somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম পারমাণবিক বোমার আঘাত

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৪৫ খৃষ্টাব্দ। যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর কর্ণেল পল টিব্বেটস টিনিয়ান বিমান বন্দর থেকে তার উড্ডয়ন শুরু করলেন । তিনটি আবহাওয়া বিমান পূর্বেই যাত্রা শুরু করেছিল । পারমাণবিক বোমা কোথায় ফেলা হবে সেই লক্ষ্যস্থলগুলির প্রাথমিক পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল এই বিমান তিনটি । কর্ণেল টিব্বেটস এর বিমানকে অনুসরণ করে উড়ে চললো আরো দুটি পর্য়বেক্ষণ বিমান । ৮-১০ মিনিটে টিব্বেটসকে জানানো হল যে হিরোসিমা তুলনামূলকভাবে মেঘমুক্ত । এক ঘন্টা পরেই টিব্বেটস তার লক্ষ্যবস্তুর উপর পৌছে গেলেন । একত্রিশ হাজার ছ’শ ফুট উপর থেকে যে বস্তুটি তিনি হিরোশিমার উপর বর্ষণ করলেন তার নামটি ছিল শীর্ণ মানব । বন্দুকের মত লম্বা ধাচের ইউরেনিয়াম বোমাটিকে তার গঠন চরিত্রের খাতিরে এই মানানসই নামটি দেয়া হয়েছিল । হিরোশিমা শহরের এক হাজার ফুট উচুতে এটি বিষ্ফোরিত হল । এই বিষ্ফোরণে নিহত হল এক লাখ তের হাজার দু’শ একাত্তর জন নিরাপরাধ মানুষ , আহত হয় একান্ন হাজার মানুষ । ধ্বংশ হল সত্তর হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, গৃহহীন হল এক লাখ সত্তর হাজারেরও বেশি লোক । ৯ আগস্ট নাগাসাকি বন্দরের উপর বর্ষিত হল দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটি ।এটি ছিল প্লুটোনিয়াম বোমা । এখানে নিহতের সংখ্যা চৌষট্টি হাজার একশ ছিয়াশি, আহত পচিশ হাজার । শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরুপে ধ্বংশ স্তুপে পরিনত হল । আণবিক যুগ থেকে পারমাণবিক যুগে ,মানব সভ্যতার উত্তরণ ঘটল এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে । এই গণহত্যা কি অপরিহার্য ছিল ? এই হত্যাযজ্ঞের পুরোহিত ট্রুম্যান সাহেব, তার উত্তরসূরিরা এবং বিশেষভাবে তাদের বর্তমান প্রতিনিধি এই গণহত্যার সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন যে বর্বর জাপানীদেরকে আত্নসমর্পনে বাদ্য করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ত্বরিত অবসান ঘটানোর জন্য এই গণহত্যা ছিল অপরিহার্য । প্রথম পারমানবিক বোমা বর্ষণের চল্লিশ বছর পর প্রেসিডেন্ট রেগান সাহেব মন্তব্য করেছেন- প্রেসিডেন্ট রেগান গতকাল এখানে বলেছেন যে মানব ইতিহাসে সব চেয়ে বড় যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং মিত্রশক্তির দশ লাখেরও বেশি প্রাণহানি এড়ানোর জন্য হিরোশিমায় আমরা বোমা ফেলেছিলাম । জাপানকে আক্রমণ করলে এত বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটত। রেগান বলেছেন শত্রুদের প্রতিরোধ এবং দ্বীপটিতে প্রচারাভিযান এমন ছিল যে জানতাম আমরা জীবন বাজি রাখা প্রতিরোধের সম্মুখীন হব । সত্যিই কি পরিস্থিতি এমন ছিল যে যুদ্ধের ত্বরিত অবসানের জন্য পারমাণবিক বোমা বর্ষণ ছাড়া কোন বিকল্প পন্থা ছিল না ? প্রচলিত অস্ত্রের সাহায্যে জাপান আক্রমণ করলে সত্যিই কি মিত্র শক্তির দশ লাখ প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল ? রেগান সাহেবের বক্তব্যের যথার্থ নির্ণয়ের জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দলিল দস্তাবেজ থেকে কিছু তথ্য পেশ করব । জাপান সরকার তার বৈদেশিক দূতাবাসগুলিতে বার্তা পাঠানোর জন্য যে সাংকেতিক লিপি ব্যবহার করত ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালের মধ্যেই আমেরিকানরা তার রহস্য সম্পূর্ণরুপে উম্মোচিত করতে সমর্থ হয়েছিল । এই সাংকেতিক লিপির নাম ছিল রক্তবর্ণ সংকেতলিপি । এই উম্মোচনের ফলে জাপানের বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের পাঠানো সকল বার্তাই তাদের সুস্পস্ট অর্থসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাইদের টেবিলে জমা হচ্ছিল । যুক্তরাষ্ট্রের নৌ- বাহিনী মন্ত্রী জেমস ফরেসটাল ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে এক বান্ডিল সাংকেতিক লিপির উদ্ধারকৃত সারমর্ম পেলেন । জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মস্কোতে জাপানী দূতের কাছে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাদের উদ্ধারকৃত অনুলিপি ছিল ঐ বান্ডিলটি । এই অনুলিপিগুলি পাঠ করে ফরেসটাল মন্তব্য করেছিলেন যে এই বার্তাসমূহ থেকে এটা পরিষ্কার যে জাপান সামগ্রিক ও চূড়ান্তভাবে পরাজিত এবং এটা উপলদ্ধি করে দ্রুত ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণই তাদেরই সামনে একমাত্র পথ । এ সময় জাপান রাশিয়ার কাছে ধর্ণা দেওয়া শুরু করেছে যে রাশিয়া যেন মধ্যস্থতা করে এই যুদ্ধের অবসান ঘটান । যুক্তরাষ্টের সাংকেতিক লিপি উদ্ধারকারী দলের নেতা উইলিয়াম ফ্রিডম্যান প্রকাশ্য বক্তব্য রেখেছেন যে যদি প্রেসিডেন্ট এর সাথে যোগাযোগের কোন উপায় আমার থাকত তাহলে আমি সুপারিশ করতাম যে বোমা বর্ষণের সিদ্ধান্ত তিনি যেন না নেন – কারণ যুদ্ধ এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে । এটা স্পষ্ট যে জাপান আত্নসমর্পনের জন্য মরিয়া ছিল । কাজেই হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা বর্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের অশুভ শক্তির জানান দেওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×