মানুষের সংষ্কারমূলকস্বভাবজাতই হচ্ছে সবকিছু নেগেটিভলি ধরে নেয়া। আপনি হ্য়ত ভালোকিছু বলতে গিয়ে ধরাও খেতে পারেন। বলা হতে পারে আপনি একজন স্বার্থপর, হাস্যচরিত্রের রসভান্ডার কিংবা বিনোদনের যথার্ত আইডল, এবং ইত্যাদি....ইত্যাদি। আপনি যদি রাগ করেন আর উল্টো রিয়েক্ট করেন, তাহলে আপনি নিস্বন্দেহে ধরে নিন, আপনি হেরে গেছেন। অর্থাৎ জয়ের চূড়ায় পৌঁছার আগে আপনি পরাজিত বরণ করে নিয়েছেন। আপনি এই নিয়ে হয়ত মাথাও গামাতে চাচ্ছেন না। বরং আবারও অদ্বিতীয় প্রমাণ করতে যুক্তিপ্রয়োগে ব্যস্ত হতে চলেছেন, যা সততার এবং মনুষ্যত্বের দিক দিয়ে যথেষ্ট সুন্দর দেখাই না। আমরা যুক্তি দিয়ে সত্যতাকে তুলে ধরি, তবে ভালো হয় যদি নিজেকে আগে মনষ্ককরা যায়, আমি আসলেই কি বলতে যাচ্ছি (?)। অধিকাংশক্ষেত্রে দৃষ্টি পড়ে যায় যে, প্রতিটি মানুষই আত্মমর্যাদাকে রক্ষাকরার প্রয়াসে নানারকম এবং নানারুপে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, যারজন্য লক্ষমানুষের প্রাণের গণহত্যার মতো নৃশংসতা ও ঘটতে বাকী থাকা অবাস্তবিক কিছু নয়। সময়ক্ষেপন না করেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। হত্যা করিতে আর দ্বিধা লাগে না। হাজার হতে লক্ষ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এসবের মুল কারণ হচ্ছে নিজেকে অদ্বিতীয় প্রমাণ করা, যেকোনোভাবে-ধর্মে বলেন আর জাতিতে বলেন। এইসবের কারণে মানুষের বংশধরকে হিংস্রগোত্রের আবির্ভাব বলে অনেকে বলে থাকেন।
আমরা যদিও অন্যকে পরাস্তকরার প্রয়াসের নিজের জীবনকে বাজিরেখে জয়ের সন্ধানে যুদ্ধের হুংকার দিই, তাকে কি যুদ্ধ বলা যেতে পারে? তা কোন ধরণে যুদ্ধ? আসুন মনিষী গৌতম বুদ্ধ কী বলেন জেনে নিই, তিনি বলেছেন,
• রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ। [সহস্সবজ্ঞোঃ ১০৩]
এটা আবার কী (?) রণক্ষেত্রে এতই শক্তি প্রয়োগ করে যুদ্ধ করলাম, জয় ছিনিয়ে আনলাম আবার তিনি বলেন অন্যযতসব, যাইচ্ছেতাই। সন্দেহ, তাই না? নিশ্চয় ! সন্দেহ থাকা ভালো ! মনিষী গৌতম সবসময়ই নিজের আত্মপরিশুদ্ধির কথা বারবার গুরুত্ব দিতেন, কারণ তিনি নিজেই আত্মপরিশুদ্ধির মাধ্যমে সত্যকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলতেন যে অজ্ঞনতার কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে প্রায়ই আবেগপ্রবণ এবং হতাশাগ্রস্থ হয়ে থাকেন, যার বাহ্যিক কোনো চিকিৎসা করার মতো ঔষধ নেই। তিনি বলেছেন যে, আমাদের মনুষ্যর প্রতিটি নাম-রুপে অজ্ঞনতার বসবাস, যা আমরা থের পাইনা। আমরা এ্ই নিয়ে অসচেতন থাকি বিদায় এসব ঘটে চলে, এবং আত্মা নামক এক ভয়াবহ অহংকারের জন্ম দিই। এই অহংকার আমাদেরকে পশুত্বে পরিণত করিয়ে ছাড়ে। শেষ পর্যায়ে আমরা আর খুঁজে পায়না নিজের যে এক মনুষ্যত্ববোধ থাকা প্রয়োজন সেই গুণাবলীকে। এই জন্যই মানুষ পশুত্বে পরিণত হয়। আর আমরা ঐসব মানুষদের সচরাচর পশুর সাথে তুলনা করে থাকি। মানুষের মনে কিন্তু প্রচুর পরজীবির বসবাস, যেমন শারিরীক দিক দিয়ে অনেক ব্যাকটেরিয়ার বসবাস। আমরা ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রসহীত যদি ও দেখতে পাই কিন্তু মানসিক পরজীবিগুলোকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা দেখার কোনো ঝো থাকে না। তাহলে আমরা দেখবো কীভাবে ? সেজন্য তথাগত গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, সবসময় স্মৃতিসহকারে জ্ঞাত থাকার চেষ্টা করতে। সে আবার কীরকম স্মৃতিঃ মানুষের বয়সবৃদ্ধির সাথে সাথে কিন্তু স্মৃতিলোপ পেতে থাকে -এসব কিসের জন্য হয়, হয়ত আপনারা জানেন -মূলতঃ বয়সবৃদ্ধির সঙ্গেই আমাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো প্রবলরুপ ধারণ করে, লোভী, ক্রোধী এবং মোহতে (মনের পরজীবিরা)আচ্ছন্ন করে তুলে। তাই বুদ্ধ সদা বলেছেন যেনো, অন্যমনষ্ক না হয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখা যায়। আমরা কী করছি, না করছি খেয়াল না রাখতে পারলে মোহযুক্ত হয়ে ভূল সিদ্ধান্তে পদার্পন করা স্বাভাবিক। আমরা নিজেকে না বুঝে অন্যর দোষ চাপাতে সদা প্রস্তুত থাকি, যা আমাদের একধরণের ভদ্রতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বুদ্ধ বলেন আমাদের ভিতরে বসবাসরত পরজীবিদের সাথে যুদ্ধ করে তৃষ্ণামুক্ত থাকা, যাতে করে অতিসহজর, সাবলীলভাবে যেকোনোরকম সত্যকে মেনে নিতে পারি। তাই তিনি বলেন রাগ-ক্রোধের সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৬