somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন-১

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষ্মীপুর শহর ছাড়িয়ে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে রায়পুর রোড ধরে এগিয়ে গেলে লক্ষ্মীপুর নতুন বাস স্ট্যান্ড। বাস স্ট্যান্ডের বামদিক দিয়ে একেবেঁকে একটি পাকা রাস্তা দক্ষিণে মেঘনা নদীর একটি শাখার কাছে গিয়ে মিশেছে। প্রায় ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই রাস্তাটির দুইপাশে মনজুড়ানো বৃক্ষরাজির সমাহার। উচু উচু আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, ঝাউগাছ মাঝে মাঝে কলা কিংবা সুপারির বাগান পুরো রাস্তাটিকে ছায়া সুনিবিড় করে তুলেছে।
মেঘনা নদীর শাখা যেখানটাতে রাস্তাটি গিয়ে শেষ হয়েছে- এর নাম মজু চৌধুরী হাট। এখানে একটি ফেরি ঘাট আছে। দুইটি ফেরি নিয়মিত মজু চৌধুরী হাট টু ভোলা রোডে যাতায়াত করে। যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাক এই পথ ধরে ভোলা যায় এবং ভোলা থেকে যাত্রী এবং সওদা নিয়ে আবার ফিরে আসে। ফেরি ছাড়াও সী-ট্রাক এবং ট্রলারে করেও ভোলা যাওয়া যায়। ফেরিতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা এবং সী-ট্রাকে সময় নেয় দুই আড়াই ঘন্টা।
মেঘনা নদীর শাখাটির পানির গতিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্লুইস গেটের উপর দিয়ে যে রাস্তাটি আরও দক্ষিণে চলে গেছে সেদিকে বিস্তীর্ণ চর। এই চরে সয়াবিন, তরমুজ, ধান ইত্যাদি চাষ হয়।
স্লুইস গেটের অদূরে মসজিদের পাশ দিয়ে একটি কাচা রাস্তা মেঘনার এই শাখার বুক ভেদ করে প্রায় ৫০০ গজ গিয়ে থেমে আছে। এই রাস্তার মাথাটিকে কেন্দ্র করে ৫০টি জেলে পরিবারের বাস।
আজ একটি নতুন তথ্য জানলাম। এখানে কয়েকটি পরিবার আছে যারা ৭০/৮০ বৎসর ধরে এখানে বাস করছে। আজ গুণে দেখলাম মোট ৭৮টি নৌকা। মাঝে মাঝে নৌকার সংখ্যা বাড়ে। আবার কমে যায়। তবে স্থায়ীভাবে ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার নিয়মিত এখানে বাস করছে ৭০/৮০ বৎসর যাবৎ। এখানেই এদের জন্ম। এখানেই এদের মৃত্যু। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ৩ জন করে প্রায় ২০০/২৫০ টি শিশু আছে যারা শিক্ষার ছোয়া পায়নি। এই শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বলেছি গতকাল।
আজ ১২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার জেলেপাড়ার প্রস্তাবিত সেই স্কুলের ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সাথে উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠক হয়। রাস্তার পাশে আকাশমণি গাছের ছায়া সুনিবিড় বাগানে কলাপাতার আসন বিছিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া।
সভায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচিত হয়-
১. স্কুলের নাম- স্কুলের একটি সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নাম বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং 'মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন' নামটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
২. স্কুলের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এজন্য কমিটির সদস্যরা সবাই একমত পোষণ করেন এবং বিস্তারিত আলোচনার পর সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর শাখায় 'মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন' এর নিজস্ব নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভবিষ্যতে অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা সম্পন্ন যে কোন ব্যাংকে স্কুলের নামে এই হিসাব খোলা যেতে পারে।
৩. জেলে জনগোষ্ঠীর একমাত্র শিক্ষিত সদস্য তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নকারী সোহরাব মাঝিকে স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করে স্কুল দেখাশুনা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়।
৪. স্কুলের ছাউনি এবং চারিপার্শ্বে বেড়া দেওয়ার প্রয়োজনে টিন এবং বেড়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করার জন্য কমিটির সদস্য সোহরাব মাঝি এবং চুন্নু মোল্লাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। খরচ শেষে খরচের ভাউচার পরবর্তী মিটিংয়ে উপস্থাপনপূর্বক খরচের অনুমোদন নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৫. স্কুলের নাম সংবলিত একটি সাইনবোর্ড, স্কুলের জন্য ব্ল্যাকবোর্ড, ঘন্টা, জাতীয় পতাকা, টেবিল-চেয়ার, মাদুর ইত্যাদির বাজেট নির্ধারণের জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তী মিটিংয়ে বাজেট উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬. স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে স্কুলের সেক্রেটারী জনাব মোঃ আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া এবং সদস্য জনাব মাহবুব আজাদ খান দায়িত্ব পালন করবেন করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৭. স্কুলটি স্থাপনের পর স্থায়ীভাবে এটি পরিচালনার নিমিত্তে সর্বস্তরের সহযোগিতার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা হয় এবং এ ব্যাপারে যে কোন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সবাই দায়িত্ব পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৮. স্কুলের স্থায়ী খরচ এবং মাসিক খরচ পরিচালনার নিমিত্তে সমাজের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ এবং ব্লগের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ব্যক্তিবর্গের কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয় এবং এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কমিটির সদস্যগণ একমত হন।
৯. পুরো স্কুল প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় খরচ এবং অনুদান প্রাপ্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনে একটি রেজিষ্ট্রার সংরক্ষণ করার জন্য জনাব মোঃ আখতারুজ্জামানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
স্কুল স্থাপন এবং সুষ্ঠূ পরিচালনার অঙ্গীকার নিয়ে সদস্যরা আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর, রোববার চতুর্থ সভায় মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় আর কোন আলোচনা না থাকায় সভাপতি মহোদয় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সভায় নিম্নোক্ত সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন-
১. জনাব মোঃ আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া
২. জনাব মাহবুব আজাদ খান
৩. মোঃ চুন্নু মোল্লা
৪. মোঃ সোহরাব মাঝি
৫. মোঃ রোস্তম আলী
৬. মোঃ বেলায়েত
৭. হানিফ বয়াতি

(আসুন না এই শুভ উদ্যোগটির সাথে আমরা জড়িত হই। মেঘনা পাড়ের জেলেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা হাতে নেই।)
(বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনলাইনে থাকতে পারছিনা। অনলাইনে আসলে পাঠকদের যে কোন কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব দেবো। প্রমিস)


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×