somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোর নিচে যে আধার খেলা করে

১৮ ই মার্চ, ২০০৬ ভোর ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ুন আহমেদএর কোন বইতে যেন তিনি লিখেছিলেন - "আমি বড়লোকদের নিয়ে লিখতে পারিনা"। কথাটি একটু হলেও তখন খটকা জাগিয়েছিলো মনে, নিজের জন্য নয় - একজন লেখক - তার মত বড় লেখক, মানুষের মাঝে নিজের চিন্তাধারা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন - চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন - দেখ - দুধরনের মানুষ আছে - ধনী, আর গরীব। ধনী আর গরীবের মাঝে আসলেই কি তফাৎ আছে?

হয়তো আছে - কে জানে ।


আমার বেশ কিছু ফ্রেন্ড আছে, ছিলো, যারা "খারাপ পাড়া" তে যাওয়া আসা করতো। জানিনা, হয়তো আমি ওভাবে গড়ে উঠিনি, তাই ওরা বেশ কয়েকবার বলা স্বত্তেও যাবার মন মানুষিকতা হয়ে ওঠেনি। বার বার এড়িয়ে গিয়েছি - আর তাছাড়া আমার জানা একজন মানুষ একটা কথা বলেছিলেন, যা আমার মাথায় ঢুকে আছে "রাস্তার কুকুরের সাথে মানুষের পার্থক্য কি বাবা বলতে পার?" আমি বেশ কিছুখন মাথা চুলকে বললাম "আমরা দু পায়ে হাটি, আর ওরা চারপেয়ে?" তখন উনি বলে "হা, তা ঠিক, কিন্তু আরেকটা আছে - আমরা চিন্তা করতে পারি - তারা পারেনা। তাদের animal lust আছে - আমাদেরও আছে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি কোথায় কি করা উচিৎ হবে - তারা সেটা পারেনা"।

আর তারপর থেকে নিজেকে কুকুর থেকে পার্থক্য করে চলার চেষ্টা করি - যতটুকু পারি। হয়তো সব সময় পারিনা, কিন্তু এই একটা বেপারে যদ্দুর পারি এড়িয়ে চলি।


আর সে থেকেই আজকের গল্প।


আমার একটা বন্ধু, নাম না হয় নাই বললাম, বেশ রেগুলার এসব জায়গায়। কখনোই আমি তার personal life নিয়ে কোনো কমেন্ট করতাম না, করিনা এখোনো, তবু একদিন যখন আমাকে নিয়ে যাবার জন্য জোর করছিল, আমি বেকে বসলাম। শালা - নিজে গেছ জাহান্নামে, আর আমাকে বল যেতে?

ছেলেটা হা করে তাকালো - আরে গাধা! তোকে করতে কে বলেছে - আয় না! দেখবি - জীবনের এক আলাদা রূপ দেখতে পাবি!

নাহ, তবুও কোনো ভাবেই যেতে পারলাম না। তখন ওর কাছ থেকে ওর প্রথম যাবার গল্প শুনি - আমি যতটুকু পারি ওর মত করে বলছি বেপার টা।


"দেখ বেটা, নাক সিটকালি - তাই তো করবি, মানুষ কে তো মানুষ হিশেবে জানার চেষ্টা করবিনা - জানিস আমিও এক সময় এরকমই ছিলাম, তোর মত বেটা! কিন্তু আমি এখন একজনের কাছে প্রায়ই যাই - বলতে গেলে সময় পেলেই চলে যাই। যেদিন প্রথম যাই, আমি যাই আমার এক বড় ভাইএর সাথে - উনি করবে - তাই। আমি কখনই করতে চাইনি - তবু শুধু যাবার জন্য যাওয়া।

ভেতরে ঢুকার পথ দোস্ত - নরকের রাস্তা পুরা। ঢোকার পথে দুইটা পুলিশ আছে দাড়ায়। আমি ভাবলাম আমাদের ধরবে বুঝি - কিরে, দেখি নিজেই আছে করার তালে! ঢুকলাম জখন পুরাই আধার - গলির পাশে আবর্জনা পড়ে রয়েছে - কেউ পরিস্কার করেনা হয়তো! রাস্তা দিয়া ঢুকে একটা বাড়িতে গেলাম - চলটা উঠা - পুরান। বস্তি না ঠিক, কোনো কোয়ার্টার হইবো - দেখি বেটা অন্দর মহল টাইপ! বাইরে বইসা আছে অনেকেই - সব বুড়া বুড়া আর চেহারায় বুঝা যায় হালারা মালদার পার্টি! হালা বুঝোস না তো, ঐ খানে যায় যারা, সব হালা মালদার। সিয়াম ভাই ঐ খানকার রেগুলার মনে হয় - ঢুকতেই দেখলাম একটা পোলা - কালা, কিন্তু জটিল পোষাক - মনে হয় ভাল ঘরের পোলা - আইসা একগাল হাইসা কয়: "আরে ভাই! কন কোনটা তে যাইবেন? রেগুলার না নতুন মাল? " ও কিছুনা কইয়া আমারে দেখায় কয়: "এর দিকে খেয়াল রাখ, আমি নিজেই যাইতেছি" ঐ পোলা কয় "কি বস, এর জন্যও লাগবো নাকি?' আমার দিকে তাকাইতেই আমি ই কইলাম "না না , আমি ঠিক আছি, আমাকে খালি বসতে দেন, কিছুখন" সিয়াম হালা দাতালো হাসি দিয়া কয়:"লাইনে পানি আসে নাই, বুচ্ছি - সমস্যা নাই, বস তুমি , আমি আসছি !"

আমি বসলাম। খদ্দর গুলারে দেখতাসিলাম - আমারে দেখতে দেইখা ওরা উসখুস করতেছিল ... কে জানে ভাবসে আমি চিনি মনে হয়। যাইহোক - আমি বইসা আছি, দেখি ঐ পোলা আবার আসছে , আইসা কয়, "ঐ মিয়া ভাই, আমার লগে আহেন তো"।

আমি গেলাম ওর সাথে - ওপরে দ্্বিতীয় তালাতে গেলাম - গিয়া একটা রুম এ বসাইলো, কয়" নিচে কমপেন আসছে, আপনে নাকি ডিবির লোক! হেহেহে হালা, চোরের মন তো, পুলিশ পুলিশ! করার সময় কিন্তু ভয় পায়না, হালার যত ভয় আগে!" আমি চুপ করে আছি, আমারা যে রুমে আছি, ওখানেই এক কর্নারে একটা বিছানায় আলুথালু বেশে 16 17 বয়সের একটা মেয়ে বসে আছে - কালো, বুঝা যায় গ্রাম থেকে, বুঝা যায় পড়া শুনা করেনি...

তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা বলে "কি মিয়া, পানি কি আইয়া গেলোন নাকি মাল দেইখা!? হেহে এরে যেই দেখে আমাগো এইখানে চোখ সরাইতে পারেনা, **** কতগুলানরে যে পলটি খাওয়াইলো! " আমি লজ্জা পেয়ে চোখ সরায় নি - নিজেকে বার বার গালি দিতে থাকি কেন আসলাম ! ওর পরে পুরোপুরি অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নেই - রুম টা কেমন ছিল এখোনো মনে আছে বাল - বুঝোস তো, প্রথমবার গেলাম - মনে তো থাকবোই। এক দিকে বাংলা সিনেমার পোস্টার - আরেক দিকে কাবা শরীফের ছবি - সিরিয়াস বেটা! দেয়াল থেইকা প্ললাস্টার খইসা গেছে , তাও হালারা ঠিক করে না হঠাৎ শুনি ঐ লোক ডাকে "এ ভাই , আপনার লগে মাইয়া কথা কইবো" ... আমি অবাক! মানে? ফিরাইয়া দেখি মেয়ে টা আমার দিকে তাকায় আছে, লোকটা বলে "যান ভাই, কথা বলেন - আপনে মানুষ ভালো, বুঝছে হয়তো।"

আমি পড়লাম সমস্যায়, ভাবছি যাবো নাকি, ঐ সময় ঐ মেয়েই ডাকলো "আপনে কি রাগ করছেন?"

ভাবলাম না হয় ইন্সালট না করি - গেলাম।

কথা বললাম বেশ কিছুখন। মা মারা গেছে, চলে আসছে এখানে, গার্মেন্টস এ কাজ করতো, তারপরে তার এক বান্ধবী তাকে এই জায়গার কথা বলে, আর সে চলে আসে। ঐ মেয়ের কথা মতে "শরীর বেইচা খাই, তো কি হইছে, এইডাও তো একটা বেচনের জিনিষ। যানেন নাকি আমাগো কাছে কারা আসে? শুইনেন না - শুইনা টাসকি খাইবেন - মিয়া, আমাগোরে পুরা মনত্রী রা পর্যন্ত ডাকে - আর আমাগো ভিজিট হইল 400 টাকা - ডাক্তার গো যেমন। আপনে কি মনে করেন? 400 টাকা দিয়া কারা আইবো? মজা লুটতে যারা আয়, তাগো পয়সা আছে।"

হয়তো আরো থাকতাম, সিয়াম ভাই চলে আসছে।

দোস্ত তারপরে আমি আবার গেছি, অনেক বার গেছি। বিশ্বাস কর আর না কর, আমি একটারেও খাইনাই । খালি যাই, আর বইসা দেখি - মানুষ আসে, যায়, তাগো চোখে একটা ভয় থাকে, তাগোরে দেখলে মনে হয় তারা কোনো অন্য জায়গার জীব। ওরা নিজেরাই নিজের ছায়া দেইখা চমকায়।

মজা লাগে দোস্ত, যাবি?"




আমি যাইনি।


আলোর নিচে যে আধার খেলা করে, তার কাছে গিয়ে সামিল না হওয়া কস্টকর - কে জানে , হয়তো আমার মাঝে অতটা will power নেই।


Who takes risks?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৯:৪০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×