somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের কাছে একটা চিঠি...

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ১:২১
মা,
কেমন আছো ?
সবচেয়ে অদ্ভুত প্রশ্নটা
করে ফেললাম তাই না ?
কি করবো বলো মা,
নাগরিক কোলাহল,ব্যস্ততায়
তোমার কথা মনে করতে
পারিনা ।
এখন মাঝরাত,সারাদিনের
কতশত ব্যস্ততা,কোলাহল
রেখে তুমি হয়তো এখন
একটু বিশ্রামে গেছো আর
ঠিক তখন এই অবাধ্য
ছেলেটা তোমাকে লিখতে
বসেছে ।

আমরা বড্ড বেঈমান,
তাই না মা ?
একটা ছোট খাঁচা থেকে
মুক্ত করে তোমাকে আরো
বড় খাঁচায় আঁটকে দিয়েছি ।

মা,
তোমার কি কখনো নিজের
জন্মের প্রতি ঘৃণা জন্মে ?
মা,
সেদিন বিকেলে হাঁটছিলাম,
হঠাত্‍ দেখি ৮-৯ বছরের
একটা বাচ্চা,চুল উসকো-
খুসকো,পরণে নীল ছেঁড়া
প্যান্ট আর গায়ে একটা
ছেঁড়া গেঞ্জি ।
মা,ছেলেটি ছিল ভিক্ষুক ।
আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম,
কি নাম তোমার ?
ছেলেটি উত্তর দেয় নি ।
আমি বললাম,
কিছু খেয়েছিস ?
ছেলেটি জানালো-
সে সকালবেলা
একটা রুটি খেয়ে বেরিয়েছে ।
আমি তাকে কিছু টাকা
দিতে চেয়েও দেয়নি ।
আমি তার ক্ষুদার্ত পেটে
শেষ লাথিটা দিতে চাইনি ।
মা,
তোমার বয়স তো কম
হলো না ।
তুমি এখন ৪৪ পেরিয়ে
৪৫ এর দিকে ধাবিত ।
মা,
তোমার কি সেই দিনের
কথা মনে আছে ?
৯ মাস ধরে জন্ম নেওয়ার
তীব্র ছটফটানি তোমার
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের
১৬ তারিখ বিকেলে সমাপ্ত
ঘটেছিল ।
তুমি নতুন সূর্যোদয়
দেখেছিলে ।
মা,
আজ এতোদিন,এতোটা
যুগ পরে এসে কি তোমার
মনে হয়,
এ জন্ম বৃথা তোমার !

মা,
তোমাকে আমার খুব
ধর্ষণ করতে ইচ্ছা করে !
তুমি অবাক হচ্ছোনা তাই
না মা ?
ধর্ষিত হতে হতে তো
তুমি এখন নিঃস্ব,রিক্ত ।
কোথায় লজ্জা রাখবো মা !
তোমার আঁচল খানি দাও
মা,আমি মুখ লুকাবো ।
তুমি বড় হতভাগা মা,
তুমি ৪৪ টি বছর ধরে
অসংখ্য অসংখ্যবার
তোমার পেটে জন্ম দেওয়া
সন্তানদের দ্বারা ধর্ষিত
হচ্ছো !

মা,
আমি তোমার বখে যাওয়া
সন্তান নই ।
মা,
আমি তোমার আগামী,
আমি তোমাকে মুক্ত করবো,
মা ।
তুমি আমাকে দোয়া করো
মা,তোমার দোয়ার বড্ড
প্রয়োজন তোমার এই
দূরন্ত ছেলেটার ।

প্রিয় মা,
তোমাকে যখন ধর্ষণ করা
হয় তুমি কি খুব কাঁদো,
মা ?
তোমার কোলে অভুক্ত থাকে
কোটি কোটি মানুষ আর
তোমারই পথভ্রষ্ট সন্তানেরা
হাজার কোটি টাকা সুইস
ব্যাংকে জমা রাখছে !
মা,তুমি কাঁদো না কেন
মা ? আমি তো শুনতে
পাইনা ।
ওহ বুঝেছি,
তুমি খুব অভিমানী,বড্ড
নিথর দেহ তোমার ।
বড্ড ক্ষোভে তুমি প্রায়ই
কাঁদো (বৃষ্টি )আর তোমার
কাঁন্না দূ'কোল ছাপিয়ে যায়
(বন্যা) আর তুমি অজস্র
কাঁন্নায় মাতাল হয়ে
ধ্বংসলীলা খেলো (ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস),
মা আমি জানি মা,
তোমার পদভ্রষ্ট সন্তানদের
প্রতিটি আঘাত তুমি নীরবে
সয়ে যাও,
আমি জানি মা,
তারপর যখন আর সহ্য
করতে পারো না তখন
কেঁপে ওঠো (ভূমিকম্প )।

মা,
তোমার ১৬ কোটি সন্তান
আছে ।
তবুও তুমি কত অসহায়
মা !
তোমার ক্ষতবিক্ষত শরীরের
অংশে (সীমান্তে) আজো
রক্ত ঝরে,
মা,তোমার একটা মেয়ে
নাম ফেলানী-তাকে মেরে
ঐ কাঁটাতারে ৭ দিন
ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো ।
মানবতা কেঁদে কেঁদে
উঠেছিল,ফেলানী আজো
কাঁদে মা-আমরা হয়তো
শুনতে পাই না ।

মা,
তোমাকে মুক্ত করে যারা
অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো তারা
আজ মানবেতর জীবনযাপন
করে মা ।
তোমার জন্মদিনে কোটি
টাকার আতশবাজি ফোঁটানো
হয় আর মুক্তিযোদ্ধারা
ভাঙ্গা চশমা পরে ভিক্ষা
করে মা !
আর কি বলবো মা আমি ?

মা,
তোমার কি মনে আছে ?
তোমার জন্মের পূর্বে
ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলো
তোমারই কিছু
সন্তান ।
তখন তুমি ছিলে পূর্ব
পাকিস্তান,তখনো তুমি
বাংলাদেশ হয়ে পারোনি ।
মা,
আমি তোমাকে কি বলবো
লজ্জার কথা মা !
আজ তোমার ছেলেদের
রক্তে পাওয়া ভাষা বাংলা
একটি গেয়ো,আনস্মার্ট
আর সেকেলে ভাষায়
পরিণত হয়েছে মা !
শুদ্ধ বাংলা আজ দেখা
যায় না মা,
তোমার চর্চা হয়না
আর ।

মা,
তোমার কী রুমীর কথা
মনে আছে ?
হ্যা মা,আমি শহীদ রুমীর
কথা বলছি ।
ছেলেটা বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়তে গেলো না শুধু
তোমার জন্য মা,শুধু
তোমার ।
আর আজকে যুবকদের
দ্যাখো মা,
ওরা তোমার কথা ভাবেনা
মা,তোমার কথা ওদের
মাথায় আসেনা ।
ওরা ডুবে গেছে হিন্দী
অর ইংরেজীতে,ওরা
বড্ড ফ্যাশন সচেতন মা,
ওরা খুব ব্যস্ত মা,
তুমি,তোমার ভাষা
ওদের কাছে রাঁস্তায় পড়ে
থাকা ধূলোর চেয়েও
মূল্যহীন মা ।

মা,ও মা,
তুমি কেনো আরো রুমীর
জন্ম দিচ্ছো না ?
কেনো আরো শেখ মুজিব,
আরো শেরে বাংলা,আরো
ভাসানী,আরো ৩০ লাখ
সন্তান যারা শহীদ হতে
প্রস্তুত,কেন মা,
কেন আরো শহীদ
নূর হোসেনের জন্ম দিচ্ছোনা ?
কেন মা ! কিসের অভিমান
তোমার ?
ও বুঝছি,
আমরা তোমাকে বড্ড
জ্বালাতন করি,তাই না
মা ?
আমরা যে বড্ড স্বার্থপর
মা,
আমরা তোমার খাচ্ছি,
তোমাতে বেঁচে আছি
আবার তোমাকেই ধর্ষণ
করছি !
এ কোন আজব সমাজে
আমাকে জন্ম দিলে মা !!!

মা,
তুমি কি এভাবেই নীরবে
ধর্ষিত হয়ে যাবে ।
তোমাকে ধর্ষণ করা প্রতিটা
রাজনীতিবিদ,দুর্নীতিবাজ,
ঘুষখোর,অদেশপ্রেমিক নষ্ট
তারণ্য এদের বিরুদ্ধে কবে
রুখে দাঁড়াবে মা !
আর কত ধর্ষিত হবে তুমি !
আর কত রাত ঐ ফুটপাথে
শীতে কাঁপবে শিশু !
আর কতকাল কতকাল
মা,কতকাল শিশু কাগজ
টোকাবে,ঐ ডাস্টবিনে
আর কতকাল খাবার খুঁজবো
মা !
কবে কবে তুমি জাগবে !
৫ বছর পর পর খাল
কেটে কুমির আনা কবে
মা,কবে থামাবে তুমি ?

মা,
আরেকটা নতুন
সূর্যোদয় যে খুব দরকার
মা,আরেকটা যুদ্ধের
প্রয়োজনীয়তা কি তুমি
অনুভব করছো না মা ?
সেদিন পত্রিকার পাতায়
একটা খবর পড়ে আমি
চমকে গেছি মা ।
কি খবর জানো মা ?
একটা গরীব মেয়ে
প্রসব বেদনা উঠেছিল ।
প্রসব বেদনার কি যন্ত্রণা
তুমি তা জানো ।
হতভাগিনী ঐ মেয়েটি
হাসপাতালে গিয়েছিল
ভর্তি হতে ।
কিন্তু সেখানেও তুমি
ধর্ষিত হয়েছো মা ।
অর্থ দিতে না পারার
জন্য ঐ মেয়েটিকে হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়নি ।
কোথা থেকে ওরা টাকা
পাবে বলো মা ?
সব টাকা তো সুইস
ব্যাংকে জমা রাখা ।
মা,
ঐ মেয়েটি রাঁস্তার
মাঝে একটি কন্যা সন্তান
প্রসব করে মা ।
এ কেমন স্বাধীনতা মা,
এ কেমন মুক্তি পেলাম
আমরা !
আর কত কিছু দেখবে
মা তুমি ?
কবে মা,কবে রুখে দাঁড়াবে,
আর কত মা,আর কত
ধর্ষিত হলে জাগবে তুমি ? :'(
তোমার জাগার অপেক্ষায়
যে চেয়ে আছে কোটি ক্ষুদার্ত
চোখ ।

মা,
রাত অনেক হয়েছে ।
প্রায় ভোর রাত বলা
যায় ।
সারাদিনের ধর্ষণ শেষে
এখন তুমি ঘুমাচ্ছো ।
আমি চিঠিটা পোস্ট
করেই ঘুমাবো মা ।
তোমার ছেলের জন্য
দোয়া করো ।

তোমার জাগার অপেক্ষায়-
তোমার আবিদ ।।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×