আমরা :-
গত ১১ অক্টোবর,২০১০ ঢাকার নিকটবর্তী আমিন বাজারের একটি ছোট্ট ব্রিজের গোড়া থেকে বৈশাখী নামের বাসটি পানিতে পড়ে গেলো। ধারণা করা হচ্ছে বাসটিতে যাত্রী ছিলো ৫০ জনের মতো। যদিও পত্র-পত্রিকায় তুরাগ নদীতে বাসটি হারিয়ে গেছে কিংবা তলিয়ে গেছে বলা হয়েছে কিন্তু আমরা পাশের এলাকার মানুষ হিসেবে জানি ওটি একটি সরু খাল মাত্র । কেননা শুকনোর সময় তার আশপাশে ধানসহ মৌসুমী সবজি আবাদ করা হয় আবার বর্ষা মৌসুমে উক্ত খালসহ আশপাশ জলাশয়ে পরিনত হয়। পত্রিকার সূত্র মতে সে জলাসয়ের গভীরতা মাত্র ১৫ ফুট। বাসটি পানিতে পরার পর মূহুর্ত থেকে উদ্ধার কার্যক্রমের যে খেউরি-খেস্তি আমরা দেখলাম তা আর বলার নয়।
জলাশয়ের অতটুকু গভীরতা থেকে বাসটি উদ্ধারের জন্য মশা মারতে কামান দাগা'র মতো সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড সহ আরো নানা ধরনের পারদর্শী দিয়ে চেষ্টা করানো হলো কিন্তু বাসটি তৎক্ষণাৎ আর উদ্ধার হলোনা। বাসটি উদ্ধার হয়েছে বটে তবে তা দু-চার-দশ-বিশ-ত্রিশ ঘন্টার মধে নয় ৫৪ ঘন্টা শেষে অনেক কষ্ট-ক্লিষ্টে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার পরে। ৫০ জন যাত্রীর মধ্যে পাওয়া গেছে সর্ব সাকুল্যে ১১ জনের লাশ। বাকী লাশের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ব্যাপারে অনেকে অনেক কিছুকে দায়ী করছেন। কেউ বলছেন সরকারের অবব্যস্থাপনা, কেউ বলছেন প্রয়োজনীয় সরন্জামাদির অভাব, আবার কেউ বলছেন দায়িত্ব অবহেলার কারণে এমন হয়েছে ইত্যাদি। প্রিন্ট মিডিয়া হিসেবে এ সংবাদটিকে এটিএন নিউজ খুব গুরুত্বের সাথে কাভার করেছিলো; তারা একটি কথা বারে বারে বলেছে যার মর্মার্থ এমন যে স্বল্প গভীরের বর্তমান এ তুরাগ নদীতে ডুবে যাওয়া একটি মাত্র বাসকে উদ্ধার করতে সরকারী ব্যবস্থাপনার হাল যদি এমন হয় তা হলে ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ সরকার কেমন করে সামাল দিবে। আমার মত ও ঠিক তাই। এবার আসুন দেখি আমাদের দেশে এ ঘটনাটি চলাকালীন ল্যাটিন আমেরিকার চিলিতে একটি স্বর্ণ ও তামার খনিতে আটকে থাকা ৩৩ শ্রমিককে তাঁরা কিভাবে উদ্ধার করেছে সে ব্যাপারে যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন ও খবর দেখেন তাদের আর নতুন করে স্বরণ করিয়ে দেবার দরকার হবে না। তবু বলতে হয় আমাদের মাত্র ৫০ জন যাত্রী আর তাদের (বিশাল ?) ৩৩ জন শ্রমিক এজন্য
উভয় দেশই উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আমাদের গভীরতা ১৫ ফুট, চিলির গভীরতা ২২৯৬ ফুট (৭০০ মিটার)। আমাদের যাত্রীরা নিমজ্জিত ছিল ৫৪ ঘন্টা, ওদের শ্রমিকরা অতল গহ্বরে ছিল ২ মাস। আমাদের যাত্রীরা মৃত্যবরণ করে পানিতে পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে কিংবা যে ১১ জনের লাশ পাওয়া গেল তাদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাশ ভারী উঠেছে অথচ চিলির শ্রমিকরা পৃথীবীর বুকে দাঁড়িয়ে আনন্দের হাসি ছড়াচ্ছে সারা দেশ জুড়ে যার রেশ সুদূর আমাদের আমিন বাজারের তুরাগের তীরে এসেও লাগছে। ২২৯৬ ফুট গভীরে ৩০ শ্রমিক বেঁচে আছে জেনে চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা শ্রমিকদের প্রেরিত চিরকুট পেয়ে যারপরনাই খুশী হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এসে চিৎকার করে বলতে লাগলো 'ওরা সবাই বেঁচে আছে', 'ওরা সবাই বেঁচে আছে' ওদের বাচাতে হবে। আমি জানিনা আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী আমিন বাজারের এ ঘটনায় কিংবা ৫০ জন মানুষের মৃত্যুতে জাতীয় ভাবে শোক প্রকাশটুকু করেছেন কি-না!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



