একটা সময় আসবে যখন মুসলমানরা নিয়মিত সুর করে সকাল সন্ধ্যা কুরআন তিলওয়াত করবে, নিজেদের সন্তানদেরকে তিলওয়াত করতে শেখাবে । তাদের সমাজে কুরআনের হাফেজ থাকবে, সুললিত কন্ঠের ক্বারী থাকবে । কিন্তু তাদের মাঝে থাকবে না ইসলামের কোন জ্ঞান ।
হযরত যিয়াদ বি লাবীদ (রা) বলেন: একবার আল্লাহ্র রাসুল (সা) একটা ভয়ংকর কথা শুনালেন আমাদেরকে । রাসুল (সা) বললেন,
--এমন দিন আসবে যখন ইসলামের জ্ঞান নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে ।
--আমি বললাম,
--ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা), ইসলামের জ্ঞান কীভাবে নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে? আমরাতো কুরআন নিজেরা পড়ছি, আমাদের সন্তানদেরকেও শেখাচ্ছি । এভাবে আমাদের সন্তানরাও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাতে থাকবে ।
রাসুল (সা) বললেন,
--আরে যিয়াদ, আমিতো তোমাকে মদিনার সবচে বুদ্ধিমান লোক মনে করতাম । তুমি কি দেখতে পাও না, ইহুদি ও খৃষ্টানরা তাওরাত ও ইনজীল সবসময় স্রেফ তিলওয়াত করে; কিন্তু তারা এইসব কিতাবের শিক্ষা অনুযায়ী একটুও আমল করে না ?
------ ইবনে মাজা ।
আসলে কবিতার মতো সুন্দর ও সুললিতভাবে আবৃত্তি করে শুধুমাত্র নেকি সংগ্রহ করার জন্য পৃথিবীতে কুরআন নাজিল করেননি আল্লাহতায়ালা । সশব্দে তিলওয়াতের ফলে সৃষ্ট শব্দযাদু থেকে স্রেফ আত্মিক প্রশান্তি কিংবা সাওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরআন দেয়া হয়নি ।
কুরআন একটি উপদেশমূলক গ্রন্থ । হিদায়াতের গ্রন্থ । সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য প্রকাশকারী গ্রন্থ । অন্তরের রোগ নিরাময়ের গ্রন্থ । আল কুরআনের অনেক সুরার সূচনাই হয়েছে এই তথ্যগুলি দিয়ে ।
কিন্তু আমাদের সমাজের মুসলমানদেরকে বহুকাল ধরে শেখানো হয়েছে অর্থ না বুঝে শুধু তিলওয়াত বা আবৃত্তি করতে, এবং বারবার কুরআন খতম করে ব্যাপক নেকি বা পয়েন্টস সংগ্রহ করতে ।
কুরআন তিলওয়াত করে চোখ,কান ও অন্তরের প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশী করাই তাদের অনেকের মুখ্য উদ্দেশ্য । তিলওয়াতের আরেকটি অর্থ যে চিন্তা-ভাবনা করে, অর্থ বুঝে অধ্যয়ন করা তা তাদের অনেকেই জানেন না । দ্বীনি জ্ঞানের অন্যতম উৎস এই কুরআনকে ফেলে তারা অজ্ঞতা দূর করতে নিয়মিতভাবে ছুটেন প্রফেশনাল আলেমদের পেছনে ।
ওদিকে, দ্বীনকে প্রধান পেশায় পরিণত করা, নিজেদেরকে দ্বীনি জ্ঞানের একমাত্র ডিলার মনে করা এ সমাজের কিছু পেশাজীবী আলেম সাধারন মুসলমানদেরকে এমন ধারনা প্রায়ই দেন যে, তাফসির তর্জমা পড়ে সাধারন মুসলমানগন কুরআন বুঝতে পারবে না । কুরআনের অর্থ অনেক গভীর স্তরের । অথচ ঐ তাফসির তর্জমাগুলি কিন্তু তাদেরই তৈরী ।
এ কারনে মুসলমানদের অনেকে অস্বস্তি ও ভয়ে কুরআনের তর্জমা পড়তে সাহসই করেন না । অথচ আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তিনি এই কুরআনকে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট ভাষায় ও সহজবোধ্য করে নাজিল করেছেন ।
এ সমাজের সাধারন মুসলমানরা কুরআনকে যতোটা না প্রয়োজনীয় গ্রন্থ হিসাবে জানে তারচে বহুগুণে জানেন পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে । এজন্য কুরআনকে তারা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে যত্নের সাথে সংরক্ষন করে রাখেন, চুমু দিয়ে নাগালের বাইরে তাকে তুলে রাখেন । অথচ এই গ্রন্থটি ডিকশনারীর মতো একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহার্য্য গ্রন্থ । একই সাথে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ।
রাসুল (সা) বলেছেন,
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়—হালাল, হারাম, মুহকাম, মুতাশাবিহ্ এবং উদাহরণ ।
তিনি বলেন, তোমরা হালালকে গ্রহন করো, হারামকে বর্জন করো । মুহকামের (আকীদা, ইবাদত, আমল-আখলাক, আইন-কানুন ইত্যাদি) উপর আমল করো । মুতাশাবিহের (গায়েব তথা বেহেশত, দোযখ, আরশ, কেয়ামত ইত্যাদি) উপর বিশ্বাস রাখো । এবং উদাহরন (অতীতের ধ্বংশপ্রাপ্ত জাতিগুলির কাহিনী) থেকে শিক্ষা গ্রহন করো ।
----মেশকাত শরীফ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯