=কাজী ফাতেমা ছবি=
কোন এক শীতের দিন অফিসের পিকনিক ছিলো, নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। সেই সুবাদে দেখতে পেরেছিলাম পানাম শহর আর সোনারগাঁ জাদুঘর -শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর। ঢাকায় আছি ১৮ বছর কিন্তু আমার ভাগ্যে তেমন ভ্রমণ বিষয়টি নেই। তারপরও সুযোগ পেলে হাতছাড়া করি না। খুব আনন্দ নিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে। সবাই মিলে হইহুল্লোড় শেষে ফিরেও এসেছিলাম। পিকনিকের প্রথম পর্ব ছিলো নিজের ইচ্ছেয় ঘুরে বেড়ানো। আমি, ছেলে তামীম আমার বোন, তার ছেলে আর বোনজামাই মিলে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম এই লোকশিল্প যাদুঘরের ভিতর ও বাহিরে। মন ভালো হওয়ার অনেক ব্যবস্থা সেখানে আছে। নিজে না গেলে বিশ্বাস করবেন না। একটা সুন্দর স্বচ্ছ জলের লেক আছে, আছে ছোট ছোট ডিঙি। ফুল আছে বাঘ আছে গরু আছে, আছে গরুর গাড়িও যদিও পশুগুলো কৃত্তিম। তবুও অন্য রকম অনুভূতি। মানুষে গিজগিজ করা সেই জায়গাতে নিরিবিলি ছবি তোলা কঠিন ব্যাপার। তারপরও ক্যামেরা যখন আমার হাতে-শত বাঁধা ডিঙিয়ে শ খানেক ছবি তো উঠানো হয়ে গেছিলো হাহাহা। যদিও কেউ রাজী ছিলো না -দাঁড়িয়ে স্থির ভাবে অস্থির ছবি তোলার পক্ষে। তারপরও আমি অনেক ছবি তুলেছি। বিভিন্ন সময়ে এখানে সেখানে পোস্টও করেছি।
ভেবেছিলাম পানাম সিটি আর সোনারগাঁ যাদুঘর নিয়ে দুটো ভ্রমণ পোস্ট করবো। কিন্তু সময়ের অভাবে তা এখনো হয়ে উঠেনি। সেদিন ভূয়া মফিজ ভাইয়ার একটা পোস্টে এ বিষয়ে কথা হয়েছিলো-উনাকে কথা দিয়েছিলাম যে পোস্ট আমি অবশ্যই দেবো। যদিও আবোল তাবোল কথায় ভর্তি পোস্ট অনেকেই নাক সিটকাবেন তাতে কী। লিখতে আমি ভালোবাসি। মন ভরে পাতা ভরে লিখতে পারলে আমার মনের ক্ষিধা পেটের ক্ষিধা নিমেষেই কমে যায়।
২।
পানাম সিটি ঘুরে এসে এখানেই ঢুকি আমরা, পথে পথে ছবি তুলি আর নির্দশনগুলো দেখি। গরুর গাড়িটি দেখে একটা কবিতা প্রসব করেছিলাম সুন্দর সভ্যতার শিরোনামে। কিন্তু মা. হাসান ভাই আর মফিজ ভাইয়া কবিতা পছন্দ করেন না, হায়রে দু:খ। এ দু:খ কই থুই হুহ। যাই হোক কবিতা বাদই দিলাম। পাগলামী কথাবার্তায় অসন্তুষ্ট না হলেই হলো। ভাই এবং বোনেরা আমি এত জ্ঞানী ব্যক্তি না। তর্কে সারাজীবন হারি। কণ্ঠ আমার কর্কশ সেটা বদবেটায় কয়। কণ্ঠ ফাঁটা্ বাঁশ, তবুও আমি আল্লাহর রহমতে অনেক সুখি। আমার সুখ বেশীর ভাগ প্রকৃতি নিয়ে। প্রকৃতি ভালোবাসি। মুগ্ধ হতে ভালোবাসি। যাই হোক .....
৩।
আবোল তাবোল আবার শুরু-যদিও এগুলো উইকি থেকে সাহায্য নিয়েছি। তাও এখানে কিছুটা পড়ে শান্তি পেতে পারেন। সোনারগাঁও মুসলিম শাসকদের অধীনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। সোনারগাঁ নারায়নগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। ঈশাখাঁর আমলে রাজধানী ছিলো এটি। উনার বউয়ের নামে এটার নামকরণ করা হয় (আহারে এমন আহ্লাইদা বউ হইতে পারলাম না-বদবেটা বাড়ীর নামটা আমার নামে না দিলে তার খবর আছে wink ) সোনারগাঁয়ে সোনাবিবির মাজার আছে, পাঁচবিবির মাজার সহ অনেক স্থাপনা আছে যা দেখার মত। আর এখানেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের লোক ও কারুশিল্প আছে।
৪।
বাংলার বারো প্রতাপশালী রাজাদের মধ্যে ঈশা খাঁ একজন। তার রাজধানী সোনারগাঁও। এখানে তার সুন্দর প্রাসাদ। এখানে ছিলো বড় সরদার বাড়ি। এখনো রূপে গুনে মনোলোভা দৃশ্য। প্রাসাদের সামনে একটা সুন্দর স্বচ্ছ জলের পুকুর আছে। আছে পুকুর ভরা পালিত মাছ। চারিদিকে নারিকেল গাছ, আর সবুজ গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। যার স্বচ্ছ সুন্দর ছায়া দেখা যায় জলের আয়না। আপনি চাইলে এখানে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে পারেন কিছুক্ষণ। লিখতে পারেন মনে মনে গল্প কবিতা উপন্যাস।
৫।
৬।
এমন প্রাসাদ দেখলেই আমার হাজার কবিতা মনে আসে। আর কেমন যেনো পুরাতন ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে। এখানে রাজা ছিলেন, অন্দর মহলে রানী ছিলেন। ছিলো দাসী বাদী পাইক বরকন্দাজ, সৈন্য সামন্ত, গোলা বারুদ, তীর ধনুক আরো কত কী। মখমল বিছানা ছিলো, ছিলো পানের পাত্র, সোনা রঙের মেঝেতে ছিলো নৃত্যের আসর, সুরাই পাত্রে ঢালা হতো মদ জাতীয় পানীয়।
৭।
সোনারগাঁও বা সুবর্ণগ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ। এখানে স্বর্ণভুষিত জাতি নামে এক আদিম জনগোষ্ঠির বাস ছিলো। ঢাকায় মুগল রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সোনারগাঁও নগরীর দ্রুত অবক্ষয় ঘটে। চৌদ্দ শতকে সোনারগাঁও একটি বাণিজ্যশহররূপে গড়ে উঠে। সোনারগাঁও বহু কারণে আজও বিখ্যাত। সোনারগাঁওয়ে তৈরী হতো মসলিন শাড়ী। এখনো সেখানে গেলে দেখতে পাবেন জামদানী শাড়ির হাট।
সেই ঐতিহাসিক সোনারগাঁও নগর শুধু নামেই রয়েছে। ঢাকা নগরীর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সোনারগাঁও তার প্রাধান্য হারাতে থাকে। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে সোনারগাঁও পরিণত হয় গভীর জঙ্গলে আচ্ছাদিত গন্ড গ্রামে। পরবর্তীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে সোনারগাঁও একটি উৎপাদনশীল এলাকায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে এর সৌন্দর্য বেড়েছে। কিন্তু মানুষরাই এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারে না। সেখানে বাংলাদেশী পর্যটকরা গিয়ে, চিপসের প্যাকেট, খালি বোতল, ছেঁড়া পলিথিন সহ নানা আবর্জনায় ভরে রাখে।
৮।
দিনটি শুক্রবার ছিলো বিধায় প্রচুর লোক সমাগম ছিলো সেখানে। জাদুঘরে ঢুকতেই দেখি মানুষের বন্যা। সেখানে গিয়ে অন্যদেরকে ছবি তুলতে দেখে আমিও কিছু ছবি তুলেছি। এক জায়গায় লিখা ছিলো ছবি তোলা নিষেধ (আমারে তোলাও নিষেধ, তাসীনের বাপে দৌড়াইবো) । কিন্তু পরবর্তিতে দেখলাম এই ছবিগুলো নেটেও আছে তাই সাহস করে এখানে পোস্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
৯।
১০।
১১।
১২।
১৩।
১৪।
১৫।
১৬।
১৭।
১৮।
জয়নুল আবেদীন জাদুঘরের ভিতরে ঢুকতেই নকশী কাঁথাগুলো নজর কাড়ে। মানুষের জন্য কাঁথার একলা ছবি তোলা যায় না। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই দেখতে পাবেন সেখানে রাজা বাদশাদের আমলের বিভিন্ন জিনিস। যদিও আমি সব কিছুর ছবি উঠাইনি। মোমের তৈরী তাঁতশিল্প কারিগরদের ছবি খুবই ভালো লেগেছে আমার। তাই ক্যামেরার প্লাস দিয়ে ছবিগুলো গ্লাসের ভিতরের ছবিগুলো উঠিয়েছি। বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প,জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। এসব শিল্প-সামগ্রীতে তৎকালীন প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র এখনো ফুটে উঠেছে। আরও আছে পালকি, কাঠের সিন্ধুক, পিতলের তৈরী পুজার সামগ্রী।
১৯।
২০।
২১।
২২।
২৩।
জাদুঘরের নিজে হস্তশিল্পের একটি দোকান আছে। দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু কেনা হয়নি সেদিন সেখান থেকে কিছু।
২৪।
স্বচ্ছ জলের লেকটিতে অনেকক্ষণ নৌকা করে ঘুরেছি আমরা। আমার ছেলে তো নৌকা থেকে পাড়ে উঠতেই চায় না। অথচ সাঁতার
জানে না । এজন্য বেশী ভয় লাগে নৌকায় উঠতে।
২৫।
২৬।
২৭।
২৮।
আমরা নারায়নগঞ্জ নেমেই প্রথমে পানাম সিটি ভ্রমণ করেছিলাম। সেখানকার অবস্থা আরেকদিন বলবো যদি সময় হয়ে উঠে কখনো। আর এ নিয়ে প্রচুর ভ্রমণ পোস্টও আছে। আমি অন্যান্যদের মত এত সুন্দর করে লিখতে পারি না...... সরি।
পোষ্ট উৎসর্গ-ভূয়া মফিজ ভাইয়াকে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২১