
বেশ কিছুদিন আগে দ্য সানডে টাইমসে একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম। লেখক হিপোক্রেসির ধরন বোঝাতে গিয়ে একটা কৌতুকের অবতারনা করেছিল। কৌতুকটা এমন..........ছয় বছরের ছোট্ট জো তার বাবাকে গিয়ে বললো, ড্যাড, আমি গ্র্যান্ডমা'কে খুবই ভালোবাসি। তাকে কি আমি বিয়ে করতে পারি? বাবা বললো, নো মাই সান। ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং, তুমি আমার মা'কে বিয়ে করতে পারো না। ক্রুদ্ধ জো এর প্রত্যুত্তর, ইউ আর সাচ আ হিপোক্রেট!! তুমি আমার মা'কে বিয়ে করতে পারো, আর আমি তোমার মা'কে বিয়ে করতে পারি না!!!!!
ভাই এবং বোনসব!! জো এর অভিযোগ গুরুতর সন্দেহ নাই; তবে এই কৌতুকটাকে আবার আমার এই লেখার সাথে মনের ভুলেও রিলেইট করতে যাবেন না যেন!!!
গত ১৮ই আগস্ট আমি একটা পোষ্ট করেছিলাম ( কুত্তার লেজ কি কখনও সোজা হয়? আমার উপলব্ধি!!! )। তাতে তৃতীয় প্যারাতে লিখেছিলাম, পতিতা হাসিনা...........হে হে হে, দুষ্ট প্রকৃতির মনোভাবসম্পন্নরা নিশ্চয়ই ভাবছেন এটা আমি কি বলছি! হাজার হলেও হাসিনা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী; তার চরিত্রে তো আমি এমন কলঙ্ক লেপন করতে পারি না, নয় কি? তাহলে আরেকটা বাগধারা বলি, ''যার মনে যা, ফাল দিয়া উঠে তা''। আমি 'পতিত' এর স্ত্রী-লিঙ্গ হিসাবে পতিতা বলেছি। এরশাদকে বলা হতো পতিত স্বৈরাচার, তার ফিমেইল রুপ হলো পতিতা স্বৈরাচার, আপনারা যা ভাবছেন তা না। কথা কি কিলিয়ার, নাকি ভেজাল আছে? আমার এই পোষ্টে মাননীয় মডুর একটা ''লাইক'' আছে, অর্থাৎ লেখাটা নির্বাচিত পাতায় গিয়েছে। কাজেই নিশ্চিতভাবেই মডু সম্পূর্ণ লেখাটা পড়েই লাইক দিয়েছে। মডু কিংবা অন্য কেউ আমার ''পতিতা'' সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় কোন আপত্তিও তোলে নাই।
তারপরে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আরেকটা পোষ্ট দেই ( নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর ৩৮ দিন!!!! ) তাতে লিখি......... পতিতা স্বৈরাচার হাসিনাকে লাথি মেরে দেশ থেকে ভাগিয়ে দেয়ার পর মেঘে মেঘে খানিকটা বেলা হলো। অজানা কারনে মডু'র হঠাৎ হাসিনা-প্রেম চাগিয়ে উঠায় ''পতিতা'' শব্দটা সরিয়ে দিতে বলে (২৭নং মন্তব্য)। উত্তরে আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলাম, কিন্তু সেটার ধার না ধরে ২৯নং মন্তব্যে আমাকে বেশ খানিকটা জ্ঞান বিতরণ করলো। সেটা মডু করতেই পারে। স্বল্প-জ্ঞানীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করা তার মহান দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তবে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অতর্কিত এই অমুল্য জ্ঞান বিতরণে আমার খানিকটা বদহজম হলো। কেন জানি মনে হলো কোন স্বৈরাচারের ভাষণ শুনছি!!! গোদের উপর বিষফোড়ার মতো এক আবাল মাল্টি মডু'র কথার সূত্রে উত্তেজিত এবং উৎসাহিত হয়ে আমাকে বাংলা ভাষায় কিছু শব্দের প্রয়োগ নিয়েও জ্ঞান দেয়ার সুযোগ পেয়ে গেল (৩০ নং মন্তব্য)। বিনা বাক্যব্যয়ে এতো সহজে কোন কিছুকে ছেড়ে দেয়া আমার স্বভাবে নাই, কিন্তু কেন জানি সেই মুহুর্তে আমার মনে হলো..........এনাফ ইজ এনাফ!! যথেষ্ট হয়েছে!!! এইবার সামু'তে লেখালেখির যবনিকাপাত ঘটানো উচিত। এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরো বেশকিছু কারন অবশ্য আছে, তবে সেগুলোর উল্লেখ না করে ভাবলাম নির্দোষ একটা পোষ্ট দিয়ে চুপচাপ নিজেকে আস্তে-ধীরে গুটিয়ে ফেলাই শ্রেয়; সবকিছু চুকেবুকে যাক!!!
কিন্তু না, মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক!! আমি ভুল ছিলাম। সবকিছু চুকেবুকে যায় নাই। সামু'র ফেইসবুক পেইজে একটা পোষ্ট দেখে বুঝলাম যা আমি বলি নাই বা মিন করি নাই, সেটাকে উদ্ধৃত করে যদি পেইজের এডমিন, যিনি কিনা আবার ব্লগের মডু, এমন পোষ্ট দেয় তাহলে যারা শুধুমাত্র আমার ''নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর ৩৮ দিন!!!!'' পোষ্টটা পড়েছেন, তারা ভুল বার্তা পাবেন। কাজেই আমার তরফ থেকে একটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়াটা অতি আবশ্যক হয়ে দাড়ায়।

আলোচ্য পোষ্টের স্ক্রীণশটের মিথ্যা অংশগুলো আমি আন্ডারলাইন করে দিলাম। কেন সেগুলো মিথ্যা, তা আগেই ব্যাখ্যা করেছি। আমার নামে এই ধরনের মিথ্যাচারের কি বিশেষ কোন কারন আছে? এখন তো মনে হচ্ছে আছে। আচ্ছা বাদ দেন, বরঞ্চ প্রসঙ্গক্রমে আরো কিছু কথা বলি।
যে কোনও ভাষায় যে কোনও শব্দের নতুন নতুন প্রয়োগ সর্বজনবিদিত। বাংলা ভাষাও কোন ব্যতিক্রম না। হাজারটা উদাহরন চাইলেই দেয়া যায়। ইন ফ্যাক্ট এসব ব্লগারগন সবাই জানেন, তাই আর উদাহরন দিয়ে পোষ্ট বড় করার মানে নাই। এই ব্লগেই আন্দোলনের পক্ষের ব্লগারদেরকে ক্রমাগত পাকী বংশধর, রাজাকার ইত্যাদি ট্যাগিং দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনে অংশগ্রহন করা ছাত্র-জনতাকে পাকী কমান্ডো, পাকীদের জারজ সন্তান, পাকী বীর্য, জঙ্গী ইত্যাদি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। ড. ইউনুসকে ক্রিমিনাল, জালিয়াত, চোর বলা হচ্ছে। ব্লগ টিমের এইসব ব্যাপারে কোন হেলদোল নাই। একটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে আর ইনডাইরেক্টলি একজন ব্লগারকে 'মাদারচোদ' বলা কতোটা শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ? ব্লগে এইসব কদর্য শব্দের প্রয়োগ অহরহ দেখা যায় কিন্তু ''আওয়ামী পতিতা স্বৈরাচার'' (আবারও বলি, এই পতিতা সেই পতিতা না) বলা যায় না। এই হিপোক্র্যাসি হজম করা আমার পক্ষে সম্ভব না। খুবই দুঃখজনক!!!
এখন কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, সেটা ব্লগারগনই যার যার বিবেচনা দিয়ে ঠিক করুক। এপার-ওপার বাংলার কিছু আবাল ক্রমাগত মিথ্যাচার আর গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই আন্দোলনের সময় থেকে। বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তাদের কিছুই বলা হচ্ছে না। আর হাসিনাকে পতিতা স্বৈরাচার বলাতে পুচ্ছে আগুন লেগে গেলো, তাও যদি আক্ষরিক অর্থে ''পতিতা'' বলা হতো, তখন না হয় কথা ছিল। আসলে লেন্জা ইজ ভেরী ডিফিকাল্ট টু হাইড!!! একসময়ে না একসময়ে বেরিয়েই আসে।
ব্লগটিমের এই পোষ্ট পছন্দ না হলে সরিয়েও ফেলতে পারে। সরালে সেটা হবে তাদের সত্যকে নিতে না পারার মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তবে তাদের রিপার্কাশন যাই হোক না কেন, আমার মনে হয়েছে পুরো ঘটনার একটা যথাযথ ব্যাখ্যা আমার পক্ষ থেকে দেয়া উচিত। সেজন্যেই এই পোষ্ট।
সবাই ভালো থাকবেন। নতুন বছরে নতুন করে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে আমাদের সবার জীবন হোক আনন্দময়, চাপহীন আর মুক্ত। আল্লাহ হাফেজ।
ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


