শুনতে কী পাও তুমি শিশিরের শব্দ!
বিশ বছর ধরে কুয়াশায় ঢাকা পথে হাঁটিনি । বিশ বছর হয়ে গেলো এই ঢাকা শহরে। এখানে শিশিরের দেখা পাওয়া যায় না। এখানে রাস্তা ঘাট অলিগলিতে শিশিরের স্নিগ্ধতা নেই। হাঁটতে গেলে পা ভিজে যায় না। এখানে হাঁটার পথ জুড়ে বিতৃষ্ণায় ছাওয়া। থুথু কাশি ফুটপাত আর রাজপথে। পড়াশুনার সময় যখন প্রাইভেট পড়তে যেতাম সকালে, কী ভয়ংকর কুয়াশার মোড়া পথগুলো ছিলো। একটু দূরে গেলেই আর কিছু দেখা যায় না। আমাদের বাড়ী থেকে তিন চার কিলো দূরে স্কুলও কলেজও। হাই স্কুলের শুরুতে খোয়াই নদীতে ব্রিজ ছিলো না।
আহা সেই দিনগুলো মনে পড়ে যায় আজ। শুকনো মৌসুমে নৌকা চলতো রশি টেনে টেনে। মানে নদীর এ মাথা ও মাথা পর্যন্ত একটা রশি বাঁধা থাকতো। সকালে মাঝি থাকতো না। তখন আমরা বান্ধবীরা মিলে টেনে টেনে নদী পার হতাম। কুয়াশা মাখা দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আমি যখন পড়াশুনায় ছিলাম তখন এখনকার মত রাস্তাঘাট পাকা ছিলো না। আর রিক্সায় ভাড়া বেশী নিতো বলে তেমন একটা রিক্সায় যেতাম না। মাঝ বন্দ (ধান কাটার পর ধুধু মাঠকে বুঝায়) বরাবর হেঁটে হেঁটে স্কুলেও গিয়েছি। এমনকি কলেজেও এমন করেই গিয়েছি। যাওয়ার বেলা স্কুল ড্রেস ভিজে যেতো শিশিরের ছোঁয়ায়।
আসল কথা হইলো গিয়া শীতের সময় বাড়ী যাওয়া হয় না দুই বছর ধরে। চুনারুঘাট গেছিলাম অক্টোবরে তখনো তেমন কুয়াশা ছিলো না। নভেম্বর এ গেলাম শ্বশুর বাড়ী। মাত্র চার দিন থেকেছিলাম। যদিও আট দিন থাকার কথা ছিলো। পারিবারিক সমস্যার কারণে চলে এসেছি। ছবি তুলবো তুলবো বলে শিশিরের ছবি আর তেমন তোলা হয়নি। এক দুই দিন মাত্র ঘুম থেকে উঠটে পেরেছি। ব্যায়মিন্টন খেলেছি রাত বারোটা পর্যন্ত। উঠানে রাখা চেয়ার কিছু সময় না বসলেই দেখতাম ভিজে গেছে। কয়েকটা ছবি শিশিরের তুলে এনেছি স্নিগ্ধতা বিলাবো বলে।
২। কচুপাতায় শিশির জল
৩। কচুরিপানায় শিশির
৪। সুপারি পাতায় শিশির বিন্দু
০৫। কচুরিপানায় শিশির বিন্দু
০৬। ঘাস কলাইয়ে শিশির
০৭। সুপারি পাতায় শিশির
০৮। ঘাস কলাই পাতায় শিশির
০৯। বুনোফুলে শিশির বিন্দু
১০। কী পাতা যেন!
১১। সুপারি পাতায় শিশির বিন্দু
১২। কচু পাতায় শিশির বিন্দু
১৩। ঘাসে শিশির বিন্দু
১৪। কী গাছ চিনি না
১৫। মরা গাছের ভিতরে শিশির ভেজা সবুজ বুনোপাতা আর একটি সকাল
১৬। ঘাসে শিশির বিন্দু
১৭। ফার্ণ
১৮। মরা গাছে গোড়ায় শিশির বিন্দু
১৯। হংস্পদী গাছের পাতায় পাতায় শিশির বিন্দু
২০। শিশির ভেজা শিয়াল্মুখি ফুল
এই যে শীতের শিশির, তুই তো সই ছিলি নিশির।
একা একা ঝরে ঝরে, ঝরে পড়লি থরে থরে।
তোরা তো ভোরে ঝুলে থাকিস, লতা পাতায় মুক্তো আঁকিস।
কী মুগ্ধতা ছড়িয়ে, হাওয়া এলেই পড়িস ধুলায় গড়িয়ে।
রোদ্দুর এলেই কী মনোলোভা রূপ, রোদ্দুর আলো ঝলমলানি ঝাঁড়ঝোপ।
এই যে শীতের শিশির রাণী, তোকে ছুঁলেই স্নিগ্ধতার আবেশে সুখী মনখানি।
ঘাসের উপর,
বিন্দু বিন্দু মুক্তোর টুপর।
তোর বুকে পা রাখলেই ভিজিয়ে দিস পিরান,
তোর ছোঁয়া পেলেই মুগ্ধতায় জুড়ায় পরান।
তুই তো ঝরিস টুপটাপ, টিনের চালে চুপচাপ,
এই যে শিশির বিন্দু, ভোরের আলোয় তুই সুখ এনে দিস
মনে এক সিন্ধু।
তোদের ছোঁয়ায় মরে যায় ভোরের ধুলো বালি,
তোরা বুঝি ভোরবেলা হোস ঘাস পাতাদের মালি?
আঙ্গুল ডগায় শিশির নিলে, আহা আহা সুখ দিলে,
শিশির তোদের ভালোবাসি,
ভোর বেলাতে তোদের পেলে শান্তি মনে রাশি রাশি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩০