somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর মহাসড়কে বাংলাদেশ

৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অনেক অনেকদিন আগের কথা। ইংল্যান্ডে নতুন এসেছি। একটা চাকুরীতে জয়েনও করেছি। একদিন কফি কর্ণারে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি (উল্লেখ্য, এখানে অনেক অফিসেই স্টাফদের জন্য ক্যাফেটারিয়া ছাড়াও একাধিক কফি কর্ণার থাকে। দেশের মতো পিওনের সুবিধা নাই, তাই এই ব্যবস্থা) আর এক কলীগের সাথে গল্প করছি। হঠাৎ বিকট শব্দে এলার্ম বেজে উঠলো। এই শব্দ আগে শুনিনি, তাই সহকর্মীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। ও বললো, এটা ফায়ার এলার্ম। চলো, এখন বিল্ডিং এর ভিতরে থাকা যাবে না, বাইরে যাই। আমি হায় হায় বলে ডেস্কের দিকে দৌড় দেয়ার উপক্রম করতেই ও বললো, ওদিকে কই যাও? আমি বললাম, আমার ল্যাপটপ পুড়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, নিয়ে আসি! ও মুচকি হাসি দিয়ে বললো, এটা ফলস এলার্ম। তোমার ল্যাপটপ আনতে হবে না।

ঘটনা বিস্তারিত পরে জানলাম। এই ফলস এলার্ম র‌্যান্ডমলি বাজে। যে কোনও দিন যে কোনও সময়ে। যখন বাজবে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফায়ার এক্সিট ডোরগুলো খুলে যাবে। সবাই বাইরে নিরাপদ জায়গায় চলে যাবে। দিকবিদিক ছোটাছুটি না করে সবাই কোথায় যাবে এমনকি সেটাও নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। এই এলার্ম কেউ বন্ধ করতে পারবে না। অগ্নি-নির্বাপন বাহিনীর লোকজন আসবে। তারা সবকিছু চেক করে এলার্ম বন্ধ করবে। শুধুমাত্র তারপরই সবাই আবার ভিতরে যেতে পারবে। যদি সত্যিই কোন বিপদের কিছু না থাকে, তাহলে এটা একটা ফায়ার ড্রিল হিসাবে রেকর্ড করা হবে। আরো অনেক কায়দা-কানুন আর ঘটনা আছে। সেগুলো আর না বলি।

তবে সেদিন আমার সহকর্মী একটা কথা ঠিক বলেনি। ওটা ফলস এলার্ম নাও হতে পারতো। যেহেতু ১০০ বার এলার্ম বাজলে ৯৯ বারই সেটা ফলস হওয়ার চান্স থাকে, সম্ভবতঃ সেই বিশ্বাস থেকেই সে ওটা বলেছিল। সে যাই হোক, এটা হলো একটা উন্নত, ধনী দেশের সিস্টেম।

কিছুদিন আগে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় যে অগ্নিকান্ড হলো, তখন মনকে প্রবোধ দিয়েছি এইসব বলে যে; ওটা হলো পুরানো ঢাকার ঘটনা। সরু গলি, দু’টা রিকসাই ঠিকমতো ক্রস করতে পারে না, দমকল বাহিনী যাবে কিভাবে? এত ঘিন্জি এলাকা, বাহিনীর লোকজন তো ঠিকমতো নড়াচড়াই করতে পারবে না, আগুন নেভাবে কি? পুরানো সব বিল্ডিং, তৈরীর সময় বিল্ডিং কোড মানা তো দুরের কথা, এমন কোন কোডের অস্তিত্বের কথাই বাড়ীওয়ালা জানতো কিনা সন্দেহ। যাক, কিছু মানুষ অসময়ে মারা গিয়েছে, দেশে তো এমন প্রতিদিনই কতো নিরীহ মানুষ মারা যায়, দেশে-বিদেশে এটা নিয়ে কে আর মাতামাতি করতে যাবে! এমনি আরো অনেক কিছু।

কিন্তু এখন? নতুন ঢাকার বনানীর মতো জায়গায়, যেখানে বিদেশীরা তো বটেই, দেশী বিগশটদের প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া? পুরাতন জীর্ণ কোন ভবন না, ২৩ তলা একটা আধুনিক টাওয়ার যার দু’পাশেই চওড়া রাস্তা! এখন কি বলে মনকে প্রবোধ দেব!!

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বনানীর এফ আর টাওয়ার বিল্ডিং কোড মেনে তৈরী করা হয়নি। আচ্ছা! সিরিয়াসলি বলছেন!! এরপর এক্স ওয়াই জেড টাওয়ারে আগুন লাগলে আরেক মন্ত্রী বলবেন, এই টাওয়ারটাও কিন্তু বিল্ডিং কোড মেনে তৈরী করা হয়নি। কি তামশা! তো বিল্ডিং কোড মানানোর দায়িত্ব কার? আর নাই যদি মানে, আর বিল্ডিং যদি আপনাদের চোখের সামনে স্ব-মহিমায় এভাবে খাড়াইয়া থাকে, তাহলে এর দায় কার? ইন্সপেকশান, ইনভেস্টিগেশান, ফলোআপ ইত্যাদি ইত্যাদি কতকগুলো শব্দ যে আছে তা-কি এনারা জানেন?

মানছি, উন্নত দেশের সিস্টেমের সাথে তুলনা করা ঠিক না। দেশ মাত্রই উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে, দারিদ্রতাই তো এখনও ঠিকমতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কাজেই আর্থিক দৈন্যদশা সব সেক্টরেই থাকতে পারে। কিন্তু সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা আর সু-নীতির দৈন্যদশা কেন থাকবে? আগেও আমি বলেছি, এগুলো দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড। অবশ্য আমি বললেই কি আর না বললেই কি? আমি তো বালস্য বাল, কোন এক হরিপদ পাল! এই ব্লগের অনেক গুনি ব্লগাররাই বলেছেন.....বলছেন। এখন মাননীয় পূর্তমন্ত্রীও বলছেন। এই সুযোগে মন্ত্রীকে একটা আন্তরিক ধন্যবাদ দিতেই হয় যে, ইনি অন্ততঃ সত্যি কথাটা বলেছেন, কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে হাজির হননি।

কান টানলে মাথা অবশ্যই আসবে। তেমনি এদেশের এমন প্রতিটা হত্যাকান্ডের পিছনে একটা করে দূনীতির গল্প বেড়িয়ে আসবে। দেশ ধনী না, তাই দূর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না, নাকি সদিচ্ছার অভাবের কারনে দূর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না; এটা নিয়ে বিতর্ক করা যেতেই পারে, কিন্তু যেটা নিয়ে বিতর্ক করার বিন্দু পরিমান উপায় নেই সেটা হলো, এসব হত্যাকান্ড এখনই বন্ধ করা উচিত। আমাদের দেশে দূর্নীতি কি 'পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন' পর্যায়ে চলে গিয়েছে? তাহলে প্রচার-মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দেয়া হোক, বাংলাদেশ যতোই উন্নয়নের মহাসড়কে উঠুক, আর ডিজিটাল হোক না কেন, ঘুষ-দূর্নীতি আমরা কিন্তু বন্ধ করতে পারবো না.......স্যরি। এটা আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ! ইটস অ্যা প্রমিজ ফ্রম ভুয়া মফিজ, সেদিন থেকে এ’ব্যাপারে ভুলেও কোন কথা কোনদিন বলবো না এবং আমি নিশ্চিত, আরো অনেকেই 'দূর্নীতি বন্ধ করো'............'দূর্নীতি বন্ধ করো' বলে ঘ্যান ঘ্যান করা বন্ধ করবেন।

দুর্ঘটনা উন্নত, অনুন্নত যেমন মানেনা, স্থান-কাল-পাত্রও মানেনা। কিছুদিন আগেও লন্ডনের অভিজাত পাড়া কেনসিংটনের গ্লেনফেল টাওয়ার অগ্নিকান্ডের কথা সবাই জানেন। সেটা ছিল একটা দুর্ঘটনা। জেনে রাখবেন, এর আগে লন্ডনে, আবাসিক এলাকায় এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তাও জার্মান বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষনের ফলে। তাছাড়া, তদন্তের মাধ্যমে যেসব ফ্যাক্টস এবং ফাইন্ডিংস এসেছে তার উপর ভিত্তি করে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কি সেসব পদক্ষেপ এবং কতোটুকু তা বাস্তবায়িত হয়েছে / হচ্ছে, যে কেউ চাইলে জানতে পারে। এটার নাম হচ্ছে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। আমাদের দেশের মতো তদন্ত রিপোর্ট বা কর্মকর্তারা শীতনিদ্রায় চলে যায়নি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অন্ততঃ সনাক্তকৃত কারনসমূহের কারনে ভবিষ্যতে একই ধরনের অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা খুবই সীমিত। আর আমরা? দেশের আম-জনতা কোনদিন কোন তদন্ত রিপোর্ট চর্মচক্ষু দিয়ে দেখেছে? নাকি জানে এটা দিয়ে কি হয়? খায় নাকি পিন্দে?

থাক, দুঃখের কথা বেশী না বলি। ভয় লাগে। কেউ কেউ আবার বলে ফেলতে পারেন, ভুয়া মফিজের কথা বলেন? ওইটা তো মফিজ, তার উপরে ভুয়া......দেশের শত্রু তো বটেই, গনতন্ত্রেরও শত্রু! বিদেশে বইসা খালি বড় বড় বুলি কপচায়! দেশে আইসা একটা তদন্ত রিপোর্ট বাইর কইরা দেখাক! তাইলে না বুঝুম কত্তো মুরোদ!!!

ছবিসূত্রঃ গুগল।


পুনশ্চঃ দু’টা বিষয়;

অনেকেই বিকল্পপথে ব্লগে আসার উপায় জানিয়ে হেল্প পোষ্ট দিয়েছিলেন। সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো হারিয়ে গিয়েছে। আমি তিনটা লিঙ্ক দিলাম। এখন থেকে আমার সব পোষ্টের শেষেই এটা কপি/পেষ্ট করবো। অন্যরাও চাইলে পোষ্টের শেষে দিতে পারেন। তাহলে এগুলো চোখের সামনেই থাকবে। যারা দুই একবার কষ্ট করে কোনমতে ব্লগে আসেন, তারা উপকৃত হলেও হতে পারেন।

ব্লগার মাহমুদুর রহমানের পোষ্ট (১৯ ফেব্রুয়ারী) view this link
ব্লগার মা.হাসানের পোষ্ট (২৮ ফেব্রুয়ারী) Click This Link
ব্লগার সামু পাগলা ০০৭ এর পোষ্ট (২৭ মার্চ) Click This Link

- আপনাদের বিনোদনের জন্য একটা গানের লিঙ্ক দিলাম। হেমন্ত মুখোপাধ্যয়ের গান। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন! https://www.youtube.com/watch?v=2JRnY0QNEqg
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×