somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের নিরাপত্তা ও ঝুঁকি যখন বিবেচিত কেবল আন্তর্জাতিক চাপে

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ত্রাসী হামলা, জঙ্গি তৎপরতা--ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের উৎকণ্ঠা, আশঙ্কা অমূলক অযৌক্তিক নয়। ককটেল, হাতে বানানো বোমা ছুরি-চাপাতির মত অস্ত্র আর মগজধোলাইকৃত মূঢ় আক্রমণকারীতে সাজানো বিচ্ছিন্ন হানায় ধর্ম ভিত্তিক চরমপন্থি দলগুলোর শক্তিমত্তার যে ধারণা পাওয়া যায়, তাও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের যথেষ্ট মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে এবং সমূহ অস্থিরতারও জন্ম দিচ্ছে।

এসংক্রান্ত অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হচ্ছে যখন দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সমূহ এসব জঙ্গি হামলার পেছনেও রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ পাচ্ছেন, যখন সাধারণ জনগণও সেই বায়বীয় দাবী গায়েবী আখ্যা দিয়ে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারছে না। দুর্ভেদ্য ইউরোপ, নিশ্ছিদ্র ইউএসের ভেতর চরমপন্থি হামলা সহ দুনিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ চাপ অনুভব করছে। এই চাপ বহির্বিশ্বের চাপ; এই চাপ অন্তর্দেশীয় চাপ নয়। নচেৎ এমন উচিৎ নজরদারি আমাদের অদেখাই থেকে যেত।

এদিকে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র সমীক্ষা বলছে এক বছরে (২০১২) সড়ক দুর্ঘটনায় এদেশে প্রাণ হারিয়েছে একুশ হাজার নারীপুরুষ ও শিশু। মন্ত্রী মহাশয় এই সংখ্যা মানতে নারাজ; কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য- উপাত্তের ভিত্তিতে নয়, স্রেফ এই কারণে যে, তার মতে এই সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম বেশি! প্রতিদিন ষাট-জন; প্রতি ঘণ্টায় দুজনেরও বেশি মানুষ! অবিশ্বাস্যই বটে। কিন্তু ২০১৪ সালের উপর, যাত্রী কল্যান সমিতির আরেকটি সমীক্ষা, যা স্রেফ আট দশটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তিতে করা, বলছে- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রতি ঘন্টায় ১ জন। তাহলে ধারণা করাই যায় আসল সংখ্যাটি এর চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া, দুর্ঘটনায় নিহতের ত্রিশ ভাগেরও বেশি হচ্ছে পথচারী ( এটা পঞ্চাশ ভাগ, যখন পথচারীর সাথে মোটরসাইকেল ও সাইকেল আরোহীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়)। সাধারণত, পত্রপত্রিকার নজরে আসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা, মুখোমুখি সংঘর্ষের খবর। বেশীরভাগ বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনার সংবাদ লোক-মনোযোগের অন্তরালেই থেকে যায়।

যানজট, গরম, অযোগ্যতার কারণে বেপরোয়া চালকরা পরিণত হয়েছে সাক্ষাৎ খুনিতে (যা তাদের বাস-ট্রাক চালনা দেখলে বোধগম্য হয়) এবং কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপে অকর্মণ্যতা, পরিকল্পনায় অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং সড়ক-অব্যবস্থাপনার কারণে হতভাগ্য, পথিকরা এখন হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। এক দল মারতে মরিয়া, আরেকদল মরিয়া মরতে। আর দুপক্ষের অঘোষিত এই সাংঘাতিক চুক্তিতে কর্তৃপক্ষের মতামত জানা যায় না। সরাসরি দায়ী হওয়া সত্বেও তারা অজ্ঞান, উদাসীন, অন্ধ, বিশৃঙ্খল, নির্লিপ্ত।

এই সড়ক দুর্ঘটনা ও মর্মান্তিক মৃত্যু বহির্বিশ্বের সমস্যা নয়। এটা দেশের ভেতরের দুর্যোগ। প্রধানতম দুর্যোগ। যেহেতু এই দুর্যোগ নিয়ে বহির্বিশ্বের মাথা ব্যথা নাই, তাই আমাদেরও দুশ্চিন্তা নাই। দলে দলে ম'রেও আমরা নিশ্চিন্ত। আমাদের দুশ্চিন্তা যা আছে তা কেবল সন্ত্রাসী হামলা, জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে। ফলত, স্বাভাবিকভাবেই, সড়কপথের প্রাণহানি দেশ ও সরকারের যোগ্যতার ভিতের জন্য হুমকি স্বরূপ নয়। এবং এ থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখলেও কর্তৃপক্ষ কোনও চাপ অনুভব করেন না। এই বিষয়ক উদাসীনতা দেশ ও মানুষের, সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্তের সাধ্যের মাঝে বর্তমান এবং অনাক্রান্ত।

দেশের ভেতর সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে সরকারী উদ্যোগ, কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানাই। প্রাণ রক্ষা কিংবা নিরাপত্তা- এসংক্রান্ত সকল প্রচেষ্টাই শুভ, তা সেটা নিজের জন্য হোক আর অপরের, অভ্যন্তরের হোক আর বাইরের। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার যখন এমন অস্বাভাবিক, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সহ সকলের আশ্চর্যরকম ঔদাসীন্য অগ্রহণযোগ্য। এই উদ্বেগহীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করে গণমনের স্বাভাবিক চেতনতাকে; জনগণের নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×