somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এরশাদ বাদশা
জীবনের সব রঙিন মূহুর্তগুলো এখন শুধুই দুই এনজেল এর মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা হাসলে আমি হাসি..তাদের বিন্দুমাত্র কষ্টে ভীষন ব্যথিত হই.. ব্যস্ততা যদিও দেয়না অবসর..তবু এক আধ টুকরো অবসরের মুহুর্তগুলো রাঙিয়ে দেয় ওরা দুজন..দে আর মাই ওয়ার্ল্ড..দে আর মাই ডটার..দ

স্বপ্নচোর- ৯ম পর্ব

২৮ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(অনেক দিন বিরতির পর স্বপ্নচোর ধারাবাহিকটি পোস্ট করলাম। যারা সময় নিয়ে সিরিজটি পড়ছেন, এবং পোস্ট করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি)

আগের পর্বগুলো পড়ুন, এখানে:-
স্বপ্নচোর -১ম পর্ব
স্বপ্নচোর-২য় পর্ব
স্বপ্নচোর-৩য় পর্ব
স্বপ্নচোর-৪র্থ পর্ব স্বপ্নচোর-৫ম পর্ব
স্বপ্নচোর-৬ষ্ঠ পর্ব স্বপ্নচোর-৭ম পর্ব স্বপ্নচোর-৮ম পর্ব

একটু পরেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি, ইংরিজিতে যাকে বলে ক্যাটস অ্যান্ড ডগস। জয় প্রাণভরে উপভোগ করতে লাগলো শ্রাবণ দিনের মন আনচান করা বর্ষণ। টার্মিনালের ছাউনিতে, দোকানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো ওকে দেখতে লাগলো। তবে সে সম্পর্কে ও একদমই ওয়াকিবহাল নয়। আপনমনে দাঁড়িয়ে আছে ও।
একসময় দেখা গেলো, রবীন্দ্রনাথ’র ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ ধরনের বর্ষণ নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় রুপ নিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের আশির্বাদ পুষ্ট সরু এবং আবর্জনায় ভরা ড্রেনগুলো ফুলে-ফেঁপে রাজপথে চলে এসেছে। পানি বাড়তে বাড়তে হাঁটু ছাড়িয়ে উপরে উঠতে চাইছে।
হাঁটু পানিতে কতোক্ষন আর হাঁটা যায়। তাছাড়া ড্রেনের ময়লা, বৃষ্টির পানির সাথে বন্ধুত্ব পাতানোয়, বৃষ্টি ভেজার বিলাসি শখটা বাদ দিতে হলো। টার্মিনালের ফাস্টফুড শপে গিয়ে দাঁড়ালো জয়। মাথা নেড়ে পানি ঝাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলো ও। তারপর হঠাৎই চোখ পড়লো মেয়েটার উপর।
প্রথমে বিস্মিত এবং পরে আনন্দ, দুটো মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক অনুভূতির সৃষ্টি করলো ওর মনে।
আলো; ওর স্বপ্নের নারী, ওর জীবনের এক সোনালী অধ্যায়, ওর যা কিছু আনন্দ, ওর যা কিছু আপন; ওর সামনে দাঁড়িয়ে! পরিবেশ পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে ছুটে গেলো ওর কাছে জয়, চিৎকার করে বলে উঠলো-‘আলো, তুই!’
যার উদ্দেশে বলা হলো সে প্রথমে জয়ের দিকে তাকালো, মুখের উপর উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার রেখা স্পষ্ট।
মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
জয় দ্বিতীয়বার চিৎকার করার আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো। কারণ যাকে আলো ভেবে ও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো, সে ওকে চিনতেই পারেনি। তার মানে এই, মেয়েটা আলো হতেই পারেনা। যুক্তিটা যদিও বেশ শক্ত, তবু ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলোনা, কারণ, আলোর সাথে মেয়েটার চেহারার মিল।
‘সরি, আমি আপনার সাথে একজনকে মিলিয়ে ফেলেছিলাম।’ ব্যাখ্যা দেবার সুরে বললো জয়, কারণ মেয়েটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ের ব্যাখ্যা ওর মনঃপুত হলো কিনা বোঝা গেলোনা, কারণ মেয়েটা এখন অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
বৃষ্টি এখনো ঝড়ছে, আর সেটাই মেয়েটাকে ভালো করে দেখার সুযোগ করে দিলো জয়কে। ওর পরনে আকাশনীল রঙের শাড়ি। চেহারায় রাত জাগার চিহ্ন স্পষ্ট, কিন্তু সেটা ওর চেহারার লাবণ্যকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। দুহাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পুরোটা জুড়ে নীল রঙের চুরি। জয়ের কেন যেন মনে হলো, বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে মেয়েটা।
ওকে দেখতে দেখতে ওর আবারো মনে হলো, এ আলো না হয়েই যায়না, আবার ভালো করে দেখাতে পার্থক্যটাও চোখে পড়লো। আলোর মুখটা গোল, আর এর একটু লম্বাটে ধরণের। শুধু এই, আর সবকিছুই আলোর সাথে মিলে যায়।
মেয়েটার হাতে একটা ব্যাগ, জয় আন্দাজ করলো, ব্যাগের মধ্যে কাপড়-চোপড় ছাড়াও মূল্যবান কিছু থাকতে পারে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই, নিজেকে ইডিয়ট বলে গাল দিলো ও, এখানেও মাথায় জোচ্ছুরির চিন্তা।
বৃষ্টি থেমে গেলো, সাথে সাথেই জয় ভাবলো, কেন থেমে গেলো, কারণ বৃষ্টি থেমে যাওয়া মানে যে যার গন্তব্যে চলে যাওয়া, মেয়েটা নিশ্চয়ই বৃষ্টির জন্যই তার গন্তব্যে যেতে পারছেনা।
বৃষ্টি থামার পাঁচ মিনিট পরেও সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো মেয়েটা, সাথে সাথে জয়ও, উদ্দেশ্য ডুপ্লিকেট আলোকে আরো ভালো করে দেখা। তবে এর বেশী আর থাকা গেলোনা, কারণ, মেয়েটা ঘন ঘন ওর দিকে তাকাচ্ছে, তাকানোর ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে, ও বিরক্ত বোধ করছে।
দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো জয়, তবে একেবারে যে চলে গেলো তা নয়। মেয়েটাকে দেখার পর কিছুতেই ওকে মন থেকে তাড়াতে পারছেনা। তাই আড়াল থেকে ওকে দেখতে লাগল। যেন আলোই আবার ওর কাছে ফিরে এসেছে, এত মিল দুজনের চেহারায়। প্রায় দশ মিনিট কেটে গেলো এভাবেই, জয় অবাক হলো, এখনো মেয়েটা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় রাজ্যের দুশ্চিন্তা, অজানা আশংকায় কালো মেঘ জমেছে সেখানে। জয় মোটামুটি নিশ্চিত, কোনো বিপদে পড়েছে মেয়েটা। ভেতর থেকে একটা তাগিদ বোধ করল ও, মেয়েটাকে সাহায্য করতে হবে। কিন্তু কিভাবে? গায়ে পরে সাহায্য করতে যাওয়া, অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে।
তবে বেশিণ ভাবতে হলোনা ওকে, কারণ মেয়েটাকে সাহায্য করার মোক্ষম একটা সুযোগ এসে গেলো। ষন্ডা চেহারার তিনজন লোক ওর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে,বোঝাই যাচ্ছে ওদের মতলব খুব একটা ভালো নয়। জয় মোটামুটি সাহসী, তবে বীরত্ব দেখাতে গিয়ে পৈত্রিক প্রাণটা খোয়াবার কোন ইচ্ছে ওর নেই। ও তো আর সিনেমার নায়ক নয় যে, তিন-চার জন লোককে একাই মেরে কাত করে দেবে।
কিন্তু ভাবনাটা বেশিণ স্থায়ী হলোনা, কারণ ইতিমধ্যে লোকগুলো ওর সাথে কথা বলতে শুরু করেছে। এতো দুর থেকে কথা শোনা না গেলেও, জয় মেয়েটার চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, আর যাই হোক লোকগুলো ওকে রবীন্দ্রসংগীত শোনাচ্ছে না।

চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১০ রাত ২:৪৭
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×