ওরা গরিব আর বেশির ভাগ ই এতিম, মাদ্রাসায় ২ বেলা কোন রকমে খেয়ে পরে কোরান শেখে। তাদের পরিবার একটা হাফিজিয়া মাদ্রাসা বা এতীমখানায় ওদেরকে দিয়াই নিশ্চিন্ত থাকে যাক, দু বেলা খেয়ে দুই আয়াত কোরান শিখে দীনের জন্য কিছু করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওদের কি দোষ ছিলো ? আপনারা তাদেরকে অবরোধ করতে দিলেন, ওদেরকে মিটিং করতে দিলেন এবং রাতের আঁধারে নির্বিচারে জানোয়ারের মত মারলেন – হূম, ওরা মরলে কার কি আসে যায়, গরিব বাপের গরিব পোলা, মোল্লাগিরি করে বেহেস্তে চলে গেল – আমিন।
ওরা তো আর দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রাজীবের ভাগ্য নিয়ে জম্মায় নি, যে মাগীবাজী করে খুন হয় আর শহীদ হয়ে যায়। ঝড়ে বক মরে, ফকিরা কয় কেরামতি – আপনার আদ্র হৃদয় সহ্য করতে পারলো না ছুটে গেলেন নাস্তিক রাজীবের বাসায়, সান্ত্বনা দিয়ে এলেন মহান মুক্তিযোদ্ধা (!) রাজীবের পরিবারকে।
৬ ই মে শেষরাতে যা সংগঠিত হয়, তা একটি স্বাধীন দেশের ইতিহাসে ভয়ংকর কালো রাত্রীর ছেয়েও বেশি কিছু। নিরস্ত্র মানুষের উপর রাতের অন্ধকারে বৈদ্যুতিক প্রবাহ বন্ধ করে, মিডিয়া ব্ল্যাকাউটের মাধ্যমে ঠান্ডা মাথার গণহত্যা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, সব জনগণের এবং সবার – শাহবাগীদের ও, হেফাজতিদের ও। শাহবাগীদের হেফাজতের জন্য আপনার দলীয় ও প্রশাসন যেমন তৎপর ছিল, হেফাজতিদের জন্য নয়। আপনি বিজ্ঞজন, আপনি সবই জানেন, আপনার গোয়েন্দাবাহিনী যদি আগেই গণ্ডগোলের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে তবে কেন মতিঝিলের মত দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়াগায় আপনারা হেফাজতিদেরকে সমাবেশ করতে দিলেন ?
তা না হয় দিলেন, গণ্ডগোলের সূত্রপাত যেখানে – আপনাদের অফিসের সামনে দিয়ে আসার সময় কেন আপনার দলীয় কর্মীরা হেফাজতিদেরকে আক্রমণ করলো, আপনার পুলিশ বাহিনী কেন আপনার দলীয় কর্মীদেরকে থামালো না ! আর না থামাক, এটা ওরা করবে না, তাহলে হেফাজতিদেরকে কেন থামাল না ?
টিভিতে দেখলাম হেফাজতিরা খালি ইটের কনা ছুঁড়ে মেরেছে, এই সামান্য ইটের কনা থেকে বাঁচিয়ে আপনার পুলিশ বাহিনী নিজেকে কি রক্ষা করতে পারতো না? অল্প পুলিশ দিয়ে না পারলে সেখানে কেন তখন অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ পাঠানো হলো না?
সকাল ১১ টা থেকে শুরু হওয়া গণ্ডগোল যখন বেড়ে যাচ্ছিল, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছিল, তখন ঐসব বাঁচাতে আপনার পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি কেন? রাত ২.৩০ পর কেন মতিঝিলের বৈদ্যুতিক সাপ্লাই বন্ধ করে নিরস্ত্র মোল্লাদের উপর পুলিশ ঝাপিয়ে পড়ল? দিনের বেলা যখন ঘটনার সুত্রপাত হয় তখন বা তার একটু পর অ্যাকশনে না গিয়ে শেষরাতে কেন মানুষ হত্যা করা হল? দিনের বেলা যখন ঘটনার সুত্রপাত হয় তখন অ্যাকশনে গেলে কি মানুষের সম্পদ্গুলো রক্ষা করা যেতনা আর রক্ষা পেতনা নিহত মানুষগুলো ? আপনার পুলিশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল আগুনের শিখা আর রাতে হত্যা করলো নিরীহ মানুষগুলোকে, কেন? আর এই ঘটনায় আপনার অবস্থান কি বিমাতাসুলভ ছিলোনা! নাকি এটা একটি ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ছিল?
বুঝতে পারিনা কিছুইঃ
১. মতিঝিলের মত দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম বানিজ্যক এলাকায় কেন হেফাজতিদের মিছিল মিটিং করতে দেয়া হল ?
২. প্রশাসনের যদি হেফাজতিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতেই হয়, তবে মধ্য রাতে কেন? সকাল থেকে শুরু হওয়া গণ্ডগোল মধ্যরাত পর্যন্ত জিইয়ে রাখা হল কোন স্বার্থে !
৩. পুড়ে গেল সরকারী – বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, দোকান ও মার্কেট ও যানবাহন - ১০,০০০ পুলিশের ১০০০ গেলেই হেফাজতিরা কি সরে যেত না বা ওদের তান্ডব থেকে রক্ষা পেতনা ?
৪. গণজাগরণ মঞ্চ যদি ভাংতেই হয়, আগে না ভেঙ্গে আজ কেন ভেঙ্গে ফেলা হল ?
৫. মঞ্চ ভাঙার পর গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা এখন চুপ কেন ? তবে কি হেফাজতিদের লাশ আর রক্ত পেয়ে ওনাদের প্রত্যাশা পূর্ণ হল ?
আমরা কারো পক্ষ নিতে চাইনা, কিন্তু কারো লাশ ও দেখতে চাইনা। দেশ আমার, আপনার আর সবার। কিন্তু আমাদের দেশের নেতারা ক্ষমতায় গেলে ভুলে যান এবং দেশটা তখন শুধু তাদের ই হয়ে যায়। হেফাজতিরা মাদ্রাসায় ই ভালো ছিলো, সরকারের ভুল ছালের ফল হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। দেশের নোংরা রাজনীতির প্রভাবে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। আর যা শুরু হয়েছে তার পরিসমাপ্তি কোথায় তা কেউ ই জানেনা, মনে করার দরকার নাই যে মতিঝিলে গুলি মেরে দমন করল বলে সব হেফাজতিদের মূল এখানেই শেষ, তা কিন্তু নয় ।
আল্লাহ সকল অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




