২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা। অনলাইনে লেখালেখির ভিতটাকে আরেকটু শক্ত করতে বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে লেখালেখি করি। লেখালেখি বিষয়ক যতরকম পেজ আছে, সবগুলোতে ঢুঁ মারি। তেমনি এক ওয়েব পোর্টালে এক বিষয়ভিত্তিক সংখ্যার জন্য একটি ফরমায়েশী গল্প লিখলাম। সেই সংখ্যার বিষয় ছিল... ‘ঘৃণা’।
আমার মাথায় তখন তার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই একটি গল্পের প্লট ভীষণভাবে ঘুরাফিরা করছিল। সেই প্লট থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না আমি। প্লটটা কেমন যেন সূক্ষ্ণভাবে খোঁচা দিত আমাকে। ঠিক ডালপালা মেলে প্রকাশিত হচ্ছিলো না। শুধু মাঝেমাঝে একটুখানি আলোর ঝলকানির মতো দেখা দিয়ে যাচ্ছিলো। আমি প্লটটাকে মাথায় নিয়ে বসে ছিলাম অনেকদিন। সেই প্লটকে আধার করে কীভাবে ঘৃণাকে উপজীব্য করে তুলবো, বুঝতে পারছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিলো, যে প্লট আমার মাথায় আছে তা ভালোবাসার নয়... ভালোবাসার পেছনে লুকিয়ে থাকা অন্যকিছুর গল্প। অনেক ভেবে একটা গল্প দাঁড় করলাম। উদ্দেশ্য ছিল এমন...ভালোবাসার রাঙতা কাগজে মুড়িয়ে সফেদ বেশে তুলে নিয়ে আসবো কদর্য ঘৃণাকে।
সেই উদ্দেশ্য থেকেই আমার ‘ছায়াপথ’ ছোটগল্পের উৎপত্তি। উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছিল, সে গল্প এখানে থাক। আজ বরং বলি, কীভাবে ‘ছায়াপথ’র তীব্র আকর্ষণে আমি আমার লেখা সেই ছোটগল্পকে একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসে রূপায়িত করি। ‘ছায়াপথ’ ছোটগল্প লিখেও আমার মনে হতে লাগলো, সব বলা হলো না। এখনো অনেক কথা বলার আছে আমার।
মুহিতের জীবনের ব্যাপ্তি আর আঁকাবাঁকা বাঁকগুলোকে এত অল্প কথায় বলে ফেলা আমার পক্ষে অসম্ভব। তার জীবনের সূক্ষ্ণ ভাঁজগুলোর পরতে পরতে যে মিহিদানা সুতোয় বোনা গল্প লুকিয়ে আছে, তা এক ছোটগল্পের পরিধিতে সীমাবদ্ধ হবার নয়। গল্পগুলোকে বুনতে বুনতে এক বড় কলেবরের উপন্যাসই লিখে ফেললাম শেষপর্যন্ত। যে গল্প মুহিতের গল্প...এক আশ্চর্য ছায়াপথে আটকে যাওয়া আরো কিছু বৈচিত্রময় চরিত্রের গল্প।
উপন্যাসটিকে সমাপ্তিতে পৌঁছে দেওয়ার কিছু আগে থেকেই আরেক অদ্ভূত ভাবনা পেয়ে বসলো আমাকে। মনে হতে লাগলো, সত্যিই কি শেষ করতে পেরেছি মুহিতের গল্প? যা বলতে চেয়েছিলাম তার সবটুকুই কি বলা হয়েছে? নাকি এখনো আসল কথাটুকুই বলা হয়নি আমার? বুঝতে পারছি... ক্রমান্বয়ে ছায়াপথের চক্রবাকে আমি নিজেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছি! পাঠককেও আমার সাথে অপেক্ষা করার অনুরোধ থাকবে। মুহিতের গল্প এখনো অসমাপ্ত...
উপন্যাস- ছায়াপথ
প্রকাশনী- চৈতন্য
মলাট মূল্য- ৩২০ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০