somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াইতে আমরা জিততে পারবো তো!!!

১৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বৃটেনের সুপার স্টোরগুলোতে সারা বছরে সবচাইতে বেশী ভিড় হয় খৃষ্টমাস ইভের দিন। অনেকটা আমাদের দেশে চাদরাতের শেষমূহুর্তের কেনাকাটার মতো। লোকজন উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করে। এটা সেটা খুজতে থাকে। স্টোরের কাষ্টমার কেয়ারের লোকজনের মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা হয়ে যায়। শেল্ফগুলো দ্রুততার সাথে খালি হতে থাকে। এই অবস্থা প্রত্যেক বছরেই যেহেতু হয়, সবার একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকেই। তবে গত শুক্রবার রাতে যা হলো, তাকে এক কথায় নজীরবিহীন বলা যায়।

আমাদের শহরে টেসকো'র যে স্টোরটা আছে সেটা হলো 'এক্সট্রা' ক্যাটাগরির। টেসকো'র চার ক্যাটাগরির স্টোরের মধ্যে এগুলোর সাইজ সবচেয়ে বড়, বিশালই বলা যায়। এটাতেই আমি সবসময়ে শপিং করি। তো সেই স্টোরটা রাত ১২টার সময়ে বন্ধ করে দেয়া হলো।

ইংল্যান্ডের এই শহরটাতে আমি আছি প্রায় এক যুগের মতো। এই পুরো সময়টাতে আমার প্রধান কেনাকাটাগুলো এখানেই করেছি। কোন সময়েই, কোন অবস্থাতেই আমি এই স্টোরটাকে নির্ধারিত সময়ের বাইরে বন্ধ হতে দেখি নাই। শুক্রবার রাতে গিয়েছিলাম ১০ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে। খৃষ্টমাস ইভের দিন লোকজন ছোটাছুটি করলেও উৎসবের আমেজ থাকে। হাসিখুশিভাবে সবাই কেনাকাটা করে। সেদিন রাতে দেখলাম ভিন্ন চেহারা। লোকজন ভীত-সন্ত্রস্থ, আতংকিত চেহারায় কেনাকাটা করছে। কেউ হ্যাচ্চো দেয়া তো দুরের কথা, সর্দির মতো নাক টান দিলেও লোকজন এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ছে, যেন যক্ষা রোগীকে দেখছে চোখের সামনে! পরিচিত কাউকে দেখলেও নিরাপদ দুরত্বে দাড়িয়ে দু'টা কথা বলে কেটে পড়ছে, হ্যান্ডশেইক তো বহুত দুর কি বাত! ক্রেতারা পাগলের মতো কেনাকাটা করে, শেল্ফ খালি করে, স্টোর তচনচ করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছিল যে, স্টোর বন্ধ না করে আর কোন উপায়ও ছিল না। গত সপ্তাহেও যেই বৃটেনবাসীর ঢিলাঢালা ভাব ছিল, সেটা এমন আমুল বদলে যাওয়ার কারন কি?

কারন আর কিছুই না। বৃটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডোরিসের উপর করোনার হামলা! এই হামলা করে করোনা সবাইকে এই বার্তাই দিয়েছে যে, তোমরা যতোই হেলাফেলা করো না কেন, কেউই আমার আওতার বাইরে না, সে যতোই তুমি কেউকেটা গোছের হও না কেন! এটা যেন প্রমান করে দিল করোনা ভাইরাস আসলে কতোটা ক্ষমতাধর। যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর সারা দেশবাসীর স্বাস্থ্য দেখাশুনার ভার, তারই প্রধান ব্যক্তিও যখন এর থেকে নিস্তার পায় না, তখন রাম-শ্যাম-যদু-মধু কোন ছার!!!

এই পেনডেমিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার গনজমায়েত নিষিদ্ধ করতে চলেছে। সকল খেলাধুলার ইভেন্ট এবং রানীর বেশকিছু অনুষ্ঠান ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। স্কুলও বেসরকারীভাবে অনেক জায়গায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃটেনে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। ১,১৪০ টা নিশ্চিত কেইস, কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, সঠিক সংখ্যাটি হবে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ এর মধ্যে।

বৃটিশ এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী এলেক্স ক্রুজ জানিয়েছে, এই এয়ারওয়েজকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মী ছাটাই হতে পারে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড করোনা মোকাবেলায় সুদের হারে জরুরী পরিবর্তন (০.৭৫% থেকে ০.২৫%) এনেছে। অনেক অফিসই কর্মীদেরকে ঘরে বসে অনলাইনে অফিস করার প্রস্তুতি নিতে বলেছে (এদের মধ্যে আমাদেরটাও আছে)।

বৃটেনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু ধারনা দেয়ার চেষ্টা করলাম এই কারনে যে, এই দুর্যোগ মোকাবেলায় যতো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, সরকার এখানে নিচ্ছে। এর অনেকগুলোই সরকার নিতে বাধ্য হয়েছে বিরোধী দলের চাপে পড়ে। একটা শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি দেশের কল্যানে কতোটা জরুরী সেটা সময়ে সময়ে বোঝা যায়, যেমন এখন। তারপরেও সরকারের সমালোচনা, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা থেমে নাই। বিরোধীদল এখনও বলছে যে, সমস্যা মোকাবেলায় সরকার যথেষ্ট আন্তরিক না। প্রতি মুহুর্তেই সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে, সমালোচনা হজম করতে হচ্ছে। নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলন করে জনগনকে আপডেট দিতে হচ্ছে।

এদিকে আমাদের দেশের কি অবস্থা? সরকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে কতোটা সচেতন? দেশে প্রতিনিয়ত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলছি। তাদের অবস্থা, সেইসঙ্গে দেশের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছি। এসবের ফলে যে চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠছে তা কিন্তু মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।

আমাদের ঘন জন-বসতি, দুর্বল ইনফ্রা-স্টাকচার এবং ততোধিক দূর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জনগনের অসচেতনতা, সিন্ডিকেটেড অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ ইত্যোকার বিষয়গুলো মাথায় রেখে সরকারী তোড়জোড় আরো জোড়ালো হওয়া উচিত; নয় কি? কিন্তু হচ্ছে কি? আমি সবসময়েই আশাবাদী হতে চাই। আশাকরি সরকার বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে। কারন, একবার যদি ইটালী, কিংবা এমনকি বৃটেনের অবস্থাও আল্লাহ না করুন, দেশে হয়েই যায়, সেটা সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় শক্তিশালী অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত লোকবল কিংবা অর্থ প্রাচুর্য…..যাই বলেন না কেন, দেশে নাই; সে আমাদের মন্ত্রীরা যতোই বড় বড় কথা বলে রাজা উজীর মারুক না কেন! আমাদের দেশের সব সক্ষম লোক; মায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে কারোরই দেশের চিকিৎসা সেবার উপর ভরসা নাই। কিছু হলেই তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে দৌড়ান। তবে মজার ব্যাপার হলো, দেশের সাধারন মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে চুরির টাকায় বিদেশী চিকিৎসা সেবা নেয়া এ'বার কিন্তু সম্ভব নাও হতে পারে। কারন, যেসব দেশে তারা যান, সেসব দেশ এই রোগের চিকিৎসার জন্য তাদের এ'বার ঢুকতে দিবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কথাটা উনাদের মাথায় রাখতে হবে।

সেজন্যেই আমি এইবারে একটু বেশীই আশাবাদী যে, অর্থ মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে যে পন্চাশ কোটি টাকা ছাড় করেছে তা জনগনের প্রয়োজনেই ব্যয় করা হবে, নতুন কোটিপতি তৈরী কিংবা পুরানো কোটিপতিদেরকে আরো অর্থশালী করার জন্যে নয়।

আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রতিটা মানুষ নিরাপদে এবং সুস্থ শরীরে থাকুক, কায়মনোবাক্যে এটাই কামনা করছি।


ছবিতে দেখুন, টেসকো স্টোরের শেল্ফ দ্রুতই কোন অবস্থায় পৌছে যাচ্ছে!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×