অমরত্মের প্রত্যাশা নেই নেই কোন দাবি দাওয়া
এই নস্সর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া
মুহূর্ত যায় জন্মের মতো অন্ধ জাতিস্মর
গত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর
ছেড়া তাল পাতা পুঁথির পাতায় নিঃস্বাস ফেলে হাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া
এই গানটি শুনেনি খুব কম মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবে। গানটা শুনলেই আমিও জীবনান্দের মতো বটফুল দেখতে পাই, দেখতে পাই একটা শালিক একা বৃষ্টিতে ভিজছে, আবার কখনো মনে মনে ধানসিড়ি নদীর ধারে চলে যাই। এই গানটা এমন ভাবে হৃদয়কে টানে মাঝে মাঝে মনে হয় আরেকবার জন্মালে মন্দ হতো না। আমি পুর্ণঃ জন্ম প্রথায় বিশ্বাস করি না। বরঞ্চ আমি জানি জীবন মাত্র একবার। মানুষ পৃথিবীতে আসে মাত্র একবারের জন্য। সব স্মৃতি সঙ্গে করে নিয়ে চলে যায় পৃথিবীর সব মায়া ত্যাগ করে। হোক সে বিখ্যাত আর কুখ্যাত। মৃত্যুতে কারো কোন হাত নেই। আমি বরং জীবনান্দের সেই লাইন দুটোর মতো অপেক্ষা করি,- কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-ভেজা শাদা হাতখান- রাখো বুকে, হে কিশোরী, গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান।
আবার কখনো বলি,-
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
এই সমস্ত আবেগ পূর্ণ কথা বার্তা বলার নিশ্চয়ই কোন কারন আছে। কারনটা হলো, একটি ভারতীয় বাংলা সিনেমা। সিনেমাটির নাম '' জাতিস্মর ''। যারা উত্তম কুমার ও তনুজা অভিনীত ''এ্যান্থোনী ফিরিঙ্গি'' চলচ্চিত্রটি দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন ''জাতিস্মর'' সেটিরই আধুনিক পুণঃ নির্মাণ। কিছুদিন আগে আমি ফেসবুকে কবীর সুমনে জাতিস্মর গানটি পোষ্ট করার পর তাপস'দা আমাকে জানালেন জাতিস্মর সিনেমাটা যেন আমি দেখি, শুধু চলচ্চিত্রটি নয় এই ছবির গান গুলো নাকি দারুণ মুগ্ধ করে। সেই থেকে জাতিস্মর ছবিটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপর একদিন মুক্তমনার ফরিদ ভাইয়ের ব্ঙ্গীয় মহিলা কবি ''চন্দ্রাবতী দেবী'' ও প্রথম মহিলা কবি সংক্রান্ত দুটি ব্লগ পড়তে গিয়ে আবারো বাংলা কবিতা ও পালাগানে এ্যান্থোনি ফিরিঙ্গির অবদানের কথা জানতে পারি। এরপর থেকেই অপেক্ষা করছিলাম '' জাতিস্মর '' চলচ্চিত্রটির জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে।
কি বলে জাতিস্মরের পূনঃ নির্মাণ: চলচ্চিত্রটির শুরু এক মারোয়ারী যুবককে দিয়ে। যুবকটি একটি বঙ্গ ললনার প্রেমে পড়ে। আর সেই বঙ্গ ললনা তাকে শর্ত দেয় যদি সেই যুবকটি বাংলা গান শুনিয়ে তাকে মুগ্ধ করতে পারে তখনি তার সঙ্গে একটি সম্পর্কের সূচনা সম্ভব নয় তো নয়। সেই থেকেই এই মারোয়ারী যুবকের যুদ্ধ শুরু। এক সময় এই যুবকটি পড়ালেখার জন্য ইন্টার ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে পর্তুগীজ স্টাডিজে পর্তুগালে চলে যায়। আর সেখানে তাদের শেষ সেমিষ্টারে একটি প্রোজেক্টে সে মিউজিক বা সংগীত নিয়ে কাজ করার সুযোগ পায়। আর এক সময় ''এ্যান্থনি ফিরিঙ্গি''কে নিয়ে গবেষণা করার জন্য কোলকাতা ফিরে আসে। আর সেই প্রজেক্টের জন্য '' এ্যান্থনি ফিরিঙ্গি''র পূর্বা ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে এক সময় তার দেখা হয়ে যায় কুশল দাসের সঙ্গে। এক সময় আলাপ চারিতায় কুশল দাস যুবকটিকে জানায়, সেই ''এ্যান্থনি ফিরিঙ্গি''। সে একজন জাতিস্মর তার পুনঃজন্ম হয়েছে। সে থেকেই শুরু হয় ''জাতিস্মর'' চলচ্চিত্রের মূল গল্প।
জাতিস্মরের দূর্বল দিক: কোলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে ইদানিং একটা সমস্যা খুব দেখতে পাই। সেটি হল সব কিছু বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দীর অদ্ভুত সংমিশ্রণ। হিন্দী ইংরেজীর এত প্রভাব যে মাঝে মাঝে ভুলে যেতে হয় আমরা একটি বাংলা চলচ্চিত্র দেখতে বসেছি। এতে করে আমার যে সমস্যাটি হয় তা হলো মনযোগ সরে যায়। জানিনা, অন্যদেরও একই সমস্যা হয় কিনা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ''জাতিস্মর'' ছবিটিও তার থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়। হয়তো ভারত বহুমাত্রিক ভাষার দেশ বলেই এর বানিজ্যিক ধারায় অন্য জাতি বা ভাষার লোকদের টানতেই এই কৌশলটি প্রচলন করা হয়েছে। আর পুনঃজন্মের মতো একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপারেকে এনে সেই পুরোনো ধর্ম বিশ্বাসের দিকেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
জাতিস্মরের অসাধারণ দিক: জাতিস্মর চলচ্চিত্রটির মূল আকর্ষণই হলো গান। ২ ঘন্টা আটাশ মিনিটের ছবিতে ১ ঘন্টা ৬ মিনিটের গানই হলো এই ছবির ঐশ্বর্য। যারা উত্তম কুমার অভিনীত ''এ্যান্থনী ফিরিঙ্গি'' ছবিটি দেখেছেন, তারা দেখবেন মূল কাহিনী ঐ একই চলচ্চিত্রের পুনরাবৃত্তি। তবে এখানে জাতিস্মর চরিত্রটি এনে এর সঙ্গে আরো অনেক গুলো চরিত্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কবীর সুমন আমার মতোই অনেকেরই প্রিয় শিল্পী। কিন্তু এই কবীর সুমন এত ভাল একজন সঙ্গীত পরিচালক তার জলজ্যান্ত প্রমাণ জাতিস্মর। সব মিলিয়ে আবারো বলতে হয় এখন আবার দেখা, আবার চোখে জল, গত জন্মের চেনা, তুমি আছো একই অবিকল। একজন দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়েছে যেন কবীর সুমনের মাঝে ফিরে এসেছেন এ্যান্থনি ফিরিঙ্গি।
যারা অভিনয় করেছেন : প্রসেনজিৎ চট্রোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, মমতা শঙ্কর, রাহুল অরুণদয় বন্দোপাধ্যায়, রিয়া সেন, আবীর চট্রোপাধ্যায়, অনন্যা চট্রোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, তমাল রায় চৌধুরী প্রমুখ।
যারা জাতিস্মর চলচ্চিত্রটি দেখতে চান তাদের জন্য জাতিস্মর চলচ্চিত্রটির ইউটিউব লিংক দিলাম।
Jaatishwar full movie hd
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৩১