somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ মার্চ

২৫ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন তারিখ দেখার জন্য আজকাল ঘড়ি/ ক্যালেন্ডারের দরকার হয় না। এক মোবাইল ফোন এসে চারদিকে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। আজ সারাদিনে যতবার মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ গেছে, ততবারই শিহরিত হয়ে উঠেছি। আজ ২৫ শে মার্চ।

ব্লগার হিসেবে আমি কনিষ্টদের একজন। যে ধরনের লেখা লিখতে বসেছি তার জন্য অন্তত। এর আগে ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে লিখেছিলাম। লেখাটা তেমন কেউই পড়েনি। এবারো হয়ত তাই হবে।

ব্লগে দেখলাম ক্রিকেট নিয়ে (পাকিস্তানকে সাপোর্ট করা নিয়ে) বেশ উত্তেজনা চলছে। আমি অবশ্যই বিপক্ষে। আমি একবার এক মেয়েবন্ধু কে বলেছিলাম পাকিস্তানে জন্ম গ্রহণকারী কোন বিশ্বসুন্দরী যদি আমাকে কখনো প্রপোজ করে আমি তাকে অপমান করে ফিরিয়ে দেব। সে মিষ্টি হেসে বলেছিল আমি নাকি তা পারবো না। আমি তাকে হয়ত আমার পাকি দের প্রতি ঘৃণা বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছিলাম। বলাই বাহুল্য সে ব্যপারটাকে হাস্য-রসিকতা হিসেবে নিয়েছিল।
যাহোক আমি পাকিস্তানকে এর সাপোর্টারদের ভাষায় "রাজনৈতিক" কারনে ঘৃণা করি না। কারন রাজনীতি আমি বুঝি না। সেটা বোঝার জন্য আমি যথেষ্ঠ পোলাপাইন। তবে মুক্তিযুদ্ধকে মানুষ রাজনৈতিক কারণ কিভাবে বলে তা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই! আসলে ছোট মানুষ তো তাই বোধহয়। বড় হয়ে গেলে হয়ত আমিও মুক্তিযুদ্ধকে "রাজনৈতিক" বলতে পারবো!
পাকি বিরোধী সমালোচনাতে ব্লগাররা যখন মুখর হয়ে আছেন তখন আবার কিছু দুঃচরিত্র দেখলাম ভারতের পক্ষে চান্স মারতে। যেমন, ভারত বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে ইত্যাদি। এদের দেখে মাথা আরো গরম হয়ে যায়।


যাহোক এবার ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এ আসি।
১৯৭১ সালের এই রাতে পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা সংঘটিত হয় বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনার আগমুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করে তারা।
গণহত্যার নীলনকশা 'অপারেশন সার্চলাইট' বাস্তবায়নে সেদিন মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি সেনারা মেতে উঠেছিল বাঙালি নিধনযজ্ঞে। স্তম্ভিত বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে বর্বর পাকসেনাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ। পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে সংঘটিত সেই গণহত্যা আজও সারাবিশ্বের মানুষের কাছে ঘৃণ্যতম ও তমসাচ্ছন্ন এক অধ্যায়।
পঁচিশে মার্চ শুরু হওয়া এই নিধনযজ্ঞ চলে মুক্তিযুদ্ধের টানা ৯ মাস ধরে। তবে এই নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার বিরুদ্ধে অসমসাহসী বাঙালির প্রতিরোধও ছিল। গণহত্যার এক রাত পরই বাঙালির সশস্ত্র স্বাধীনতা শুরু হয়। এই নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে পাকসেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদের এ দেশীয় দোসর ঘাতক দালাল রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাও। রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতরে পাকসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি হননি। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তারা। কিন্তু শত্রুর ট্যাঙ্ক আর ভারী মেশিনগানের ক্রমাগত গুলির মুখে মুহূর্তেই গুঁড়িয়ে যায় সব ব্যারিকেড। সেখান থেকে ঘাতক বাহিনী এগোতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে। এ সময় বিদেশি সাংবাদিকরা অবস্থান করছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে।
মধ্যরাতে হোটেল ঘিরে ফেলল পাকিস্তানি সেনারা। কারও বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। ততক্ষণে সেনানিবাস থেকে হিংস্র শ্বাপদের মতো বেরিয়ে এসেছে ট্যাংক আর সাঁজোয়া গাড়ির সারি। তারা এগিয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। জগন্নাথ হল আর ইকবাল হলে সেনারা মেতে উঠল নির্বিচার হত্যায়। গোলা ফেলা হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে। পথের পাশের বস্তিবাসীও রক্ষা পেল না গণহত্যা থেকে।এক রাতে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী শহীদ হন। অন্যদিকে নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণ করতে হয় ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে। ফ্লেম থ্রোয়ার দিয়ে যত্রতত্র ধরিয়ে দেওয়া হলো আগুন। এরপর সেনারা হামলা করল রাজারবাগ ও পিলখানায়। বাঙালি পুলিশ ও ইপিআরের (পরে বিডিআর) সদস্যরা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু ট্যাংক ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের কাছে তাঁরা সংগত কারণেই টিকতে পারেননি
সারা রাত ধরে তারা মারে নিরিহ ঘুমন্ত বাঙ্গালীকে। এমন জঘন্য ঘটনা ইতিহাসে আসলেই বিরল।
পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা।পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্পৃহা রোধ করতে পারেনি। বাঙালি ঠিকই রুখে দাঁড়িয়েছিল। ছিনিয়ে এনেছিল এ দেশের স্বাধীনতা। আমরা দেখেছি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থ নয়, সব কিছুর পেছনেই কাজ করেছে রাজনৈতিক ক্ষুদ্র ও হীন স্বার্থ। যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদরদের অস্ত্রভাণ্ডার গেল কোথায়? আজ সেই অস্ত্রের সন্ধান করার প্রয়োজনও দেখা দিয়েছে। আর প্রয়োজন আমাদের মত নতুনদের প্রজন্মকে নতুন করে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানানোর। তা না হলে এসব ইতিহাস কেবল বইয়ের পাতায় থেকে যাবে।







সুত্রঃ Click This Link
Click This Link
Click This Link

*ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:৩৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×