মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম নানা বয়সে নান সময় নানা ভাবে আসে। তবে সময়টা মূলত ক্লাস ফাইভ, সিক্স অথবা সেভেন। আমার অধিকাংশ বন্ধুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
যাই হক, আমার বুদ্ধি বরাবরই কম। মারামারি করা এবং নাক গুঁজে পড়া (প্লাস ভুলে যাওয়া) ছাড়া অন্য কিছু আমি বুঝি কম। তাই প্রেম ঘটে একটু দেরিতে। ক্লাস এয়িটে; ম্যাডামের সাথে। ঐ গল্পটুকু শোনানোর আগে বলে রাখি প্রেমটা একতরফাই ছিল।
ক্লাস এয়িটে উঠেছি, ভাবই আলাদা। বিজ্ঞান মেলা চলছে। আমি আমার মোট তিনটা প্রজেক্ট সাবমিট করেছি। প্রথমটা হল "রিমোট কনট্রোল ফ্যান-লাইট"; দ্বিতীয়টা হল বায়ু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন; আর তৃতীয়টা বা শেষেরটা হল একটা ভাইরাস (কয়েটা সোর্চ কোড থেকে কোড মেরে দিয়ে সামান্য কাষ্টমাইড করেছি)। এটার কাজ হল কম্পিউটারকে হ্যাং করে রিস্টাড করায় এবং আবার কম্পিউটার ঠিক ভাবে চালু হলে এরর ম্যাসেজ হিসাবে আমার দেখায়। সবাই আমার প্রজেক্ট গুল খুবই আগ্রহ নিয়ে দেখছিল। আমার আশা ছিল ভাইরাসটা ফার্স্ট প্রাইজ পাবে, কারণ এটা বিজ্ঞান মেলার একটা বড় আকর্ষণ ছিল।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে লম্বা, ফর্সা, সিপ-সিপে গঠনের একজন (বয়েস বলতে পারছিনা, তবে পারে জেনেছি চারু ও কারুকলা ইনিস্টিটউড থেকে নাকি তখন সবেমাত্র পাস করেছিলেন তিনি) আমার প্রজেক্ট দেখতে আসলো। প্রথম দেখায় মোচড় দিল/! ঠিক বুকে নয় বুক আর পেটের মাঝখানে। খুব খারাপ খবর শোনার পর যেমন লাগে অনুভূতিটা কিছু ঐ রকম ছিল।
উনি আমার প্রজেক্ট গুলোকে বেশ মনোযোগ সহকারে দেখলেন এবং নানা রকম প্রশ্ন করলেন। আমি কেন জানি উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। দেখা শেষে যখন হেটে যাচ্ছিলেন তখন আমি উনার পেছন দিকে নিজের অজান্তে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। ফারজানা ওরফে ফয়েজ ভাই আমার দিকে না তাকিয়েই নিজে থেকেই আমাকে বলল, "আমাদের নতুন চারু ও কারুকলা ম্যাডাম। আমাদের পোশের বাড়িতে উঠেছে এখনও বিয়ে করে নি।" । এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে ঐ ভাবে তাকিয়ে আছিস ক্যান?" এটা শুনে আমার ঘাড় কান গরম হয়ে উঠলো। আমার এই অবস্থা দেখে ল্যামরাচিং ওরফে ল্যাংরাচিং, খ্যাঁক! খ্যাঁক! করে হাসাল। নাহ্! শালার জায়গাটায় ভালো না চারিদিকে খালি মেয়ে, তাও অভদ্র মেয়ে।
আমার এত সাধের ভাইরাস কোন পুরষ্কার পেলো না। তবে হতাশ হতে হয় নাই। কারণ আমার রিমোট কন্ট্রোল ফ্যান লাইট প্রথম পুরষ্কার পাইছে । বিজ্ঞান মেলা শেষে ২ দিন পর ক্লাসে উপস্থিত এখন আমি। এই কদিন শুধু ম্যাডামকেই স্বপ্নে দেখেছি। সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাস এখন। দেখলাম ঐ ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকছেন। বুকটা ছ্ন্নাৎ করে উঠলো।
ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকেই বলেন,"তোমরা মনে হয় আমাকে চেনো না। তাই পরিচয় দিয়ে নিচ্ছি আমি তোমাদের নতুন চারু ও কারুকলা ম্যাডাম। তোমাদের ওয়াং থয়োচিং স্যার অসুস্থ হওয়ায় আমাকে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এবার তোমাদের পরিচয় দাও।"
সাবই দাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলামB:-)।
ম্যাডাম খুব কড়া ক্লাস নিত। অনেক কথা শোনাত। চারু ও কারুকলা ক্লাসেও অনেক কাজ দিত না কলে শাস্তিও ছিল। তবে খুবই কম পরিমাণে। তবে ঐ সামান্য স্কেলের বাড়ি কোন কষ্ট দিতো না আমাকে। বরং অন্য রকম একটা ভালো লাগা অনুভূতিতে আসতো।
কিছু দিন পর আমাদের বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং ক্লাস শুরু হল। তাই শেষের ঘণ্টার ক্লাস বৃত্তির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ছিল না। ঐ শেষের দিকের ক্লাসের মধ্যে চারু ও কারুকলা ক্লাসও ছিল। বৃত্তি পরীক্ষা বার্তি চাপে পিষ্ট হয়ে ম্যাডামকে ভুলে গেলাম। ক্লাস নাইনে উঠে ম্যাডামের সাথে আর সামান্যও কথা হয় না। তবে মধ্যমাকে দেখে এখনও তাকিয়ে থাকি। দুঃখ আর হতাশ হই এই ভেবে, "আমি কেন বর্তমানের কোন ব্যাচেলার টিচার হলাম না! আর ম্যাডামেই বা এত বয়সে বড় হল ক্যান?"