©কাজী ফাতেমা ছবি
#মেঘের_কাছে_রোদ্দুরের_চিঠি_৫
#খবর_দিয়ো_নিয়ো
হাই, ক্যায়সে হু তুম, মে আচ্ছি নেহি, অফিস খুল গেয়ি... এতদিন ছুটির পর অফিসে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, আলসেমী ভর করেছে। তাও তো যেতেই হবে। দুই ঝামেলা একসাথে পোহাতে হবে একদিকে বাসার কাজ কম্ম অন্যদিকে অফিসিয়াল কাজ কম্ম, দৌঁড়ানো দিন শুরু হুগেয়া মেঘ... কয়দিন বাদে ওদের স্কুল খুলে যাবে, জীবনে ঝালেমা আর ঝালেমা.... কষ্ট আর কষ্ট। যাই হোক ব্যস্ততা নিয়েই তো মোগো জীবন, যে যেভাবে পারে সে মতেই বিজি, কেউ আকামে বিজি কেউ কামে বিজি হা হা হা। বিজি থাকার মাঝেই জীবন খুঁজে নেই আমরা তাই না মেঘ!
আর আন্নে তো হারা গেবনই বিজি... কই থাইকা কই ঘুইরা বেড়ান কে জানে! ভালা কথা ব্যতিব্যস্ত জীবনের মাঝেও মাঝে মাঝে মুগ্ধতা নেবেন মোর কাছ থাইকা হা হা হা।
তারপর, একদিন সবাই যে যার পথে চলে যাবো, অনিশ্চয়তার পথে... কে কারে মনে রাখবে কে জানে! কল্পনার জগতে ঢুকতে হয়েছে আমায়, শুধু লিখবো বলে।
মেঘ তুমি কি বাস্তব না আমার কল্পনার অচিনপুরের রাজপুত্তুর। যে টগবগ ঘোড়ায় চড়ে.. সময়ের কঠিন তালায় বন্দি সিন্ধুকে ভরে আমার জন্য রঙধনু রঙ স্বপ্ন নিয়ে আসবে। অথচ সে তালার চাবি থাকবে না তোমার হাতে। তুমি আমাকে ধাঁধায় ফেলে বলবে এখন স্বপ্ন ছুঁতে তোমাকেই চাবির সন্ধানে নামতে হবে! আচ্ছা তখন কি আমি উলটা পালটা গানটা গাইতে থাকব... যা রবি বাবু লিখে গেছেন...
"ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে...
ও বন্ধু আমার না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে নারে
বুঝি গো রাত পোহালো, বুঝি ঐ রবির আলো
আভাসে দেখা দিলো গগন-পারে-
সমুখে ঐ হেরি পথ তোমার কি রথ
পৌঁছবে না মোর দূয়ারে ।।"
আচ্ছা চাবি কি আমার দুয়ারে পৌঁছবে না আদৌ... স্বপ্নের সিন্ধুক কি খুলব না আমি। আমি স্বপ্ন চাই হাতের মুঠোয়। তুমি চাবি খুঁজে দিবে কিন্তু! কি দিবে না!
কেমন যেনো রিক্ততার দিনগুলো ঘুরঘুর করছে আমার চারপাশে ধ্যত্তেরিকা! দুর্বোধ্য সময়ের হাত ধরে ভেসে চলেছি নিরন্তর। তুমি কি হাত ধরে তীরে ভিড়াবে আমায়। মনের জমিন ভালোবাসার অভাবে চৈত্রের খরা লেগেছে! একটু ভালবাসসার জল ঢেলে দাও! দিবে?
মেঘ কেমন আছো? ধ্যত মনেই থাকে না ... জানতে চাইলেই বা আর উত্তর কই পাবো । আমার সবই তো রিক্ততায় ভরা। শূ্ন্যে বসবাস তোমার... খুব ভাবি আজ খুব সুন্দর করে চিঠি লিখবো কিন্তু চিঠি লিখা এত সহজ নয় বাপু আর এজন্যই তো চিঠির উত্তর পাইনে আমি। যাক কথা সেটা না! তোমাকে লিখতে পারছি সেই বা কম কিসে।
প্রতিদিনই ঘুম ভাঙ্গে চড়ুই আর কাকের কলকাকলীতে আর তখনই মনে হয় তোমাকে লিখব, চিঠি লিখব কিন্তু কি লিখব, কেনই বা লিখব..... এতসব ভাবনা রেখে মনের মাঝে দুল খায়, না তোমাকে লিখবই। কত কথা জমা হয়ে থাকে মনের অথৈ-এ।
ঘুম ভেঙ্গে যখন বারান্দায় দাঁড়াই... মুগ্ধতায় ভরে যায় মন। পাখির কলকাকলী ধ্বনি, ভোরের হাওয়া, ফেরীওয়ালাদের আগমন, ছাই কিংবা শাক সব্জি কিংবা দা বটি ধার কিংবা লেপ তোষক কিংবা ভাঙ্গারী ওয়ালারা জুড়ে জুড়ে হাঁক ছাড়ে। জীবনের প্রয়োজনে রোজী রোজগারে নেমে যায় মানুষ সেই কাক ডাকা ভোর বেলা থেকেই। তাদের এমন পসরা আমি দেখি মুগ্ধ হয়ে। আর ভাবি আহারে আজ রোজী না হলে ওদের দুমুঠো অন্নের সন্ধান কে দেবে।
নারকেলের পাতার ফাঁক গলে সূর্যের আলো এসে আমার চোখে লাগে। আমি যেনো আবার ঘুম থেকে জেগে উঠি। ফিরে পাই মনের শক্তি । তোমার কাছে চিঠি লিখার শক্তি কিংবা দৈনন্দিন কাজে স্পৃহা। ভালো লাগে খুব ভালো লাগে যখন বারান্দা থেকে এসেই তোমাকে লিখতে বসি। তোমার ঠিকানা জানি না তাইতো ভার্চূয়াল খামে করেই চিঠি পোস্ট করে দেই। তুমি আসলে কে? আমি কি তোমাকে চিনতে পেরেছি। তোমার জন্যই বা আমার মনে এত কথা জমা কেনো। চিঠি লিখতে গেলে শেষ হইবার চায় না। ব্যাপার কি?
মনের কাছে জিজ্ঞাসি কিন্তু কোন উত্তর নাই। তোমাকে আজো আমি দেখতে পাইনি চিনতে পারিনি। তাই সময়ে সময়ে নাম পরিবর্তন খামে, কখনো নীল খাম, কখনো পিংক খাম, কখনো হলুদ খাম কিংবা খাকি খামে করে পোস্ট করে দেই। আমার চিঠির কথা অনেকের জীবনের সাথেই মিলে যায়। সবাই মনে মনে আমাকে ভুল বুঝতে থাকে। কিন্তু মানুষের জীবন তো একই সূত্রে গাঁথা যেমন ধরো প্রেম ভালোবাসা বিরহ কিংবা বাস্তবতা-কল্পনা, বিয়ে-সংসার বাচ্চা হাসি কান্না সবই তো সবার মাঝেই বিরাজমান। তবে কেনো ওরা আমায় ভুল বুঝে। তুমি আমার মেঘ কখনো রঙধনু কখনো হও মুগ্ধতা। আমার যত নামে ইচ্ছে তত নামেই তোমাকে চিঠি লিখব। আমি তোমাকে চিনিনা কিন্তু চিঠির ভাষা তোমাকে চিনে। এই শুনো, তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝোনে।
ভাল থেকো তুমি। নিরাপদ আর সুস্থ থাকার কামনাও করছি-শেষের পথে রোদ্দুর।
পুনশ্চঃ ব্যস্ততার মাঝেই কাটবে আজকের দিন। হয়তো সবারই। তারপরও পারলে উত্তর দিয়ো, খবর নিয়ো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৫