ঙ মসজিদ আল্লাহর পবিত্র ঘর। ইবাদাতের সর্বোত্তম স্থান। ধর্মীয় স্থান হিসেবে এর মর্যাদাবোধ রয়েছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক যথাযথ সন্মান করে মসজিদকে। শান্তি, শৃঙ্খলা আর নিরাপত্তার স্থান হিসেবে এর তুলনা নেই। মারামারি, হানাহানি আর সহিংসতার জায়গা নয় পবিত্র মসজিদ। তেমনি খতীব পদটি বড়ই মর্যাদাপূর্ণ, সন্মানজনক। জাতীয় মসজিদের খতীব হন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এমন মহান ব্যক্তিকে নিয়ে মসজিদে মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা এমনকি জুতো পেটাপেটি কারো কাম্য হতে পারে না। গত টানা তিন সপ্তাহের খতীবকেন্দ্রিক সহিংসতা জাতি হিসেবে আমাদেরকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছে। চরম লজ্জিত করেছে বিশ্ব দরবারে।
মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি মহাখালির গাউসুল আযম মসজিদের খতীব প্রফেসর মাওলানা সালাহ উদ্দীনকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতীব পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জাতীয় মসজিদের মুসলি্লদের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন খতীবকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা-কল্পনা এমনকি পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন নামে বিবৃতি প্রদান করা শুরু হয়। ৯ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতি নূর ঊদ্দীন খুৎবা দিতে মিম্বরে উঠলে ওঁৎ পেতে থাকা কয়েকজন মুসলি্ল চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করেন, নতুন খতীব নিয়োগ হয়েছেন। উনি নামায পড়াবেন কেন? আরেক দল মুসলি্ল এঁদের প্রতিবাদ জানালে উভয় পক্ষের মাঝে কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি এমনকি জুতো পেটাপেটির ঘৃণ্য ঘটনাও ঘটে। আরো দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, কয়েকজন মুসলি্ল সম্মানিত খতীবকে লক্ষ্য করে মিম্বরের দিকে জুতো নিক্ষেপ করে। নতুন খতীব নিয়োগের পর তিনি নামায পড়াতে আসার কারণ সম্পর্কে মুফতি নূর ঊদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি, সরকারের নির্দেশ মানতে হয়। নতুন খতীব নামায পড়ানোর জন্য সরকারকে বলেছিলাম। আমাকে জানানো হলো তিনি আজ আসবেন না। আমাকে নামায পড়াতে হবে। আমি মিম্বরে উঠতেই ওরা গোলমাল শুরু করে দিল। আমাদের সচিব সাহেব বললেন, নতুন খতীব আজ আসেন নি। ভারপ্রাপ্ত খতীব নামায পড়াবেন। তবু তারা বিশৃঙ্খলা বন্ধ করলো না। তারা প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে মসজিদে এসেছেন। পরবর্তী শুক্রবারে নতুন খতীব মাওলানা সালাউদ্দীন কড়া পুলিশি প্রহরার মধ্য দিয়ে বায়তুল মুকাররমে জুমআর নামায পড়ান। ভারপ্রাপ্ত খতীব মাওলানা নূরুদ্দীন মুসলিল্লদের সামনে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। পত্রিকার রিপোর্ট মতে, নামাযের অনেক পূর্ব থেকে নতুন খতীবের পক্ষ-বিপক্ষের লোকজন মসজিদে জড়ো হতে থাকেন। বিভিন্ন খানকা মাজার ও আখড়া থেকে বেশি আসেন তার পক্ষের লোক। কিছুদিন আগে প্রচুর পরিমাণ মদ, ইয়াবা, ভায়াগ্রাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ভণ্ডপীর হাবীবুল্ল্লাহ কাচপুরীকে নতুন খতীবের সাথে দেখে সাধারণ মুসলি্লরা শংকিত হয়ে পড়েন। খতীব খুৎবা দিতে চাইলে বিপক্ষের মুসলি্লরা প্রতিবাদ জানান। এতে দু' পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একদল মুসলি্ল খতীব ও তাঁর সঙ্গে থাকা হাবীবুল্লাহ কাচপুরীকে লক্ষ্য করে জুতো নিক্ষেপ করেন। সকাল থেকে মসজিদের ভেতরে ও বাইরে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বিক্ষোভকারীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে যান। তাঁরা মসজিদের উত্তর গেট সংলগ্ন রোডে জুমআর নামায আদায় করে নতুন খতীবের অপসারণের দাবিতে জুতো হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো গত শুক্রবারও (২৩, ০১, '০৯) নবনিযুক্ত খতীবের ইমামত নিয়ে জাতীয় মসজিদে তুলকালাম কাণ্ড। পুলিশি নিরাপত্তায় নামাযের সময় নতুন খতীব খুৎবা দিতে শুরু করলে জনৈক মুসলি্ল প্রতিবাদ জানান। এতে খতীব সমর্থকরা তাকে ধাওয়া করেন। ঈমান-আক্বীদা হেফাযত কমিটির ব্যানারে একদল মুসলি্ল আলাদা ইমামের ইমামতিতে নামায আদায় করতে চাইলে আবারো সৃষ্টি হয় অপ্রীতিকর ঘটনা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন খতীবের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। বারবারের সহিংসতায় অন্তত পঞ্চাশ জন মুসলি্ল আহত হন। সংক্ষিপ্ত নামায শেষে পুলিশি নিরাপত্তায় বের হয়ে যান নতুন খতীব প্রফেসর সালাউদ্দিন।
লক্ষণীয় যে, ১৯৮৪ থেকে ২০০৭ এর অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় মসজিদের খতীবের দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক। তাঁর ইন্তিকালের পর ২০০৭ এর অক্টোবর হতে ২০০৮ এর শেষ অবধি ভারপ্রাপ্ত খতীবের দায়িত্ব চালিয়ে যান সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি নূরুদ্দিন আহমদ। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি খতীব পদে মাওলানা সালাউদ্দীনকে নিয়োগ দিলে মুসলি্লদের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র মতপার্থক্য। একাংশ তাঁকে পথভ্রষ্ট, বিদআতী, মাযারপুজারি অভিহিত করে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। অপরাংশ তাঁকে যোগ্য আলিম বলে তাঁর পেছনে নামায পড়তে সম্মতি প্রকাশ করেন।
গুঞ্জন রয়েছে যে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আপনজন বলে পরিচিত একটি দৈনিকের মালিক দীর্ঘ চার বছর যাবৎ মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে সহায়তা দিয়ে আসছেন। গত জাতীয় নির্বাচনেও ইসলামী দলের নামে বেশ ক'টি আসনে প্রার্থী দেয়ার ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগের বিজয় ত্বরান্বিত করেছেন তিনি। সর্বোপরি এরশাদকে আওয়ামী লীগের কাছে টানতে বড় ধরণের অবদান রয়েছে তাঁর। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটের বিশাল বিজয়ের পর তিনি তাঁর অবদানের প্রতিদানস্বরূপ আওয়ামী লীগের সহায়তায় বিদায়ী ফখরুদ্দীন সরকারের কাছ থেকে বায়তুল মুকাররমের খতীব ও ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালকের পদ দু'টি বাগিয়ে নিতে তদবির শুরু করেন। আরো শোনা গেছে যে, পদ দু'টিতে যাদের বসাতে চান তারা ধর্মীয়ভাবে তাঁর সতীর্থ হলেও রাজনৈতিকভাবে যে আওয়ামীপন্থী সে কথাও জানিয়ে দেন। এই সূত্র ধরে খতীবের মর্যাদায় আসীন হন সালাউদ্দীন। এসব গুঞ্জন দেশের হক্কানী আলিম-উলামা ও বায়তুল মুকাররমের মুসলি্লদের আলোড়িত করে। '৯৬ সালের ১৫ই অগাস্ট উপলক্ষে জাতীয় মসজিদে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোকে কেন্দ্র করে তৎকালীন খতীব মাওলানা উবায়দুল হকের সঙ্গে সরকারের আচরণ এবং সরকারি লোকদের দ্বারা মসজিদের অবমাননাকর ঘটনাগুলো বারবার আলোচিত হতে থাকে তাদের মাঝে। নতুন খতীবকে ঠেকাতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন তাঁরা। বিষয়টি টের পেয়ে খতীব সমর্থকরাও সরকারের সহায়তায় এগুতে থাকেন। এতে বারবার ভূলুণ্ঠিত হয় আল্লাহর ঘর মসজিদের মর্যাদা।
আমরা বিশ্বাস করি, মসজিদ হিসেবে বায়তুল মুকাররম অত্যন্ত পবিত্র স্থান। আর জাতীয় মসজিদ হিসেবে তার রয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। একে দলীয় প্রভাব থেকে তাই মুক্ত রাখাই যুক্তিসঙ্গত। তেমনি খতীব পদটিতে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্মান নিহিত। দলীয়করণের দ্বারা পদটির মর্যাদা হানি করা কোনো বিবেকবানের কাম্য নয়। তাছাড়া খতীব হবেন জ্ঞানে-গুণে, ইলমে-আমলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। জাতিকে সঠিক পদনির্দেশনা দেয়া যার অন্যতম দায়িত্ব। বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য কাউকে এ পদে চাপিয়ে দিলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আশা করতে পারি না, কারো অন্যায় একগুঁয়েমির কারণে দেশে নতুন করে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হোক আর আমাদের জাতীয় জীবনে দেখা দিক আরেকটি অসুন্দর অধ্যায়।
বিলাল আহমদ ইমরান : প্রাবন্ধিক। শিক্ষক; শাহবাগ জামিয়া, জকিগঞ্জ, সিলেট।
আলোচিত ব্লগ
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিল্টন সমাদ্দার
অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন