somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগের তরুণরা যে কথা বলে দিয়ে গেল ---- সেরীন ফেরদৌস

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক কাদের মোল্লার ফাঁসি হোক বা না হোক, ফাঁসির প্রয়োজনীয়তা যখন লাখ লাখ বাঙালির কাছে স্বীকৃত হয়ে গেল, যুদ্ধজয়ের আর বাকি কী থাকে তখন? কাদের মোল্লার নিজেরই কি গলায় দড়ি পরতে ইচ্ছে করে না তাতে! এত ঘৃণার বাষ্পে জীবন্মৃত বেঁচে থাকারই বা কী মানে!



তরুণরা বলে দিল, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর তাদের এতটুকু আস্থা নেই; আজ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন তো কাল কাদের মোল্লার বেকসুর খালাস এ দেশে সম্ভব। এ দেশে গোলাম আযম, কাদের মোল্লরা চল্লিশ বছর বেয়াদবি করে গেছে, এ দেশে সব সম্ভব! শাহবাগের তরুণরা তর্জনী তুলে দেখিয়ে দিল, ‘ওই দেখো, মুক্তিযুদ্ধের ক্রিম-খাওয়া হায়েনারা ওখানে বসে চোস্ত বাংলায় বক্তৃতা-বমি করেছে এতকাল!’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুলা-ঝুলানো রাজনৈতিক দলগুলোর অকার্যকারিতা আর কে এমন করে দেখাতে পারে শাহবাদের তরুণরা ছাড়া? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার দলটির রংচটা জামা আর তা থেকে যে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে, যা তাদের আত্মার সঙ্গে মিলে গেছে বলে তাদের নজরে পড়ছে না; সে জামার গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে গেল শাহবাগের তরুণরা।

গাঁয়ের যে বৃদ্ধ, শহরের যে রিক্সাওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা কোনোদিন সুশীলদের (!) ভিড়ে মুখ খুলতে পারেনি, তাদের গলা মেলানোর বাতাস এনে দিল শাহবাগের মোড়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে করে বেড়ানো লোকগুলোর গালে যে সশব্দ চড় মেরে দিল শাহবাগ চত্ত্বর, সে শব্দ সাত-সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারের টরন্টোতে বসে আমি শুনতে পেলাম! শাহবাগ চত্বর এখন একটি ইনস্ট্রুমেন্টের নাম, যা ছোঁয়ানো মাত্র জেনে যাওয়া যেতে পারে, জামায়াতিদের প্রাণের দোসররা কেমন পেখম মেলে, ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করে কোণে কোণে ঘাপটি মেরে আছে।

শাহবাগ আন্দোলন পরিষ্কার জানিয়ে দিল যে, লম্বা-জামা টুপি মাথায় দেওয়া মানেই জামায়াত-শিবির নয়, ধার্মিক মুসলিমও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বল বাঙালি হয়। আবার কোট-টাই-পারফিউমমাখা শেয়ালও কেমন বিজ্ঞাপন করে! শাহবাগ ক্রিস্টাল ক্লিয়ার করে দিল যে, আমাদের কিছু পরিচিত আর বন্ধু-বান্ধবের মুখ যেখানে বেদনার প্রবল ঘনঘটা বয়ে যাচ্ছে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে, ভদ্রতার তুমুল মুখোশেও কোনোমতে বেদনার সে জল তারা ঢেকে রাখতে পারছে না, অথচ দিব্যি তো তাল দিয়ে দিয়ে প্রগতির ফেনা তুলেছে গত চল্লিশটি বছর ধরে! আজ কেন তারা আর তাল সামলাতে পারল না? আজ কেন তাদের লাল চোখ আর ফোঁস ফোঁস দেখে ফেললাম? এত আলো তবে ছড়াতে পারল শাহবাগ চত্বর? কোনো রাজনৈতিক দলের ইশতেহারের তলায় নয়, নিজের বিবেকের জবাবদিহিতা যাচাই করতে এগিয়ে আসা একক তরুণরা, লক্ষ তরুণরা যে প্রশ্ন তুলে দিল, তার চাবুকে দূরে-কাছে কে-কে বিদ্ধ নয়!

ব্লগার রাজীব খুন হয়েছেন এর জের ধরে। বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় তা। শুরু হয়ে গেছে চোরাগুপ্তা হামলা। জানি না আর কাকে কাকে বলি হতে হয় কণ্ঠস্বর আর চিন্তাশক্তি মুক্ত রাখার অপরাধে, নিজের মগজ বিক্রি না করে দেওয়ার অপরাধে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ যেমন একটি চেতনার নাম, ‘জামায়াত’ও তেমনি একটি চেতনার নাম। হত্যা, গুম, খুন আর জবাইয়ের নাম জামায়াত। যারা সরাসরি জামায়াত করে, তাদের কথা বলছি না- বলছি তাদের কথা, যারা গোপনে জামায়াতের সুরভিতে সুরভিত তাদের কথা। রাজীবের খুনে এসব প্রগতিশীলদের আত্মা খানিকটা তৃপ্ত হয়েছে যারা গত দু’সপ্তাহ ধরে ভাজা ভাজা হচ্ছিলেন শাহবাগের স্ফূলিঙ্গে!

জলজ্যান্ত মানুষকে জবাই করে ফেলার ঘটনায় অবশ্য তাদের মানবিকতা তেমন জেগে উঠতে দেখা যায় না, যেমন জেগে ওঠে কাদের মোল্লার ফাঁসির কথা উঠলে। তারা মুখে ফেনা তুলে ফেললেন, চোখের জলের নদী বানিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের সব সমস্যার জন্য কাঁদতে কাঁদতে! কেন শাহবাগের ছেলেরা অমুক হত্যা, তমুক অ্যাকসিডেন্ট, দারিদ্র্য ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনে এল না? তাদের কাছে জানতে চাই, ‘আচ্ছা, আপনাদের কেমন কঠিন হৃদয়, শুধু বাংলাদেশের সমস্যার কথাই ভাবলেন, সারা পৃথিবীর সমস্যা নিয়েই শাহবাগের তরুণদের যুদ্ধ করার দরকার ছিল। পৃথিবীও ছোট হয়ে যায়, গ্রহ-নক্ষত্রের সমস্যা নিয়ে তাদের সমাবেশ করা দরকার ছিল। ছিল না কি?’ দেশে-বিদেশে কোটি কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে এসব অন্ধকারের আততায়ীদের পক্ষে। ডলার খরচা-করনেওয়ালাদের চোখও যে বিস্ফারিত হচ্ছে শাহবাগের প্রাণের ঢল দেখে, সে কথা চোখ বুঁজে কি বলে দেওয়া যায় না?

আর কোন জয়ের আশা করেন শাহবাগ চত্বরের কাছ থেকে যখন আইনের দীর্ঘ সংসদীয় প্রক্রিয়া সংক্ষেপিত হয়ে যায়, যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তার সমর্থন ঘোষণা করেন সংসদ থেকে, যখন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের দীর্ঘ পোস্টার নতুন করে শোভা পায় হাজার মানুষের মাথার উপরে, যখন ঘোমটা-টানা গৃহবধু চত্বরে এসে বলেন, “আর ঘরে থাকতে পারলাম না”! আর কোন জয় আশা করা যায় শাহবাগের কাছ থেকে যখন ‘চৌকস সাইবার বাগ্মী’রা ভাষা হারিয়ে ‘হাইবারনেশনে’ যায় আর আমরা প্রবলভাবে তা টের পাই! এ কথা বলতে আমি অবশ্যই দ্ব্যর্থহীন, নতুন প্রজন্মের সাইবার যোদ্ধাদের নৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে! যে কথা বলতে ভীরু ঠোঁট এতকাল কেঁপেছে আমাদের, সে কথা টর্ণেডোর মতো করে জানান দিয়ে গেছে শাহবাগ চত্ত্বর!

সেরীন ফেরদৌস: সাংবাদিক, কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর সম্পাদক।

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×