somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শিক্ষক

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিকক্ষতা। এক মহান ব্রত। মহান এ জন্যেই, শিক্ষক একান্ত নিষ্ঠা ও প্রাণান্ত শ্রমে যে কাজ করে চলেন দিনের পর দিন, বিরামবিহীন-- সে তাঁর কাজ নয়; নিখিল মানুষের। শিক্ষক কখনো ঘুমিয়ে পড়েন না-- সতত জেগে থাকেন, কেবল জাগাতে থাকেন। সত্তার জমিন চাষ করে স্বপ্নের বীজ বুনেন। সুন্দরের স্বপ্ন। জীবনের স্বপ্ন। অন্ধকারের বন্ধ দুয়ারে ব্যাকুল কর হেনে ভেতরের মানুষকে জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন। মানুষ জাগছে, কারণ তার হাত ধরে আছেন শিক্ষক। মানুষ ছুটছে, আলোকিত জীবনের দিকে ছুটছে-- কেননা তার সমুখে চলেছেন শিক্ষক। মানুষ মানুষ হয়ে উঠছে, উঠতেই হবে-- কারণ শিক্ষক তার চেতনার কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন মহাজীবনের বারতা।

এ তেমনই এক স্বপ্নকর শিক্ষকের গল্প-- যাঁর ভুবনে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। কিংবা একজন মিস্ত্রির গল্প-- যিনি শুদ্ধ সমাজ ও সভ্যতার ভিত তৈরিতে খেটে গিয়েছেন জীবনভর। এ এক মহান পরিচায়কের কথকতা-- যিনি আমার নিভৃত ‘আমি’কে চিনিয়ে দিতে চেয়েছেন। সত্যের ছায়ায় নির্মাণ করেছেন এক টুকরো প্রশান্ত আঙিনা, আমরা তাতে জড়ো হয়েছি, হয়ে, ঘুরে দাঁড়িয়েছি আত্মসত্তার মুখোমুখি।

যখন প্রাণের উদ্ভব হলো, দরকার হলো তার বিকাশ-- তখনই শিক্ষার শুরু। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেই তাকে শেখাতে লাগলেন। মানুষ ক্রমে ছড়িয়ে পড়লো, সেই সঙ্গে শিক্ষাও। নবীরা এলেন শিক্ষক হয়ে, যুগে যুগে। সে শিক্ষা বোধের সঞ্চার ও চেতনার জাগৃতির শিক্ষা। জীবনের মূল্য ও তাৎপর্য উপলব্ধির প্রয়াস। মনুষ্যত্বের মূল্য অবধারণের চেষ্টা। শুধুই ইসলামের শিক্ষাদর্শন নয়, আসলে এ-ই প্রকৃত শিক্ষা। চেতনা-লক্ষ্য-তাৎপর্য-অবধারণ বাদ দিয়ে যতো প্রাতিষ্ঠানিকতা, সব বৃথা। এ উপমহাদেশে দুষ্ট দুশো বছর শিক্ষাকে প্রথায় নামিয়ে এনেছে। আত্মার জায়গায় বস্তু হয়েছে জ্ঞেয়। আমরা এ প্রথারই সেবা করছি। কিন্তু প্রথা কি শাহ্ ওয়ালিউল্লাহকে জন্ম দিয়েছে, কোনোকালে?

কওমী মাদ্রাসাগুলো ঐশী মৌল ও প্রথাগত যৌগের এক শংকর রূপ। তবে তার শিক্ষার মূল লক্ষ্যে কোনো কুয়াশা নেই। এ ইতিবাচকতা সম্বল করে মাদরাসাগুলো এখনো মানুষ তৈরির কাজ করছে। শায়খ আবদুল হাই সে কর্মধারারই এক সফল কর্তা। আদর্শ শিক্ষক এবং প্রাজ্ঞ শিক্ষা সংগঠক, দু’ ক্ষেত্রেই তিনি একজন কীর্তিমান ব্যক্তি। জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মতো বড়ো একটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ, ব্যয়ভার সঙ্কুলান, পরিচালনা ও উন্নয়নে তাঁর নিরলস শ্রম ও নিষ্ঠার আখ্যান গল্পের মতোই মনে হবে। নারী ও শিশুশিক্ষার জন্যেও তিনি পৃথক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।

আজ এতো বছর পরে, তাঁর পাঠদানের ধরন নিয়ে যখন ভাবি, আল্লাহর রাসূলের ছায়া খুজেঁ পাই। নিজে অভ্যস্ত নন এমন কোনো সদুপদেশ তিনি দিতেন না। কথা কম বলতেন, তবে বলতেন খুব গুছিয়ে। সংযম ও পরিমিতিবোধ রক্ষার পাশাপাশি জিজ্ঞাসিত বিষয়ে পূর্ণ ধারণা দিতে চেষ্টা করতেন; সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্ভাব্য অন্য প্রশ্নগুলোও নিজেই উত্থাপন করে উত্তর দিতেন সাবলীলভাবে। রসিকতা করে কঠিন বিষয়ও প্রাণবন্ত করে তুলতেন। শব্দবিশ্লেষণে খুবই পারদর্শী ছিলেন। কখনো অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলতেন না। ছাত্রদের আগ্রহের প্রতি লক্ষ রাখতেন। রাসূলচরিত ‘শামাইলে তিরমিযী’ কিতাবটি পড়েছি তাঁর কাছে, ব্যাখ্যাসাপে গ্রন্থ-- কিন্তু তাঁর একটানা বক্তৃতা শুনতে শুনতে কখনো বিরক্ত হয়েছি বলে মনে পড়ে না।

কোনো ছাত্র অসুস্থ শুনলে তিনি নিজেই দেখতে ছুটে আসতেন, এমনকী বার্ধক্যে নুয়ে পড়া বয়সেও। ছাত্রদেরকে নিজের সন্তান ভাবতেন। এমন স্নেহপরায়ন শিক্ষা-পিতার জন্যে আমাদের শ্রদ্ধানত হৃদয় উৎসর্গিত হোক। হে আল্লাহ, তাঁকে অনন্ত জীবনে অফুরন্ত শান্তি দাও!

বিলাল আহমদ ইমরান ; শিক্ষাপরিচালক : শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া ক্বাসিমুল উলূম, জকিগঞ্জ, সিলেট। ই-মেইল : [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×