প্রথম পারমাণবিক বোমার আঘাত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৯৪৫ খৃষ্টাব্দ। যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর কর্ণেল পল টিব্বেটস টিনিয়ান বিমান বন্দর থেকে তার উড্ডয়ন শুরু করলেন । তিনটি আবহাওয়া বিমান পূর্বেই যাত্রা শুরু করেছিল । পারমাণবিক বোমা কোথায় ফেলা হবে সেই লক্ষ্যস্থলগুলির প্রাথমিক পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল এই বিমান তিনটি । কর্ণেল টিব্বেটস এর বিমানকে অনুসরণ করে উড়ে চললো আরো দুটি পর্য়বেক্ষণ বিমান । ৮-১০ মিনিটে টিব্বেটসকে জানানো হল যে হিরোসিমা তুলনামূলকভাবে মেঘমুক্ত । এক ঘন্টা পরেই টিব্বেটস তার লক্ষ্যবস্তুর উপর পৌছে গেলেন । একত্রিশ হাজার ছ’শ ফুট উপর থেকে যে বস্তুটি তিনি হিরোশিমার উপর বর্ষণ করলেন তার নামটি ছিল শীর্ণ মানব । বন্দুকের মত লম্বা ধাচের ইউরেনিয়াম বোমাটিকে তার গঠন চরিত্রের খাতিরে এই মানানসই নামটি দেয়া হয়েছিল । হিরোশিমা শহরের এক হাজার ফুট উচুতে এটি বিষ্ফোরিত হল । এই বিষ্ফোরণে নিহত হল এক লাখ তের হাজার দু’শ একাত্তর জন নিরাপরাধ মানুষ , আহত হয় একান্ন হাজার মানুষ । ধ্বংশ হল সত্তর হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, গৃহহীন হল এক লাখ সত্তর হাজারেরও বেশি লোক । ৯ আগস্ট নাগাসাকি বন্দরের উপর বর্ষিত হল দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটি ।এটি ছিল প্লুটোনিয়াম বোমা । এখানে নিহতের সংখ্যা চৌষট্টি হাজার একশ ছিয়াশি, আহত পচিশ হাজার । শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরুপে ধ্বংশ স্তুপে পরিনত হল । আণবিক যুগ থেকে পারমাণবিক যুগে ,মানব সভ্যতার উত্তরণ ঘটল এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে । এই গণহত্যা কি অপরিহার্য ছিল ? এই হত্যাযজ্ঞের পুরোহিত ট্রুম্যান সাহেব, তার উত্তরসূরিরা এবং বিশেষভাবে তাদের বর্তমান প্রতিনিধি এই গণহত্যার সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন যে বর্বর জাপানীদেরকে আত্নসমর্পনে বাদ্য করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ত্বরিত অবসান ঘটানোর জন্য এই গণহত্যা ছিল অপরিহার্য । প্রথম পারমানবিক বোমা বর্ষণের চল্লিশ বছর পর প্রেসিডেন্ট রেগান সাহেব মন্তব্য করেছেন- প্রেসিডেন্ট রেগান গতকাল এখানে বলেছেন যে মানব ইতিহাসে সব চেয়ে বড় যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং মিত্রশক্তির দশ লাখেরও বেশি প্রাণহানি এড়ানোর জন্য হিরোশিমায় আমরা বোমা ফেলেছিলাম । জাপানকে আক্রমণ করলে এত বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটত। রেগান বলেছেন শত্রুদের প্রতিরোধ এবং দ্বীপটিতে প্রচারাভিযান এমন ছিল যে জানতাম আমরা জীবন বাজি রাখা প্রতিরোধের সম্মুখীন হব । সত্যিই কি পরিস্থিতি এমন ছিল যে যুদ্ধের ত্বরিত অবসানের জন্য পারমাণবিক বোমা বর্ষণ ছাড়া কোন বিকল্প পন্থা ছিল না ? প্রচলিত অস্ত্রের সাহায্যে জাপান আক্রমণ করলে সত্যিই কি মিত্র শক্তির দশ লাখ প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল ? রেগান সাহেবের বক্তব্যের যথার্থ নির্ণয়ের জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দলিল দস্তাবেজ থেকে কিছু তথ্য পেশ করব । জাপান সরকার তার বৈদেশিক দূতাবাসগুলিতে বার্তা পাঠানোর জন্য যে সাংকেতিক লিপি ব্যবহার করত ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালের মধ্যেই আমেরিকানরা তার রহস্য সম্পূর্ণরুপে উম্মোচিত করতে সমর্থ হয়েছিল । এই সাংকেতিক লিপির নাম ছিল রক্তবর্ণ সংকেতলিপি । এই উম্মোচনের ফলে জাপানের বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের পাঠানো সকল বার্তাই তাদের সুস্পস্ট অর্থসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাইদের টেবিলে জমা হচ্ছিল । যুক্তরাষ্ট্রের নৌ- বাহিনী মন্ত্রী জেমস ফরেসটাল ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে এক বান্ডিল সাংকেতিক লিপির উদ্ধারকৃত সারমর্ম পেলেন । জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মস্কোতে জাপানী দূতের কাছে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাদের উদ্ধারকৃত অনুলিপি ছিল ঐ বান্ডিলটি । এই অনুলিপিগুলি পাঠ করে ফরেসটাল মন্তব্য করেছিলেন যে এই বার্তাসমূহ থেকে এটা পরিষ্কার যে জাপান সামগ্রিক ও চূড়ান্তভাবে পরাজিত এবং এটা উপলদ্ধি করে দ্রুত ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণই তাদেরই সামনে একমাত্র পথ । এ সময় জাপান রাশিয়ার কাছে ধর্ণা দেওয়া শুরু করেছে যে রাশিয়া যেন মধ্যস্থতা করে এই যুদ্ধের অবসান ঘটান । যুক্তরাষ্টের সাংকেতিক লিপি উদ্ধারকারী দলের নেতা উইলিয়াম ফ্রিডম্যান প্রকাশ্য বক্তব্য রেখেছেন যে যদি প্রেসিডেন্ট এর সাথে যোগাযোগের কোন উপায় আমার থাকত তাহলে আমি সুপারিশ করতাম যে বোমা বর্ষণের সিদ্ধান্ত তিনি যেন না নেন – কারণ যুদ্ধ এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে । এটা স্পষ্ট যে জাপান আত্নসমর্পনের জন্য মরিয়া ছিল । কাজেই হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা বর্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের অশুভ শক্তির জানান দেওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।