"ইনকাম ট্যাক্স (আয়কর) দিলে কি যাকাত দিতে হবে? আমার মনে হয়, যাকাত দেয়ার সময় ইনকাম ট্যাক্স হিসেবে যা দেয়া হয়েছে সেটা বাদ দিয়ে বাকীটুকু আদায় করা উচিত, ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার পর যদি যাকাত দেয়া হয় তাহলে সেটা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।"
হুবহু এরকম না হলেও মূল কথা এমন যে যদি কেউ ইনকাম ট্যাক্স দেয় তাহলে মোট যাকাত হতে তা বাদ দিয়ে বাকী টাকা আদায় করলে ভালো হয় – এরকম মতামত আমি শুনেছি। কোন মতামত প্রকাশ না করলেও ‘ইনকাম ট্যাক্স দিলে যাকাত দিতে হবে কি-না’ এই প্রশ্ন আছে এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। এই বিষয়ে আলেমদের মতামত কি সেটা তুলে ধরতে চাই, কারও যদি এর সাথে দ্বিমত থাকে তাহলে কোন আলেমের সাথে আলোচনা করে নেয়া উচিত।
যাকাত হলো আল্লাহর বিধান। এটি ইসলামের মূল ভিত্তিগুলোর একটি এবং এটি হিসাব করা হয় মুসলিম ব্যক্তির উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর। যে কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যাকাত কারও জন্য ফরজ হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদ যদি এক চান্দ্র বছর সময়কাল যাবৎ জমা থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করতে হবে। অন্যদিকে, আয়কর হলো রাষ্ট্রের বিধান। এটি হিসাব করা হয় কোন ব্যক্তির সৌর বছরের আয়ের উপর এবং মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার উপরে ধার্য্য করা হয়।
এখন কোন ব্যক্তির যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ নির্ধারিত সময় যাবৎ জমা থাকে কিন্তু সারা বছরে কোন আয়-রোজগার না থাকে, তাহলেও তার উপর যাকাত ফরজ হবে। আবার, কোন ব্যক্তি যদি সারা বছরে, ধরা যাক, অর্ধ-কোটি টাকা আয় করে কিন্তু তার সম্পূর্ণটাই ব্যয় করে ফেলে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ নির্ধারিত সময়কাল জমা না থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হয় না।
আয়করের নিয়ম সেরকম নয় – কোন ব্যক্তির যদি বিপুল পরিমাণ অলস সম্পদ থাকে, কিন্তু বাৎসরিক আয় নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে তাহলে তাকে আয়কর দিতে হবে না। আবার, কেউ যদি সারা বছরে, ধরা যাক, অর্ধ কোটি টাকা, আয় করে অথচ সম্পূর্ণটাই খরচ করে ফেলতে হয় এবং কোন সঞ্চয় করতে পারে না, তা সত্ত্বেও তাকে নির্ধারিত হিসাব মোতাবেক আয়কর প্রদান করতে হবে, অন্যথায় রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো – যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাত নির্ধারিত। পবিত্র কুরআনের সূরা তওবায় যাকাতের জন্য আটটি খাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, এর বাইরে যাকাতের অর্থ ব্যবহার করার সুযোগ সাধারণত নেই। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স যেহেতু রাষ্ট্রের আওতাধীন, তাই এর ব্যবহার নির্দিষ্ট নয়, সরকার তার প্রয়োজনানুযায়ী বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করতে পারে।
তাই, আয়কর দিলেও যদি যাকাত ফরজ হয় তবে যাকাত আদায় করতে হবে। তবে, বাংলাদেশে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী কিছু নির্ধারিত জায়গায় যাকাত প্রদান করা হলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন যে ইসলামী রাষ্ট্র হলে যাকাত আদায়ের পর কর দেয়ার প্রয়োজন হতো না, তবে এর বিপরীতে একম মতামতও রয়েছে যে ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত আদায়ের পরও রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের কর ধার্য করা হয়েছে।
যাকাত ও আয়করের মধ্যে আরও পার্থক্য দেখানো সম্ভব। মূলকথা হলো – আয়কর দেয়া হোক বা না হোক, নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছরকাল যাবৎ জমা থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। কেউ যদি তা না করে তাহলে সূরা তওবার ৩৪-৩৫ নম্বর আয়াত মোতাবেক তাকে আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ব্যক্তিগত ব্লগ আর্কাইভ