান্ট ও গোল গলা গেঞ্জি হুমায়ূন স্যারের বউ শাওন ম্যাডাম কিনে দিয়েছেন। আমরা বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ একটা মেয়ে ও ছেলের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। ফারুক ভাই হুমায়ূন স্যারকে বললেন, স্যার শুনছেন কিছু? প্রেমিক যুগল। জঙ্গলের মাঝে পিরিত করছে মনে হয়।
হুমায়ূন স্যার বললেন, তাই তো মনে হচ্ছে।
ফারুক ভাই বলল, স্যার চলেন তাদের ভয় দেখায়। অনেকদিন কাউকে ভয় দেখাই না। জীবনটা লবণ ছাড়া পান্তা ভাত হয়ে গেল।
হুমায়ূন স্যার বললেন, হিমু কিভাবে ওদের ভয় দেখানো যায় এর ব্যবস্থা তুমি কর।
স্যারের কথা শুনে হিমু ভাইকে দেখে খুব আনন্দিত মনে হল। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্যারকে বললেন, স্যার আপনি গাছের আড়ালে থাকেন। আপনি গেলে তারা আপনাকে চিনে ফেলবে। ঠিকমত ভয় দেখানো যাবেনা। আমি, ফারুক ভাই আর শুভ্র মিলে তাদের ভয় দেখিয়ে আসি।
হুমায়ূন স্যার একটি গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেন। হিমু ভাইয়ের নেতৃতে আমি আর ফারুক ভাই প্রেমিক যুগলকে ভয় দেখাতে চললাম। সামনে একটি বড় গাছের নিচে তারা বসে আছে। প্রেমিকা প্রেমিকের ঘাড়ে মাথা রেখে খিল খিল করে হাসছে। আমরা তিনজন এক সাথে তাদের সামনে হাজির হলাম। ফারুক ভাই বাংলা ছিনেমার ভিলেনের মত অট্ট হাসি দিলেন। মুহাহাহা...... তার হাসি শুনে যে কারো পিলে চমকিয়ে যাবে। ছেলেমেয়ে দুজনেই ভয় পেল। মেয়েটি তোতলাতে তোতলাতে ফারুক ভাইকে বলল, আঙ্কেল আপনারা কারা? কি চান এখানে?
ফারুক ভাই হুংকার দিয়ে বললেন, কাকে আঙ্কেল বলছিস? তুই আঙ্কেল তোর বাপ আঙ্কেল তোর চোদ্দ গুষ্টি আঙ্কেল। থাবড়ায়ে তোমার দাঁত ফেলে দিবো শয়তান মেয়ে কোথাকার। আমাকে দেখে তোমার আঙ্কেল মনে হয়।
মেয়েটি বলল, না না আপনাকে আঙ্কেল মনে হয়না। আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করেন।
ছেলেটি হিমুর ভাইয়ের দিকে চোখ গরম করে বলল, এই মিয়া আপনারা কারা এখানে কি চান? জানেন আমি কে, আমার বাবা কে?
হিমু ভাই বলল, আসলে ব্রাদার আপনার কাছে কিছুই চাইনা। শুধু আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই। দয়া করে আমার ব্যাগের দিকে একবার তাকাবেন?
ছেলেটি হিমু ভাইয়ের সাথে থাকা ব্যাগটির দিকে তাকাল দেখল পিস্তলের মত কিছু একটা ব্যাগের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। ছেলেটি এবার ভয় পেয়েছে। ভদ্র ভাবে জিজ্ঞাসা করল, ব্রাদার আপনারা কি চান? আমাদের কাছে যা টাকা আছে নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের কোন ক্ষতি করেন না।
হিমু ভাই তার সেই বিখ্যাত হাসি হাসলেন কিন্তু কিছু বললেন না। ছেলে এবং মেয়েটি একে অপরের দিকে তাকালো। তারা ঠিক বুঝতে পারছেনা এই হাসির রহস্য কি। হিমু ভাই বলল, বনের ভেতর কি করতে এসেছেন?
ছেলেটি বলল, তেমন কিছুনা এমনি ঘুরতে এসেছিলাম। আর আসবো না কোনদিন।
ফারুক ভাই বলল, দাড়া তোর ঘুরতে আসা আমি তোর পাছার মধ্যে দিয়ে বের করছি। এই শুভ্র ঐ গাছ থেকে একটা লতা নিয়ে আসো তো, তারপরে লতা দিয়ে এই ছোড়াকে বাধ।
আমি ফারুক ভাইয়ের কথা মত পাশের একটি গাছ থেকে লতা ছিঁড়ে নিয়ে এসে ছেলেটিকে বাঁধতে গেলাম তখনি মেয়েটি ফারুক ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরল। আর বলল, তাদের এবারের মত ছেড়ে দিতে আর কোনদিন তারা এখানে আসবে না। হুমায়ূন স্যার গাছের আড়াল থেকে সব দেখছিলেন। মেয়েটির পা জড়িয়ে ধরার বিষয়টি দেখে তিনি আর থাকতে পারলেন না। গাছের আড়াল থেকে এসে মেয়েটিকে বললেন, তোমরা ভয় পেয়না। এরা তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না। এরা তোমাদের সাথে মজা করছে। এই তোমরা সবাই এদের সরি বল। স্যারের কথা মত আমরা সবাই সরি বললাম। মেয়েটির মুখে এবার হাসি এসেছে। সে ছেলেটির হাত ধরল। আগে খেয়াল করিনি মেয়েটি দেখতে হিন্দি ছিনেমার একটা নায়িকার মত দেখতে। নায়িকার মতই টানাটানা চোখ ও হাসি। হুমায়ূন স্যার বললেন, দুপুর তো প্রায় হয়ে গেল। তোমরা আজকে আমার সাথে দুপুরের খাবার খাবে।
মেয়েটি বলল, আঙ্কেল আপনাকে দেখে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আপনি বিখ্যাত কথা সাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদ না?
হুমায়ূন স্যার বললেন, হুম আমিই হুমায়ূন আহমেদ।
মেয়েটি আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। এরপর স্যারের সাথে সেলফি তোলার জন্য ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করল।
বৃষ্টি বিলাসের বারান্দায় আমরা সবাই খেতে বসেছি। খাবার পরিবেশন করছে নুহাশ পল্লীর বাবুরচি মনা মিয়া। মনা মিয়া আজকে দুপুরের খাবারে একেবারে বিরাট আয়োজন করেছে। রাজ হাঁসের মাংস ভুনা, শিং মাছের ঝোল, খাসির রেজালা, চর্বি দিয়ে ছোলার ডাল, বেগুন ভাজি আর পোলাও। প্রত্যেকটা খাবার আইটেমই অতি সুস্বাদু হয়েছে। আমি খাসির রেজালা নিতে নিতে বললাম, মনা ভাই আপনার হাতে জাদু আছে রান্না খুব ভালো হইছে।
মনা বলল, জে সব আপনাগো দোআ।
আমি বললাম, হিমু ভাই আপনার কাছে পিস্তল আসলো কোথা থেকে?
হিমু ভাই বলল, ওটা পিস্তল না। পিস্তলের মত লাইটার। রুপা আমাকে উপহার দিয়েছিল।
আমি বললাম, স্যার আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে দেখা করার। আজকে সেই ইচ্ছা পুরন হল। আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার বললেন, শুভ্র আমার কাছে এসো আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। আমি স্যারের কাছে গেলাম স্যার আমাকে খাইয়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছেন। আমি খাবার মুখে নিবো.........
এই শুভ্র...... ওঠ। আমরা নুহাশ পল্লীতে চলে এসেছি।
আমি চোখ খুললাম দেখলাম আমার বন্ধু তোরিক আমাকে ডাকছে। বাস নুহাশ পল্লীতে পৌঁছে গেছে। বাস থেকে সবাই নামছে। তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নের মাঝেই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সাথে আমার দেখা হয়েছে। স্যার আমাকে খায়য়ে দিতে যাচ্ছিলেন তখন তোরিক আমাকে ডাকায় আমার ঘুম ভেঙেছে। আমি আমার ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নামলাম। নুহাশ পল্লীতে ঢুকলাম। কি সুন্দর দেখতে নুহাশ পল্লী। স্যার নিজের মনের মত করে নুহাশ পল্লীকে সাজিয়েছেন। নুহাশ পল্লীর মাঠে একটা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে কলেজের অনুষ্ঠান করার জন্য। আমি নুহাশ পল্লীর কেয়ারটেকার কে জিজ্ঞাসা করলাম স্যারের কবর কোনদিকে। কেয়ারটেকার আমাকে দেখিয়ে দিল। সবাই মঞ্চের দিকে চলে গেল আর আমি স্যারের কবরের দিকে চললাম স্যারের কবর জিয়ারত করতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৬