somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ডায়রীর পাতায় স্বপ্ন গাঁথা....

০৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডায়রী লিখতে খুব ভালবাসে নদী।তার নিঃসঙ্গ জীবনের সব কথাগুলি সে লিখে রাখে ডায়রীর পাতায় পরম মমতায়।তার জীবনের একমাত্র বন্ধু তার এই ডায়রী।নদীর ১৮ বছরের জীবনের প্রতিটি বাকের সকল দুঃখ-কষ্ট আনন্দ বেদনা গুলি সে লিখে রাখে তার প্রিয় বন্ধুটির বুকে।তার সব গোপন কথা গুলি সে শেয়ার করে তার ডায়রীটির সাথে এক বিস্বস্ত বন্ধুরুপে।

কোটিপতি বাবার একমাত্র সন্তান নদী।সেই হিসেবে কোন প্রকার আরাম-আয়েস এর অভাব নেই তার জীবনে।যখন যা চায় তাই অনায়াসে পেয়ে যায় সে।কিন্তু এতো আরাম আয়েসের মাঝেও মনে এক বিন্দুও সুখ ছিলো না তার।নদীর যখন জন্ম হয় তার কয়েক মুহূর্ত পরেই তার মায়ের মৃত্যু হয়। অপারেশনের সময় মা ও বাচ্চার মধ্যে যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে এমনটিই বলে দেন ডাক্তাররা।যে কোন একজনকে বেছে নেবার দায়িত্বটি পরে নদীর বাবার উপর।নদীর বাবা তার প্রানপ্রিয় স্ত্রীকে বেছে নিলেও শেষ পর্যন্ত ওল্টোটিই ঘটে।কথায় আছে ''রাখে আল্লাহ্,মারে কে!!''নদী সেই সময়ে পৃথিবী আলো করে জন্মনিলেও বাঁচানো যায়নি তার মা কে।প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর অন্ধকার দেশে গমণ করেন তিনি।।

এরপর থেকেই অনেক একা হয়ে পড়েন নদীর বাবা।কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি তিনি।
চারিদিক থেকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি শুরু হলেও তাতে কান দেননি। তিনি জানতেন যে নদীকে আপন মায়ের মতো ভালবাসাটা দিতে পারবেনা অন্য
কোন মহিলাই।তাই মেয়ের সুখের জন্য নিজের মনের বাসনাকে কোরবান করেছিলেন তিনি অনায়াসেই।

এভাবেই মা ছাড়া নিঃসঙ্গ পরিবেশেই বেড়ে উঠে নদী। বাবা থাকলেও তাকে কখনোই তেমন আপন করে কাছে পায়নি সে। সর্বদাই ব্যাবসার কাজে বাইরে বাইরে কাটিয়ে দিতে হয় দিনের বেশীরভাগ সময় তার বাবাকে।তাই মনের যত না বলা কথা সবই নদী বলে যায় তার একমাত্র প্রিয় বন্ধু তার ডায়রীটিকে।

নদী যেদিন ১৮ বছরে পদার্পণ করে তার বাবা তাকে একটি ডায়রী উপহার দেন।যেই ডায়রীটি তার মা মৃত্যুর আগে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার জন্যেই ক্রয় করেছিলেন।এতো বছর পরে মায়ের একমাত্র স্মৃতিটি হাতে নিয়েই আনন্দে আত্বহারা হয়ে পরে নদী। ডায়রীর মলাটটি ছিল মখমলের কাপড়ে মোড়ানো।তার উপর আঁকা রয়েছে একটি লাল শাড়ি পড়া নতুন বউ।মলাটটির দিকে নজর দিয়েই নিজেকে নতুন বউ ভাবতে শুরু করে নদী। হয়তো তার মা ও তাকে লাল শাড়ি পড়া নতুন বউ এর সাজে কল্পনা করেছিলেন মনে মনে।তাইতো তার জন্যে এমন একটি উপহার রেখে গিয়েছেন তিনি। ভাবতেই গাল গুলো লজ্জায় লাল হয়ে আসে নদীর।।

দেখতে দেখতে আরো একটি বসন্ত চলে যায় নদীর জীবন থেকে। কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে ভার্সিটির আবেগ প্রবন ও রমরমা জীবনেপদার্পন করে সে।কিন্তু এখানে সবই যেনো তার অচেনা।এখানের পরিবেশ,সহপাঠীদের ব্যাবহার কিছুতেই আগের থেকে অভ্যস্ত নয় সে।ছেলে ও মেয়েদের খোলামেলা মিলামিশা তাকে অনেকটা অপ্রস্তুত করে তোলত।কিছুটা কৌতুহলী ও হতো সে।নিজের শামুকের খোলশে আবদ্ধ জীবন ও সহপাঠীদের খোলামেলা জীবনের
মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্যটা বুঝতে বিন্দুমাত্র দেড়ি হয় না তার।তাই সে ক্লাসের এক কোণার সিটটি দখল করে একা একাই বসে থাকতো সর্বদা।এখানেও তার একমাত্র সঙ্গী তার সেই প্রিয় ডায়রীটি।

কিছুদিন পরেই ক্লাস প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়।দুই জন এর একটি গ্রুপ করে প্রজেক্টের কাজ করতে হবে। নদী তার সঙ্গীর নামের কুপনটি তুলেই খুলতে থাকে কাগজটি।

"হিমাদ্রি" এই নামটিই লিখা আছে কুপনে। নামটি উচ্চারণ করতেই সামনে এসে হাজির হয় একটি ছেলে।লম্বা চুল ও খোচা খোচা দাড়ির এই ছেলেটিকে সে এর আগেও অনেকবার দেখেছে ক্যাম্পাসে বসে সিগারেট টানতে। সিগারেট খুবই অপছন্দ নদীর। সিগারেটের গন্ধ মোটেও সহ্য হয়না তার।তাই সিগারেট খাওয়া ছেলেদেরকেও পছন্দ করেনা সে। কিন্তু এই ছেলেটিকে কেন জানি তেমন খারাপ লাগেনা নদীর।ছেলেটির চোখে মুখে এক প্রকার ভদ্রতা ও বিস্বস্ততার ছাপ রয়েছে। যা অন্য সকল ছেলেদের থেকে অনেকটা আলাদা করেছে তাকে...

ছেলেটির কথায় হঠাৎ তন্দ্রা ভাঙ্গে তার...

-হায়,,আমি হিমাদ্রী। যদি আমি ভুল
না করে থাকি তাহলে আপনি নদী। রাইট??

এর আগে কখনো কোন অচেনা ছেলের সাথেই কথা বলেনি নদী।তাই তার মুখ দিয়ে একটি কথাও বেড় হয়নি।শুধু হিমাদ্রীর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে...

-কিছু বলবেন?? নাকি আপনি বোবা??

এবার মুখ খোলে নদী,
-জ্বি,আমি নদী।আপনি??

-একটু আগেও তো বললাম আমি হিমাদ্রী।আপনি আমার প্রজেক্ট পার্টনার।তাই পরিচিত হতে আসলাম।তিন দিনের মধ্যেই প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। আশা করি আমাকে সহযোগীতা করবেন....

-হুম।

-আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন তো।যে কোন সময় প্রজেক্টের কাজে ফোন দিতে হতে পারে....
কিছুটা ইতস্তত বোধ হলেও নিজের মোবাইল নাম্বারটা ঠিকই হিমাদ্রীকে দিয়ে দেয় নদী।সেদিন রাতেই ফোন আসে হিমাদ্রীর।প্রজেক্টের কাজ ছাড়াও অনেক ব্যাপার নিয়েই কথা হয় তাদের মাঝে।এভাবে দিন দিন কথার মাত্রা বেড়েই চলে।একদিন এমন একটা সময় আসে একজন আরেকজনের সাথে কথা না বলে থাকাটা কষ্টকর হয়ে উঠে।অচেনা দুটি মানুষ ধীরে ধীরে ভালবন্ধুতে পরিনত হয়....

মায়ের দেয়া ডায়রীটিতে কখনোই কিছু লিখা হয়নি নদীর।কিন্তু হিমাদ্রীর সাথে কাটানো প্রতিটি মধুর মুহূর্তের কথা সে লিখে সেই ডায়রীটিতে....


প্রিয় ডায়রী,
তুমি জানো,আমি আজ জীবনে প্রথম একটি ভাল বন্ধু পেয়েছি।তার জন্যেই আজ জীবনটিকে খুব উপভোগ করতে ইচ্ছে করে।সেই আমাকে শিখিয়েছে জীবন কি !! কিভাবে তাকে সুন্দরভাবে সাজাতে হয়। সেই আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে।শিখিয়েছে স্বপ্ন গুলোকে পূরণ করতে। একি!! তুমি দেখি অভিমান করছো!! ভাবছো তাকে পেয়ে আমি তোমাকে ভুলে যাবো?? তা কি করে হয়?? তুমি না থাকলে কে আমাদের মধুর
স্মৃতি গুলিকে নিজের বুকে গেঁথে রাখবে অপার মমতায়!!

এভাবে আরো কতো কি।যতই দিন যায় নদীর ডায়রীর পাতা গুলি একে একে ভরে উঠে ফুলের
সমারোহ নিয়ে।

এভাবে নদীর জীবন থেকে কেটেযায় আরো দুটি বসন্ত।কিন্তু এই দুটি বসন্ত তার কাছে ছিলো অন্যরকম।কারণ এই বসন্ত গুলি আগের গুলির মতো ছিলোনা নিঃসঙ্গতার মুরমুরে ঝড়া শীতের পাতার মতো,,এই বসন্ত গুলি ছিলো হিমাদ্রীর হিম শীতল সজীবতায় ঘেরা।

এরই মাঝে এক বৃষ্টিস্নাত দিনে হিমাদ্রী,নদীর হৃদয়ে প্রবল বর্ষনের সৃষ্টি করে বলেছিল "ভালবাসি"। সেই ভালবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তিটা তখন আর ছিলনা নদীর। হিমাদ্রীর ভালবাসার নদীতে তরী ভাসিয়ে দিয়েছিল সে আপন মনে। দুটি হৃদয়কে এক করেছিল পরম স্নিগ্ধতায়...

হিমাদ্রী ও নদীর ভালবাসার কথা কিছুদিন পরেই জেনে যায় নদীর বাবা।হিমাদ্রীর সাথে সকল প্রকার মেলামেশাই বন্ধ করে দেন তিনি। এমনকি ভার্সিটি যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় তার...

কিন্তু কিছুতেই আলাদা রাখা যায়নি দুটি হৃদয়কে কিছুদিনের মধ্যেই হিমাদ্রীর সাথে পালিয়ে যায় নদী। নিজেরাই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে তারা। নতুন বউ নিয়ে হিমাদ্রী উঠে তার একবন্ধুর বাসায়...

লাল শাড়ি পরে বাসর ঘরে বসে আছে নদী। নিজেকে মায়ের দেয়া ডায়রীটির সেই নতুন বউটির মতো মনে হয় তার।সেই রাতে হিমাদ্রীর কাছে নিজেকে সপে দিয়েছিল সে এক উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে...কিন্তু তার সব স্বপ্নই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় পরেরদিন সকালে হিমাদ্রীর রেখে যাওয়া চিঠিটি পড়ে...

"নদী,,
আমি কখনোই তোমাকে ভালবাসিনি।ক্ষনিকের আবেগের বসবর্তী হয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছি। হয়তো আমি সর্বদাই চেয়েছিলাম তোমার শরীরটিকে,তোমার হৃদয়টি কখনোই আমার কাম্য ছিলনা।তুমি যখন এই চিঠিটি পড়ছো তখন আমি তোমার থেকে চলে গিয়েছি অনেক দূরে অন্য এক দেশে। পরিবারের অমতে তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না।তাই আমি চলে যাচ্ছি নিজ পরিবারের কাছে।তুমিও তোমার বাবার কাছে ফিরে যাও এবং পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও"

সেদিন নদী চেয়েছিলো তার জীবনটিকে শেষ করে দিতে।কিন্তু পারেনি সে।হয়তো সাহস হয়নি। তাই সে ফিরে গিয়েছিল তার বাবার কাছে।আজ ছয় মাসের মতো হতে চলেছে তার ভেতরে একটি নতুন জীবনের আগমণ ঘটেছে।মায়ের দেয়া ডায়রীটিই এখন আবার তার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী হয়ে আছে। ডায়রীর পাতাগুলি উল্টিয়ে যায় সে প্রতিনিয়ত এবং চোখের জলে ভিজিয়ে দেয় তার প্রতিটি পাতায়। ডায়রীতে লিখা তার সুখ স্মৃতি গুলিই এখন তাকে আরো বেশী কাঁদায়।

তবুও সে স্বপ্ন দেখে,, স্বপ্নদেখে একটি মানুষের ফিরে আসার,,আবার ভালবেসে কাছে আসার......



-ঈষাম আরমান
০৯.০১.২০১২
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×