ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটতরাজ, মেয়েদের উত্যক্ত করাসহ নানা অপকর্মের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে এটা সরকারী মহল থেকেও বলা হচ্ছে। তারপরও কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথিত চিরুনী অভিযান শুধু ছাত্র শিবিরের জন্য প্রযোজ্য আর ছাত্রলীগের জন্য নয়- তা কারো বোধগম্য নয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিব্রত। তার পরও এই সোনার ছেলেদের (!) বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা বেশ রহস্যেঘেরা। যেখানে গোটা দেশ তাদের হাতে জিম্মী এমনকি আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীও রেহাই পাচ্ছে না। সেখানে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ার কারণ এটাই হতে পারে যে রিজার্ভ লাঠিয়াল বাহিনীকে হাতছাড়া করতে রাজী নয় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সামনে হয়তো লাঠিয়াল বাহিনীর প্রয়োজন পড়তে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দু'মাস আগে শত শত ছাত্র শিবিরের নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলবেঁধে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র্যা বের ডিজি সবাইকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে অনেকটা মিনি কেবিনেট বসিয়ে ছাত্র শিবির কর্মীদের গ্রেফতার করতে চিরুনী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। চাঁপাই নবাবগঞ্জে একজন শিবির নেতাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যার মাধ্যমে তারা তাদের জিঘাংসা চরিতার্থ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক শিবির কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সারা দেশে শিবির কর্মীদের মেস এবং বাসা বাড়ীতে হামলা চালানো হয়, অভিযান চালানো হয়। শত শত ছাত্রকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে তাদের শিক্ষা জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চিরুনী অভিযানের নির্দেশ ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে নয় কেন সে প্রশ্নের জবাব নেই। ছাত্রলীগের সন্ত্রাস থেকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, যুবলীগের নেতা-কর্মী এমনকি আইন-শৃংখলায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীও রেহাই পাচ্ছে না। সন্ত্রাস, খুন-খারাবী, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ধর্ষণ, ছাত্রী নির্যাতন ও উত্যক্ত করাসহ হেন অপকর্ম নেই যা বর্তমানে ছাত্রলীগ করছে না। তাদের এহেন কার্যক্রমে সরকারের হাইকমান্ড পর্যন্ত নাকি বিব্রত- এমন খবর পত্র পত্রিকাতেও এসেছে।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সকল অপকর্মের জন্য সরকারের হাইকমান্ড থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুন্যালে মামলা ও গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ছাত্রলীগের কোন নেতাকে নাকি সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। তার কোন অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কোন নেতা যেন না থাকে সে ব্যাপারেও নাকি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্য মন্ত্রীরাও নাকি এভাবেই ছাত্রলীগকে বয়কট করে চলবেন। এমন পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে ছাত্রলীগের বেপরোয়া অবস্থার জন্য সরকার আসলেই বিব্রত। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাদেরকে বেপরোয়া বানালো কে? এরজন্য কি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড দায়ী নয়? তাদেরকে কি লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেনি আওয়ামী লীগ? এসব কারণেই হয়তো শুধু দূর থেকে ঢিল ছুঁড়ে ছাত্র লীগকে থামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাস্তবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহারের প্রতিদান স্বরূপ। অভিজ্ঞ মহলের মতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও ইভটিজিং-এর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কোন নেতা থানায় তদ্বীর করে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনবে না। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা হতে হবে সত্যিকার অর্থেই। তবে কারো কারো জন্য আইন ভিন্নতর হতে পারবে না। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী এতটাই যখন বিব্রত বলে প্রচার করা হচ্ছে তবে কেন ছাত্রলীগের কমিটি তিনি ভেঙ্গে দিচ্ছেন না?
তিনি ইচ্ছা করলে ছাত্রলীগকে দমানোর জন্য ৬ মাস বা এক বছরের জন্য তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করতে পারেন। এরূপ কঠোর পদক্ষেপ নিলে বোঝা যেত যে ছাত্রলীগের অপকর্ম আসলেই দমন করতে চান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কিন্তু একদিকে বিব্রতবোধ অন্যদিকে সকল অপকর্ম অবাধে চালিয়ে যাওয়ার লাইসেন্স প্রদান এই দ্বৈত নীতি চোরকে চুরি করতে বলা আর গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলার পরিণতি ভাল হয় না। এভাবে দেশের শিক্ষাঙ্গনকে অস্থির করে তোলা এবং সেশন জটের কবলে ফেলে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই অচল করে দেয়ার সুগভীর চক্রান্ত কার স্বার্থে? এ প্রশ্নেরও জবাব প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১০ রাত ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



