সমাজতান্ত্রিক চীন বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়।কিন্তু গণতান্ত্রিক ভারত পারছে না। জনমনের চিন্তা-চেতনাই বলে দেয় সে দেশে কেমন নেতা জন্ম নেবে।
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র গোমূত্রের রোগ প্রতিরোধক গুণের দাবিকে বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি না দিলেও গুজরাট,উত্তরাখণ্ড,হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ মাড়িয়ে উত্তরপ্রদেশ।উত্তরপ্রদেশ যাকে ভারতের রাজনীতি তৈরীর কারখানা বলা হয়।সেই উত্তরপ্রদেশ থেকে সংস্কারপন্থীদের পিঠস্থান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গত তিন-চার বছরে তুঙ্গে উঠেছে গোমূত্রের বিক্রি।গরুর দুধের চেয়ে মূত্রের দাম বেশি কলকাতায় এবং সমগ্র ভারতে।
পৃথিবীর সর্বত্র বই পস্তুকে পড়ানো হয় গাছপালা প্রাণীর নি:শ্বাসের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে প্রকৃতিতে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেয়।কিন্তু ভারতে বলা হয় গরু নিজের নি:শ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন মিশিয়ে দেয় বাতাসে৷অথচ গরুর বেঁচে থাকার জন্য নিজেরই অক্সিজেন দরকার।
শিশু ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীর প্রথম যে খাবারটি খায় সেটি মায়ের বুকের দুধ।বড় হলে মা আর শিশুকে দুধ দেয় না।মায়ের বুকে দেয়ার মত দুধ থাকেও না শুকিয়ে যায়।গরু তার বানের দুধ দিয়ে সেই শূণ্যতা পূরণ করে কবর পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকে।সেই দৃষ্টিকোণ থেকে্ আইন করে ‘রাষ্ট্রমাতা’ হিসেবে গরুকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ভারতে।এই অবলার প্রতি এত সন্মান ভারতবাসীর অনেকগলো মহৎ কাজের একটি।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের ’আইয়াম’অর্থ – দিন, দিবস, রাতের বিপরীত ইত্যাদি। তবে এখানে আইয়াম দ্বারা যুগ বোঝানো হয়েছে। আর ’জাহেলিয়াত’ অর্থ – অজ্ঞতা, বর্বরতা, কুসংস্কার, তমসা বা অন্ধকার ইত্যাদি। তাই আইয়ামে জাহেলিয়াতের অর্থ দাঁড়ায় অন্ধকার যুগ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুগ। ইসলামপূর্ব আরবে ছিল অন্ধকার যুগ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুগ।রাসূল (স) এর আবির্ভাবে ইসলাম আরবদের যাবতীয় অন্ধকার বা কুসংস্কার থেকে উদ্ধার করে।
স্বামীর শব দাহের সঙ্গে বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত দাহ করার পূর্বেকার হিন্দুধর্মীয় প্রথা “সতীদাহ প্রথা”। মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং স্বামীর শেষকৃত্যের চিতায় জীবন্ত স্ত্রীর দাহ কেবল তূরীবাদক জনতা্ই নয় সমাগত আত্মীয় -স্বজন,জন্মদাতা পিতামাতাও নৃত্যের উম্মাদণায় উদযাপন করত।ধর্মীয় আরোহে বিবেক এতটুকু নাড়া দিত না।
ইংল্যান্ডে উদারপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা হলে ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার কিছু খ্রিস্টান মিশনারি, ঈঙ্গ-ভারতীয় সংবাদপত্র এবং রাজা রামমোহন রায়সহ কতিপয় দেশীয় সংস্কারবাদী নেতার সমর্থনে গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-১৮৩৩) রেগুলেশন XVII, ১৮২৯ পাস করে ‘সতীদাহ প্রথা বা হিন্দু বিধবা নারীকে জীবন্ত দাহ বা সমাধিস্থ করা বেআইনি’ বলে ঘোষণা করেন।
রীতিকে ধর্মীয় প্রথায় জুড়ে দেয়ার পারঙ্গতায় ভারতবাসীর সাথে পৃথিবীর কোন জাতির তুলনা হয় না। এজন্যই ১২ মাসে ১৩ পার্বন। এক মোহণায় ভিড়তে বাইপাস হবার স্বভাব ভারতীয়দের স্বভাবজাত।মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নয়। কুসংস্কারে আবিস্ট ভারতবাসীকে কেবল আফ্রিকা বাদে অপরাপর বিশ্বের সাথে আধুনিকতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে।
তথ্য সহায়তা:-
১)গরুর দুধের চেয়ে মূত্রের দাম বেশি কলকাতায়
২)ভারতে গরুকে ‘রাষ্ট্রমাতা’ করার বিল বিধানসভায় পাশ
৩) ভারতের রাজস্থানে গরুর দুধের চেয়েও গোমূত্র বেশি লাভজনক
৪) ‘গরু অক্সিজেন দেয়, তাই সে রাষ্ট্রমাতা’: প্রস্তাব পাশ হল বিধানসভায়
৫) সতীদাহ প্রথা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪১