somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কবিতা পু্রোনো হয়না-পর্ব ১০

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সব পর্ব একসাথেঃ
যে কবিতা পুরোনো হয়না-পর্ব সাকুল্য

দীর্ঘদিন বিরতির পর আবার কবিতা পোস্ট। ইতোমধ্যে পদ্মা, মেঘনা, কীর্তনখোলা কিংবা অলকানন্দায় অনেক জল গড়িয়েছে, পৃথিবী তার অক্ষের পথে ঘুরে এসেছে একবার। অনেক পছন্দের ব্লগার যারা নিয়মিত পাঠক ছিলেন কবিতা’র, ব্যক্তিগত জীবনের চাপে কিংবা অভিমানে ব্লগ ছেড়ে দূরে আছেন। এসেছেন অনেক নতুন ব্লগার। মাঝখানে যে অল্প সময়ের ব্যবধান, তার সম্যক দূরত্ব যেন কুড়ি বছরকেও হার মানায়! সে যাই হোক, এই পোস্টটা আরেকটা ক্ষুদ্রতম প্রচেষ্টা নতুন ও পুরাতনের মাঝে সেতুবন্ধন গড়ে দেবার। অথবা, হৃদি’র মতো ইচ্ছেরাও ভেসে যাক অলকানন্দার জলে!

এ পর্বের কবিতাগুলোঃ
==============

৫৬. হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে-জয় গোস্বামী
৫৭. আমি অনেক কষ্টে আছি-আবুল হাসান
৫৮. ক্যাঁকটাস তুমি-সুমন চট্টোপাধ্যায়
৫৯. চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
৬০. প্রিয়তমাসু-সুকান্ত ভট্টাচার্য


৫৬. হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলেঃ
এই কবিতাটা শুনেছিলাম সম্ভবত কোন এক একুশে বইমেলায়। কবিতা উৎসবে। ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়ের উদার কণ্ঠে সেদিন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে যেন নেমেছিলো অলকানন্দার ঢেউ।

হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে
-জয় গোস্বামী

অতল তোমার সাক্ষাত পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে

করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে তাকে খুঁজে বার করো

করেছো অতল করেছিলে;পরে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল-ভেসে তো যেতই মনে না করিয়ে দিলে;
-‘পড়ে রইল যে’, পড়েই থাকতো সে লেখা তুলবে বলে

কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে !

৫৭. আমি অনেক কষ্টে আছিঃ
আটপৌঢ়ে জীবনের টানাপোড়েন আর কিছু সহজিয়া স্মৃতি। আমাদের জীবনের চেয়ে আলাদা কিছু কি? এরকম প্রাচীন অনুভূতি কি মাঝে মাঝে একাকীত্বকে তাড়া করেনা!

আমি অনেক কষ্টে আছি
-আবুল হাসান

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে অমন কেন যত্ন করে
লাগিয়ে দিতে ?
অমন কেন শরীর থেকে আসতে আমার
ক্লান্তিগুলো উঠিয়ে নিতে ?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে ?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতন তুমি উড়িয়ে নিতে ?
বেলজিয়ামের আয়্নাখানি কেন তুমি ঘোর না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে ?
রেখে দিতে ?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম,মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে

কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা ...
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি, কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝলে যুথী,
হাসি খুশী উড়নচন্ডী মানুষ আমার তাইতো এখন খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু ?
আমি অনেক কষ্টে আছি, কষ্টে আছি;
কষ্টে আছি আমি অনেক।

৫৮. ক্যাঁকটাস তুমিঃ
এই কবিতার শেষ চার লাইন শোনেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। ফিডব্যাকের ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ এযাজ লবামের ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়ের ভরাট কণ্ঠের সেই উদাত্ত সুর!

ক্যাঁকটাস তুমি
-সুমন চট্টোপাধ্যায়

ক্যাকটাস তুমি কেঁদোনা
যীশুর মুকুটে কাঁটা
ছিলো তবু তার রক্তে
এসেছে জোয়ার্-ভাটা
পাথর তুমি কেঁদোনা
তথাগত তিনি স্থাণু
তাঁর ধ্যানস্থ রক্তে
চরাচর নতজানু
আকাশ তুমি কেঁদোনা
তোমার'ই মত ফাঁকা
অনেকের বুকে কাঁদছে
বিবর্ণ বেঁচে থাকা
ইতিহাস তুমি কেঁদোনা
পরিবর্তন আসে
চিরকান্তির ভাবনা
তোমাকেই ভালবাসে
বন্ধু তুমি কেঁদোনা
আমার'ও কান্না আছে
কাঁদিনা তোমারি জন্য
তুমি ভেসে যাও পাছে ।

৫৯. চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়ঃ
আবারও সেই রুদ্র। আবারও সেই বঙ্গাব্দ-১৪০০। আবারও সেই ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়!

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়
-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।
জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-
জীবন সুন্দর
আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র
সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর
আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা
তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!
বিদায়ের সেহনাই বাজে
নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
এই যে বেঁচে ছিলাম
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়
সবাইকে
অজানা গন্তব্যে
হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি
অজান্তেই চমকে ওঠি
জীবন, ফুরালো নাকি!

৬০. প্রিয়তমাসুঃ
সুকান্ত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের কিংবদন্তী কিশোর কবি। প্রতিবাদী। অজর, অমর। মাত্র ২১ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণের আগেই তিনি লিখে গেছেন-
“দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা!”

প্রিয়তমাসুঃ
-সুকান্ত ভট্টাচার্য

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক’রে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়।
সুদূর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
- ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।

আজ দেহে আমার সৈনিকের কড়া পোশাক,
হাতে এখনো দুর্জয় রাইফেল,
রক্তে রক্তে তরঙ্গিত জয়ের আর শক্তির দুর্বহ দম্ভ,
আজ এখন সীমান্তের প্রহরী আমি।
আজ নীল আকাশ আমাকে পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ,
স্বদেশের হাওয়া বয়ে এনেছে অনুরোধ,
চোখের সামনে খুলে ধরেছে সবুজ চিঠিঃ
কিছুতেই বুঝি না কী ক’রে এড়াব তাকে?
কী ক’রে এড়াব এই সৈনিকের কড়া পোশাক?
যুদ্ধ শেষ। মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি,
চোখে এসে লাগছে তারই শীতল হাওয়া,
প্রতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে আসে হাতের রাইফেল,
গা থেকে খসে পড়তে চায় এই কড়া পোশাক,
রাত্রে চাঁদ ওঠেঃ আমার চোখে ঘুম নেই।
তোমাকে ভেবেছি কতদিন,
কত শত্রুর পদক্ষেপ শোনার প্রতীক্ষার অবসরে,
কত গোলা ফাটার মুহূর্তে।
কতবার অবাধ্য হয়েছে মন, যুদ্ধজয়ের ফাঁকে ফাঁকে
কতবার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনার অঙ্গারে
তোমার আর তোমাদের ভাবনায়।
তোমাকে ফেলে এসেছি দারিদ্র্যের মধ্যে
ছুঁড়ে দিয়েছি দুর্ভিক্ষের আগুনে,
ঝড়ে আর বন্যায়, মারী আর মড়কের দুঃসহ আঘাতে
বাব বার বিপন্ন হয়েছে তোমাদের অস্তিত্ব।
আর আমি ছুটে গেছি এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধক্ষেত্র।
জানি না আজো, আছ কি নেই,
দুর্ভিক্ষে ফাঁকা আর বন্যায় তলিয়ে গেছে কিনা ভিটে
জানি না তাও।
তবু লিখছি তোমাকে আজঃ লিখছি আত্মম্ভর আশায়
ঘরে ফেরার সময় এসে গেছে।
জানি, আমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা ক’রে নেই
মালায় আর পতাকায়, প্রদীপে আর মঙ্গলঘটে;
জানি, সম্বর্ধনা রটবে না লোক মুখে,
মিলিত খুসিতে মিলবে না বীরত্বের পুরস্কার।
তবু, একটি হৃদয় নেচে উঠবে আমার আবির্ভাবে
সে তোমার হৃদয়।
যুদ্ধ চাই না আর, যুদ্ধ তো থেমে গেছে;
পদার্পণ করতে চায় না মন ইন্দোনেশিয়ায়
আর সামনে নয়,
এবার পেছনে ফেরার পালা।
পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক,
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে।
প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক’রে পেলাম কী? উত্তর তার-
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়,
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব,
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র;
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা।
আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
সে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।।
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×