somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে বাংলাদেশীদের হতাশা এবং নার্সিসিজম

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা হাইকোর্টের ছবিকে নিজের জমিদার বাড়ি বলে চালিয়ে দিয়ে এক বিদেশিনীকে বিয়ে করার মতো সফলতা অর্জন করেছিলেন এক বাংলাদেশী। - প্রচলিত গল্পটি হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা। এটি ছিল বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীর কাজ, যা সবাই পারে না। তবে বন্ধুর অফিসে বসে ছবি তুলে শ্বশুড়বাড়ির লোকদেরকে দেখানো, কিংবা অন্যের গাড়ির সীটে বসে নিজের বলে আত্মীয়স্বজনকে জানানোর মতো ঘটনা বাঙালিরা অহরহই ঘটিয়ে থাকেন, ইন্টারনেট খুললে এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আমরা প্রতিদিনই দেখি। আর কাজগুলো করার জন্য বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হলেও এটা আসলে এক ধরনের অসুখ। জ্বী এটাই নার্সিসিজম বা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় নার্সিস্টিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার। গতকাল এই নার্সিসিজম সম্পর্কে লিংকসহ আমার ওয়ালে একটি লেখা পোষ্ট করলেও পরে এই বিষয়টি নিয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে আমি ব্যাক্তিগতভাবে এ বিষয়টিকে আরো বিস্তারিতভাবে জানার বা আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আমি নিজেও এ রোগে কম বেশী আক্রান্ত হতে পারি। তবে সেটা আমার চেয়ে ভাল বুঝতে পারবেন আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যরা, কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যে কেউই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ- ইন্টারনেট ঘাটলে দেখা যায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- উন্নত আর শিক্ষিত দেশের তুলনায় দরিদ্র আর অশিক্ষিত দেশের মানুষের মধ্যে এ রোগের আক্রান্তের হার বহুলাংশে বেশি। আর এ কারণ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- মানুষের ব্যক্তিগত দুঃখ-দূর্দশা, হতাশা, দারিদ্র, সামাজিক দূরবস্থা বা স্বাধীনতাহীনতা এ রোগটির জন্য দায়ী। ( প্রয়োজনীয় লিংক লেখার শেষাংশে সংযুক্ত করা হলো।)

বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, যুদ্ধ বিধ্বস্থ আর পশ্চাৎপদ দেশ বা সমাজের মানুষদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো আপনাদেরকে আবারো মনে করিয়ে দিই।
* নিজেকে বহু বিষয়ের পণ্ডিত মনে করা, অন্যের দৃষ্টিকোণে বাস্তব পৃথিবী কেমন তা অনুধাবনে অসামর্থ্য।
* অনুতাপ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অস্বীকৃতি/অনীহা।
* আসলে যতোটা না, তার চেয়ে নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবা।
* আত্মম্ভরিতা করা (সুক্ষ্ণকিন্তু প্রতিনিয়ত) এবং নিজের অর্জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা।
* নিজের প্রশংসাকারীদেরকে তোষামোদ করা। নিজের সমালোচকদেরকে ঘৃণা করা।
* পূর্বাপর না ভেবে অন্যদেরকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়া।
* আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ/সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আত্মকেন্দ্রিকতা টেকসই সাবলীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা মনস্তাত্বিক সচেতনতার অভাব।
* অন্যের অনুভূতির বিষয়ে যৌক্তিক ধারণার অভাব নিজেকে অন্যের তুলনায় সর্বদা উচ্চতর অবস্থানে দেখা।
* যেকোন অবমাননা বা কল্পিত অবমাননার প্রতি অতি সংবেদনশীলতা অপরাধবোধে নয়, বরং লজ্জায় বেশি কাতরতা অসৌজন্যমূলক এবং অবন্ধুসুলভ দেহভঙ্গি।
দুঃখজনকভাবে সত্যি- আমাদের বাংলাদেশী ইন্টারনেট বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ রোগের ভয়াবহতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমরা প্রতিদিনই দেখে থাকি। এ ধরনের কিছু পরিচিত ঘটনার উদাহরণ হচ্ছে-
-রাস্তায় বা পার্কিং-এ অন্যের দামী গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া, যা গাড়ির মালিক জানেনই না।
-অন্যের ভবনের সামনে ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া, যেখানে ছবি তোলাই নিষেধ, অথবা ছবি তুলতে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।
-কারো বাসায় বেড়াতে বা দাওয়াত খেতে যেয়ে সেখানকার ছবি ইন্টারনেটে পোষ্ট করা, যেটা আয়োজকরা পছন্দ বা নিরাপদ মনে করেন না।
-কিংবা, কোন সংগঠন বা ব্যক্তি দয়া করে আপনাকে তার বাড়িতে কিছুদিনের জন্য থাকতে দিয়েছে, আর আপনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির আড়ালে সে বাড়ির ভেতরের বা বাইরের, অথবা বাড়ির আসবাবপত্র বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ছবি তুলে ইন্টারনেট বা অন্য কোন মাধ্যমে পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠালেন,- যা বাড়িটিতে ভাড়ার চুক্তিপত্রে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে আপনি সই করেছিলেন।
এবার আসি এর আইনগত দিকগুলো নিয়ে আলোচনায়। সুবিধাবঞ্চিত বা দরিদ্র সমাজের মানুষেরা উন্নত আর ধনী দেশে এসে প্রায়ই এ ভুলগুলো করে থাকেন। প্রথমত, আপনি যে গাড়িটির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলেন বা প্রচার করলেন, সেই গাড়ির নাম্বার প্লেটের কারণে গাড়ির মালিকের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটি কোন অপরাধীর গাড়ি হতে পারে যা পুলিশ খুঁজছিল। ছবিটির কারণে এখন আপনাকে পুলিশী ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

উন্নত বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোতে কোন সরকারী বেসরকারী ভবন বা বাড়ির ছবি তোলা বা ব্যবহার করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে, যা লঙ্ঘন করে একজন ব্যক্তি সাজাপ্রাপ্ত হতে পারেন।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা কোন দাতা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান-বাড়ি বা সম্পদের ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে আপনি তাদের প্রাইভেসী লঙ্ঘনের অপরাধে মামলা খেয়ে বসতে পারেন।

এবার আসি, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশের নাগরিক হয়ে বিশ্বের একটি অন্যতম উন্নত, শিক্ষিত এবং সভ্য দেশে বসবাস করার সুযোগ পাওয়ায় আমি আমার পরিচিত অনেক বাংলাদেশীদেরকেই ইউরোপের বিভিন্ন ছোটখাট আইন লঙ্ঘন করতে দেখি, যার পেছনে দায়ী তাদের ইউরোপের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অজ্ঞতা, নিজের দেশের আইন না মেনে চলার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বা সংস্কৃতি, আর সঙ্গে যোগ হয় তার নার্সিসিজম বা মানসিক অসুস্থতা।

এবার আলোচনা করা যাক, বাংলাদেশীরা কিভাবে দেশে-বিদেশে এ মানসিক অসুস্থতার কারণে আইন অমান্য করার ঝুঁকি নেন এবং নিজের বিপদ ডেকে আনেন। আমরা বাংলাদেশীরা শিক্ষায়, কর্মযোগ্যতায় এবং অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের নাগরিকদের চেয়ে অনেক অনেক পিছিয়ে আছি। তাই একজন শিক্ষাবঞ্চিত, কাজের অযোগ্য বা অলস বাংলাদেশী ইউরোপের পরিশ্রমী এবং ধনী সমাজের নাগরিকদের সাফল্য আর প্রাচুর্য্য দেখে চরম হতাশায় পতিত হন। তার স্বপ্ন বা কল্পনার মতো সুন্দর আর প্রাচুর্য্যের এই জীবনের তৃপ্তি তিনি নিজেও পেতে চান, যে স্বপ্ন হয়তো দরিদ্র দেশে তিনি তার পরিবার বা আপনজনদেরকে পূরণ করার আশা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- বাস্তবে তা অসম্ভব বলে তিনি কল্পনার আশ্রয় নেন, কল্পিত স্বপ্নকে সত্য ভাবতে শুরু করেন। আর তার আপনজনদেরকে সেই স্বপ্ন বাস্তব বলে বিশ্বাস করাতে প্রতিনিয়ত ছোটখাট মিথ্যা বা অভিনয়ের আশ্রয় নেন। আর সংক্ষেপে এটাকেও নার্সিসিজমের একটি কারণ বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

এবার কিছু উদাহরণ দেই, যা আমার মতো প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিনিয়তই দেখে থাকেন।
ইউরোপে অসংখ্য বাংলাদেশী তরুণ আছে যারা শরণার্থী হিসেবে এসেছে, কিন্তু আপনি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাদের বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাত্র বলে দাবী করবে। তারা হয়তো আপনাকে তার শহরের একটি বিশ্ব-বিদ্যালয়ের নামও শোনাবে। তারপর শোনাবে সে কোন বিষয়ে পড়ছে। কিন্তু আপনি খবর নিলেই দেখবেন, উক্ত বিষয়টি ঐ বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়ানোই হয় না। আর ভাষাজ্ঞান দেখে বোঝা যাবে তার পক্ষে ঐ বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়া অসম্ভব।

ইউরোপে মাষ্টার্স বা পিএইচডি করা হাতে গোনা কিছু বাংলাদেশীরা ছাড়া তাদের কাঙ্খিত পেশা বা চাকরিটি অর্জন করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে তাদেরকে এমন একটি চাকরি করতে হয় যা হয়তো মোটেও তাদেরকে সন্তুষ্ট বা সুখী করে না। তাই একটি বাড়িয়ে বলার সংস্কৃতির লোক হিসেবে বা একজন নার্সিসিজম রোগী হিসেবে সে তার স্বপ্নের চাকুরীটির কথা অন্যদের বলে বেড়ায়। যেমন- সদ্য আসা একজন বাংলাদেশী হয়তো আপনাকে বললো- আমি ইউরোপের অমুক দেশে একটি সরকারী চাকরী করি। কিন্তু তিনি জানেনই না, ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশের সরকারী চাকরির জন্য সে দেশের নাগরিক হতে হয় এবং মাতৃভাষার মতো করে সেই দেশের ভাষাটি আয়ত্ব করতে বা জানতে হয়। তিনি তার আসল অবস্থাটা জানিয়ে দেশের পরিবার ও আপনজনদের হতাশায় ফেলতে চান না। কারন, অনেক সময় পুরো পরিবারই নার্সিসিজমে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।

আরেক ধরণের হতাশাগ্রস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন, যারা কোন ইউরোপিয়ানের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার সুযোগ পেলে, বা বিপদগ্রস্থ হয়ে আশ্রয়ের সুযোগ পেলে সে বাসার বা তাদের সঙ্গে আড্ডার ছবি মুহুর্তের মধ্যেই ফেসবুকে ছেড়ে দিবেন নিজের প্রতিপক্ষ বা ভক্তদের দেখানোর জন্য। যা সে বাড়ির মালিক বা আমন্ত্রণকারী পছন্দ করবে তো দূরের কথা জানেনই না। কারণ, তাকে আপনি ফেসবুকে ব্লক করে রেখেছেন অথবা তারা ফেসবুক ব্যবহারই করে না।

এমনও বাংলাদেশী দেখেছি যে কোন কাজ করে না, ইউরেোপে কাজ করার মতো যোগ্যতা এবং ভাষা এখনো অর্জন করেনি, কিন্তু অন্য কোন পরিচিত বা বন্ধুর অফিস কিংবা সরকারী সোশ্যাল অফিসে বসে ছবি তুলে তা অন্যদেরকে দেখিয়ে সন্তুষ্টি লাভ করে। কিন্তু আমি তার নাড়ি-নক্ষত্র জানি, আমি জানি সে একজন বেকার ও নার্সিসিজমে ভুগছে।

এমন কিছু বাংলাদেশী দেখেছি- যারা ইউরোপের একটি দেশে অস্থায়ী বা কয়েক বছরের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে তারা জাতিসংঘের একটা বিশেষ শরণার্থী পরিচয় পত্র বা ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট বহন করেন। অথচ তারা ঐ দেশের নাগরিত্ব পেয়ে গেছেন বলে নিজের দেশের লোকেদের কাছে প্রচার করেন। হীনমন্যতায় ভুগে এ ধরণের মিথ্যাচারও একরকম মানসিক অসুস্থতা।
এমনও হতাশাগ্রস্থ বাংলাদেশী দেখেছি যার একটি ভাংগা স্যুটকেস ছাড়া কিছু নেই, যে বেঁচে আছে বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার অনুদানে, তার ধারণা, সে সেরা ধনীদের একজন, তাকে বিশ্বের সবাই হিংসা করে।

এমনও বাংলাদেশী দেখেছি, যার নিজেরই এখনও ইউরোপের থাকা নিশ্চিত হয়নি, অথচ নিজের পুরো পরিবারকে এখানে নিয়ে আসার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। যে কাউকে ভিসা পাইয়ে দেবার ক্ষমতা আছে বলে দাবী করছেন। নিজে একজন দূর্নীতিগ্রস্থ লেখক বা সাহিত্যিক অথচ অন্যের সাহিত্যের মূল্যায়ণ করে বেড়ান। অন্যদের বিশ্বমানের পুরষ্কার পাইয়ে দেবার গালগপ্প ছাড়েন। আর এটা নার্সিসিজমের সর্বশেষ ধাপ।

আমি জানি আমার মতো আপনাদেরও পরিবার বা আপনজনদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন- যারা এ মানসিক রোগটিতে ভুগছেন। ইউরোপের সংস্কৃতিনুযায়ী, এখানকার সামাজিক ব্যবস্থা ও নৈতিকতার মানদন্ডনুযায়ী আমাদের উচিত এসব মানসিক রোগীদের সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা। তা না হলে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। নার্সিসিজমে ভোগা একজন মানসিক রোগী একা থাকলে হতাশার কারনে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান বা ভুল ঔষধ সেবনে নিজের ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজের শরীরে এমন সব ক্ষতিসাধন করতে পারে যা তার মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থানুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মানসিক অসুখ বিশেষ করে নার্সিসিজম অবহেলিত হয়। খরচের কথা চিন্তা করে এ রোগের চিকিৎসার কথাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাবা হয় না। কিন্তু ইউরোপের সামাজিক নিশ্চয়তার দেশগুলোতে প্রতিটি নাগরিক বা শরণার্থীর চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে এখানে সবারই যে কোন রোগের চিকিৎসা সম্ভব। তাই আপনার পরিচিত রোগীদেরকে জোর করে হলেও চিকিৎসা পেতে সাহায্য করুন। তার অসুস্থতার কথা হয়তো সে বিশ্বাস করবে না, কিংবা নিজেকে মানসিক রোগী হিসেবে কখনোই মেনে নেবে না, কিন্তু একজন সচেতন ইউরোপে বসবাসকারী নাগরিক হিসেবে এটি আপনার দায়িত্ব। প্রয়োজনে আপনার পরিচিতের অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে কোন সচেতন বন্ধু বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করুন। নার্সিসিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে এটিকে হিন্দী সিরিয়ালের কুটনামী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে আপনি তার শুভাকাঙ্খী হিসেবে তার উপকার করছেন। কারণ, তার এ অসুস্থতা তার সর্বনাশের কারন হতে পারে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তিনি কোন আইন অমান্য করে রাষ্ট্রের আইন দ্বারা সাজাপ্রাপ্ত হতে পারেন, হোক সে সাজা একদিনের জেল কিংবা ২০০ ইউরো জরিমানা, কিন্তু ভবিষ্যতে ইউরোপে পড়ালেখা করার ক্ষেত্রে, চাকরি পাবার ক্ষেত্রে কিংবা নাগরিকত্ব আবেদন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই অবহেলা না করে আপনার পরিচিত নার্সিস্টিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে সাহায্য করুন। রোগী আপনাকে যতই ভুল বুঝুক, কিংবা আপনার প্রতি যতই রূঢ় হোক, মনে রাখবেন ইউরোপিয়ান সমাজের মানদন্ড অনুযায়ী এটি আপনার নৈতিক দায়িত্ব।

ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা

প্রয়োজনীয় লিংক সমূহ :
https://www.bpdcentral.com/narcissistic-d…/hallmarks-of-npd/
http://www.health.com/health/gallery/0,,20981393,00.html
http://blog.bdnews24.com/kazisshawkat/160334
http://www.amrabondhu.com/tanbira/5512
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×