
নূরুজ্জামান:: যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এমপি শাওনের ভায়রা। ঘনিষ্ঠ এ সম্পর্কের কারণেই তিনি ইব্রাহিম হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের নাম বাদ দিয়েছেন। নিহত ইব্রাহিমের স্বজন ও গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মো. আবদুল হালিম আসামি এমপি শাওনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এমপি শাওনের বাড়ি বরিশালে। কিভাবে তার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক হবে। তিনি আরও বলেন, ইব্রাহিম হত্যা মামলার তদন্তে নেমে আমি তিন থেকে চার দফায় এমপি শাওনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার বক্তব্য রেকর্ড করেছি। এর বাইরে বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছি। কোনভাবেই এ হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাইনি। তাই চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাকে সাক্ষী করা হয়েছে। আবদুল হালিম আরও বলেন, আসামির তালিকায় এমপি শাওনের নাম না থাকলেও অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বজন ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার আবদুল হালিম ও ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি এমপি শাওনের বাড়ি পৃথক জেলায় হলেও দু’জনের মধ্যে আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এমপি শাওনের স্ত্রীর আপন মামাতো বোনকে বিয়ে করেছেন খন্দকার আবদুল হালিম। সূত্র জানায়, আবদুল হালিমের বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বাহিনীর সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। একইসঙ্গে তার আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউনুছ আলীও একইসময়ে চাকরিতে যোগ দেন। সমপ্রতি ইউনুছ আলী অবসরে গেলেও আবদুল হালিম মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের চাকরির বয়স বৃদ্ধির কারণে এখনও চাকরি করছেন। সূত্র জানায়, এমপি শাওনের খালা শাশুড়িকে বিয়ে করেছেন খন্দকার আবদুল হালিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউনুছ আলী। এ কারণে তারা দু’জনেই এমপি শাওনের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। এছাড়া আবদুল হালিম ও তার স্ত্রী আগে থেকেই মামাত-ফুপাত ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে। ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি ও তদন্ত কর্মকর্তার মধ্যে এমন সুসম্পর্ক থাকার কারণেই কৌশলে চার্জশিট থেকে এমপি শাওনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বুধবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইব্রাহিম হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ চার্জশিটে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হচ্ছে- এমপি শাওনের গাড়িচালক কামাল হোসেন ওরফে কালা, ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা শিমুল, শাওনের এলাকার কর্মী মাজহারুল ইসলাম মিঠু, শাওনের বডিগার্ড দেলোয়ার, ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল ও কর্মী নূর হোসেন। আদালতে জমা দেয়া চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ইব্রাহিমের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া, রক্তসহ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত পানি দিয়ে ধোঁয়া-মোছা, পিস্তলের হাতের ছাপ নষ্ট ও কাছাকাছি হাসপাতাল রেখে সদর ঘাটের সুমনা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সবকিছুই জানতেন এমপি শাওন। সূত্র জানায়, ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা যে কৌশলে হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করেছে ঠিক একই কৌশলে আসামির তালিকা থেকে এমপি শাওনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাই এ চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি দাখিল করা এ চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। চার্জশিটে আরও উল্লেখ আছে, ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের পর এমপি শাওন চালক কামাল হোসেনকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে নিজেই গাড়ি চালান। এ সময় তার সঙ্গী হিসেবে মাজহারুল ইসলাম ও বডিগার্ড দেলোয়ারসহ অন্যান্যরা ছিলেন। এমপি শাওন তাদের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তারা বলেছিলেন, পিস্তল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়ার সময় ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হন। পরে এমপির সামনেই আসামিরা পিস্তলে খুনির আঙ্গুলের ছাপ নষ্ট করেন। পরে পিস্তলটি যথাস্থানে রেখে দেয়ার নির্দেশ দেন এমপি। গাড়িতে বসেই এমপির নির্দেশে চালক কামালকে ফোন করেন দেলোয়ার। দেলোয়ারের ফোন ব্যবহার করে কথা বলেন তিনি। পথে কাকরাইল মোড়ে পৌঁছে মাজহারুল, সোহেল ও নূর হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন এমপি শাওন। তখন দেলোয়ার ও গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে রামপুরায় যান এবং চালক কামালকে গাড়িতে তোলেন। এমপি তাদের নিয়ে ফের কাকরাইল মোড়ে যান। সেখানে কামালের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ দিয়ে তিনি এক যুবলীগ নেতার ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে অন্যত্র চলে যান। ২০১০ সালের ১৩ই আগস্ট সন্ধ্যায় ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পাজেরো জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪-১৪০০)’র ভেতরে রাখা তার লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে মারা যান যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম আহমদ।
সূত্র: মানবজমিন