somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ যেন নয় পৃথিবীর ....... সাই-ফাই চলচ্চিত্র থেকে বেড়িয়ে আসা এ কোন ভিনগ্রহ ??

০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোকোত্রার মাটিতে পা দিয়েই আপনার মনে হবে , সাই-ফাই চলচ্চিত্র থেকে বেড়িয়ে আসা এ কোন ভিনগ্রহে এসে পড়লেন আপনি । সোকোত্রা যেন পৃথিবীর কেউ নয় ।
চারটি দ্বীপের একটি আর্কিপেলাগো । সোকোত্রা এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি । আর্কিপেলাগোর প্রায় ৯৫ শতাংশ জায়গা জুড়েই আছে এই দ্বীপটি, সোকোত্রা ।
হর্ণ অব আফ্রিকার ১৫০ মাইল পূবে আর এ্যারাবিয়ান পেনিনস্যুলার দক্ষিনে ২৪০ মাইল গেলেই আপনি দেখা পাবেন বিজন নিঃসঙ্গ এই ভৌতিক দ্বীপটির ।
কেউ কেউ বলে থাকেন , এটাই সেই স্বর্গের আসল “ইডেন গার্ডেন” নইলে এটা এতো নিঃসঙ্গতা, এতো সৃষ্টিছাড়া বৈচিত্রময়তা নিয়ে “গালফ অব এডেন” এর একপ্রান্তে একাকী জেগে আছে কেন !


চিত্র – ১. ভারত মহাসাগরে একাকী পড়ে থাকা সোকোত্রা । বাম দিকের উপরে ইয়মেনের আল-মুকাল্লা শহর আর নীচে হর্ন অব আফ্রিকার সোমালিয়া ।

লম্বায় ৮২ মাইল আর প্রস্থে ৪০ মাইল জায়গা জুড়ে , চেনা পৃথিবীর মাঝে অচেনা অদ্ভুত এই জায়গাটি আপনার কাছে মনে হবে “সাই-ফাই” সিনেমা থেকে উঠে আসা । ছয় থেকে সাত মিলিয়ন বছর আগে গন্ডোয়ানা মহাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে, কি জানি কি রাগে সেই যে ঘর ছেড়ে ছিটকে চলে এসেছে ভারত মহাসাগরে তারপর থেকেই চুপটি করে ঘাপটি মেরে আছে সোমালিয়া থেকে ২৫০ কিলোমিটার আর ইয়মেন থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দূরে এক নিভৃত কোনে ।




চিত্র - ২ সাই -ফাই কিছু নয় , এ হলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কেবল বদলে বদলে যাওয়া ।

৮০০ দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ আর প্রানীকুল নিয়ে শোভিত সৃষ্টিছাড়া এই দ্বীপ যার ভেতরের এক তৃতীয়াংশই পৃথিবী নামের গ্রহটির আর কোথাও খুঁজে পাবেন না আপনি । এমনকি এই দ্বীপটির মতোই একাকী নির্জনে থাকা গালাপাগোস, হাওয়াই , নিউ-ক্যালিডোনিয়ার মতো দ্বীপগুলিতে, যেখানেও আছে সৃষ্টিছাড়া প্রজাতির অনেক উদ্ভিদ কিন্তু সোকোত্রায় যা আছে তা সেখানে নেই । সোকোত্রার এই বৃক্ষরাজীর অনেকের পূর্বপুরুষেরাই আবার ২০ মিলিয়ন বছর আগে ঘর বেঁধেছিলো এখানে । এই ২০ মিলিয়ন বছরের বৈরী আবহাওয়ার ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে সয়ে তাদেরই উত্তরসূরী গাছপালাগুলোকেও ধরতে হয়েছে কিম্ভুত-কিমাকার রূপ । ভয় ধরানো সম্ভ্রমে আপনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে শুধু ।

চোখের সামনে পাতার বিশাল ছাতা মেলে ধরা গাছগুলো আপনাকে অবাক করে দেবে। ড্রাগনব্লাড বৃক্ষ । নামটিরও রয়েছে আলাদা এক মাজেজা । গাছটি থেকে নিঃসৃত আঠার ( রেজিন) রঙ রক্তের মতো লাল । গাছটি কেটে যে কেউ আপনাকে ভেলকি লাগিয়ে দিতে পারে এই বলে যে, দেখো....দেখো , মানুষের পাপের ফল , গাছ কাটলেই বেরুচ্ছে রক্ত আর রক্ত ! (ধর্মপ্রান মানুষদেরকে দলে ভেড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগে এরকম একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিলো ।) ভেলকি দেখাতে প্রাচীনকালে এই আঠার ব্যবহার হতো যাদু বিদ্যায় আর ম্যাজিক ঔষধ হিসেবে যা নাকি সারিয়ে তুলতো সকল রোগ । আজ এই নিঃসৃত আঠার ব্যবহার আছে রঞ্জক আর বার্নিশ শিল্পে ।


চিত্র - ৩ ড্রাগনব্লাড বৃক্ষ । আকাশের নীচে ছাতা মেলে, মাটিতে ছায়া ফেলে ......

আছে কিম্ভুত আকারের বোতল বৃক্ষ । মরুভূমির গোলাপ । মাটির ভালোবাসার প্রয়োজন নেই তার , এ যেন কঠিন পাথরের বুক আঁকড়ে আকাশকে নৈবেদ্যের গোলাপ নিবেদন । ফুলগুলি গোলাপী রংয়ের হাতছানি দিয়ে যেন ডেকে ডেকে যায় ।
অনেকেই হয়তো ইতিহাসের পাতায় বাওয়াব গাছের কথা পড়ে থাকবেন । এই মরুভূমির গোলাপ গাছগুলোও ঠিক যেন “বাওয়াব গাছ” এর ক্ষুদে সংস্করন ।







চিত্র - ৪ মরুভূমির গোলাপ ( ডেজার্ট রোজ ) বা বোতল বৃক্ষ । মাটির ভালোবাসার প্রয়োজন নেই তার , কঠিন পাথরের বুক চিরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ........



চিত্র - ৫ বাওয়াব গাছ । মিলিয়ে নিতে পারেন ডেজার্ট রোজ বা বোতল বৃক্ষের সাথে ......

চিত্র - ৬ ফ্রাঙ্কিনসেন্স । সুগন্ধী গাছ ।

প্রাগৈতিহাসিক কিছুর মতো দেখতে এই ফ্রাঙ্কিনসেন্স বৃক্ষগুলির দেখা পাবেন আপনি সোকোত্রার পূর্ব সীমানায় । এই বৃক্ষের কষ (রেজিন) এর তীব্র সুগন্ধের কারনে দাহকর্মে এই বৃক্ষগুলি প্রচুর পোড়ানো হতো । অনেকটা যেন আমাদের চন্দন কাঠের মতো ।

চিত্র -৭ দিগন্ত বিস্তৃত বালুকাময় সাগর সৈকতের রঙিন হাতছানি ।

কোথাও দীর্ঘ প্রসারী বালুকাময় সাগর সৈকত, কোথাও কোরাল রীফ নিয়ে গড়ে ওঠা পাথুরে উপকূল , আকাশ ছোঁয়া পাহাড় আর লাইমষ্টোনে তৈরী গুহা নিয়ে সোকোত্রা ভারত মহাসাগরের নীল জলে শুয়ে থাকলেও তার বুকের সবটাই জুড়ে আছে তপ্ত , শুষ্ক আর উষর পাথুরে মাটির নিনাদ । বাতাসে মরুভূমির তপ্ত আমেজ বছর জুড়ে । গড় উষ্ণতা ২৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড আপনার গায়ে আগুনের হলকা না ছোয়ালেও সুখকর নয় । বৃষ্টির দেখা বলতে গেলে পাবেন না এখানে ।

চিত্র - ৮ আকাশচুম্বী পাহাড়ের সারি , দূরে দূরে ......,

চিত্র -৮ আছে বোল্ডার আর মাটি ধ্বসে ভয়াল বেলাভূমি ……

চিত্র -৯ আওমাক বীচ...............

দেখা পাবেন ধাঁধা লাগানো সাদা সাদা বালিয়াড়ির ঢেউ নিয়ে মাইলের পর মাইল পড়ে থাকা আওমাক বীচ । মৌসুমী তীব্র বাতাস এই বালিয়াড়িকে নতুন নতুন আকৃতিতে গড়ে তুলছে প্রতিনিয়ত ।
বিচিত্র এক ভূ-প্রকৃতি নিয়ে সোকোত্রা পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ।

চিত্র -১০

চিত্র -১১

চিত্র -১২

চিত্র -১৩

চিত্র -১৪

চিত্র -১৫ - ১৫ মিটার ব্যাসার্ধ, ৮ মিটার উচ্চতা আর ১ কিলোমিটার আনুভূমিক গভীরতা নিয়ে হালা সমুদ্র তীরের “ হক কেভ ” ।

মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে একাকী পড়ে থাকা এ মাটিতে বাকী পৃথিবীর বিবর্তন ধারার কোনও ছোঁয়া লাগেনি । তাই সে পৃথিবীর হয়েও যেন নয় পৃথিবীর । প্রাগৈতিহাসিকতার ছাপ তার সারা গায়ে ।

বিচিত্র এর ইতিহাস ।

খ্রীষ্টিয় ১ম শতকে একটি গ্রীক নেভিগেশান এইডে আপনি দ্বীপটির প্রথম উল্লেখ দেখতে পাবেন । ৩য় শতকের তৈরী একটি কাঠলিপি আর গুহাচিত্র সহ বিভিন্ন ভাষার লেখা উদ্ধারের সাম্প্রতিক আবিষ্কারে মনে করা হয় অতি প্রাচীনকাল (খৃষ্টজন্ম পূর্ব ) থেকেই ব্যবসার একটি ঘাঁটি হিসেবে বিভিন্ন জাতি এই দ্বীপটিকে ব্যবহার করে এসেছে । আশ্চর্যের বিষয় হলো , গুহার দেয়ালে লেখা এসবের অধিকাংশই ভারতীয় ব্রাহ্মী ভাষায় লেখা । আর আছে দক্ষিন আরবী, ইথিওপিয়ান , গ্রীক, পালমিরিয়ান, ব্যাক্ট্রিয়ান অক্ষর ও ভাষা ।
তাহলে কি দ্বীপটি তার অবস্থানের কারনেই প্রাচীন কালে ভারত মহাসাগরীয় বানিজ্য পথে বিভিন্ন জাতি কর্তৃক অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো ?
প্রখ্যাত ভ্রমনকারী মার্কোপোলোও সোকোর্তার কথা বলে গেছেন তার ভ্রমন কাহিনীতে । বলেছেন, এখানকার অধিবাসীরা পরিবর্তিত খ্রীষ্টান হলেও রোমের পোপের ধর্মানুসারী ছিলোনা । তারা ছিলো আদতে “নোস্ত্রোনিয়ানস” যারা প্রাচীন যাদুবিদ্যার চর্চ্চাও করতো । এরা এসেছিলো সম্ভবত ভারত থেকে, খ্রীষ্টের জন্মেরও আগে । কালের পালাক্রমে এই সোকোত্রাবাসীরা খ্রীষ্টান থেকে মুসলিম গোত্রে নিজেদের নাম লেখায় । কারন ১৫০৭ সালের পর্তুগীজ নৌ-কমান্ডার ত্রিস্তান ডি চুনহার ভ্রমনবৃত্তান্ত থেকে জানা যায় , সোকোত্রাকে তারা বেছে নিয়েছিলেন বানিজ্যিক প্রয়োজনে ভারতে যাওয়ার নৌপথে একটি স্ট্রাটেজিক পয়েন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে এবং একই সাথে বন্ধুসুলভ খ্রীষ্টানদের ইসলামের শাসন থেকে রক্ষা করতে । এরপরে ১৫১১ সালের দিকে সোকোত্রা ইয়োমেনের মহড়া সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হলে সোকোত্রাবাসীরা সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন । যা আজও বহমান । ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশরা দ্বীপটি কিনতে চেয়েও ব্যর্থ হয় যদিও ১৮৮০ সালে সুলতান ব্রিটিশদের হাতে সমগ্র সালতানাতের রক্ষা করার দায়িত্বটি ছেড়ে দেন । ১৯৬৭ সালে মাহেরা সালতানাতের বিলুপ্তি ঘটলে সোকোত্রা স্বাধীন দক্ষিন ইয়োমেনের অংশ হয়ে যায় । বর্তমানে এই প্রাগৈতিহাসিক দ্বীপটি রিপাবলিক অব ইয়োমেন এর একটি অংশ ।

নামটি তার এমন কেন ? বিতর্ক আছে “ সোকোত্রা” শব্দটি নিয়ে । কেউ বলেন আরবী শব্দ “সুগ” বা “সুক” যার অর্থ ‘বাজার” , সেখান থেকেই নামটির ব্যবহার । কেউ বলেন শব্দটি সাংস্কৃত যার অর্থ “ স্বর্গীয় দ্বীপ ” ।

চিত্র -১৬ -হাজহির পর্বতের পায়ের কাছে অবহেলায় পড়ে থাকা প্রধান জনবসতি - “হাদিবো” ।

সোকোত্রার মানুষেরা.....

৩ হাযার বছরের ও আগে মানুষর পদধূলি পড়েছিলো এই সৃষ্টিছাড়া দ্বীপে । সম্ভবত প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক, রোমানজাতি তাদের পায়ের চিহ্ন এঁকেছিলো এখানে প্রথম । এখানকার সম্পদে হাত পড়েছিলো সেবার রানী আর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এর মতো মানুষদের। এরপরে সময়ের সাথে সাথে পাল্টে গেছে একে একে সব ।
সৃষ্টিছাড়া এই দ্বীপে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা মাত্র ৪০ হাযার । সৃষ্টিছাড়া বলেই হয়তো সভ্যমানুষেরা এর ছায়া মাড়াননি । নইলে মাত্র দু’বছর আগে কেন এখানকার একমাত্র রাস্তাটি তৈরী হবে ?
এখনকার মানুষেরা প্রায় সবাই এখন দক্ষিন আরব থেকে আসা । প্রধানত ইয়োমেনাইটস, মাহরা ও হাদ্রামুত এলাকার মানুষ এরা। ভাষা “সোকোত্রী” যা প্রাচীন ভাষার সাথে আরবী ভাষার মিশ্রন । আলাদা করে আরবীর ব্যবহার ও আছে । পুরনো সংষ্কৃতিকে আঁকড়ে আছে এখনও । বেদুইন জাত । পাহাড়ী এলাকায় এরা পশু চড়িয়ে খায় , জন্মায় কিছু ফসলও । প্রধান শহর বা রাজধানীও বলতে পারেন যে “হাদিবো” শহরটিকে সেটা পড়ে আছে সমুদ্র সৈকতে হাজহির পর্বতের পাদদেশে । এখানকার মানুষেরা বেশীর ভাগই মৎস্যজীবি । কেউ কেউ সুনীল জলের নীচে মুক্তা খুঁজে ফেরে । কিছু কিছু কৃষিকাজেও এখানকার মানুষ জড়িয়ে আছে । এতোদিন অবহেলিত থাকার পরে আধুনিকতার ছোঁয়া সবে লাগতে শুরু করেছে এর গায়ে । ইয়োমেনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন অবশ্য সোকোত্রা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে গেছে বারবার । তাই এখনও সোকোত্রার গা থেকে আদিম গন্ধ একেবারে যায়নি ।
সোকোর্তার নারীরা সারা অঙ্গ এখনও রাঙিয়ে তোলে মেহেদীর কারুকাজে । আরবীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া যেন এখানেও । মেহেদীর রঙে রাঙা হয়ে ওঠা সোকোত্রা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ।

চিত্র -১৭ চরণ রাঙানো কারুকাজে , রিনিকি ঝিনিকি ছন্দ বাজে .................

চিত্র -১৮ সোকোত্রায় সোকোত্রীয়ান ইয়োমেনের মানুষেরা..................

চিত্র - ১৯ টুরিষ্ট ডেষ্টিনেশান “দেতওয়া লেগুন” এর পাড়ে ছাগল পালিকা সাদিয়া । জন্ম আর বেড়ে ওঠা এখানকারই এক পাহাড়ের গুহায় ।

চিত্র -২০ উমাগ সৈকতের কিশোরী...............



চিত্র -২১ স্থানীয় জেলে ..................





চিত্র - ২২ মাছ ধরার স্বর্গ ................. একদিন দল বেঁধে ......

সোকোত্রার প্রানীকুল....

১৮০ প্রজাতির পাখিতে সোকোত্রা মুখরিত । ৬ টি প্রজাতি আবার বিলুপ্তির পথে । সোনালী পাখার “গ্রস বীক” ইয়োমেনের জাতীয় পাখি । এবং
প্রজাপতি রয়েছে ১৯০ রকমের । ৬৮০ প্রজাতির মাছ । ৬০০ প্রজাতির সরীসৃপ আর পতঙ্গের দেখা পেলেও এর ৯০ শতাংশই বিলুপ্তির পথে ।
তাই ইউনেস্কোর তরফ থেকে এই দ্বীপটিকে ২০০৮ সালে “ওয়ার্ল্ড ন্যাচেরাল হেরিটেজ সাইট” ঘোষণা করা হয়।

চিত্র - ২৩ “মনোসেন্ট্রোপাস বালফুরি” সোকোত্রার হারিয়ে যেতে বসা মাকড়সা ।

চিত্র - ২৪ “সোকোত্রা ষ্টার্লিং” পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে পাখি ।

চিত্র - ২৫ “ক্যামেলিও মোনাকাউস”
“ক্যামেলিও মোনাকাউস” যে সরীসৃপের হিসসসসসসস....... শব্দ শুতে পেলে আপনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলবেন চিরতরে । এমনই যাদুকরী শক্তি নাকি আছে এর, যাদের এই সৃষ্টিছাড়া দ্বীপটি বাদে পৃথিবীর আর কোথাও আপনি দেখতে পাবেন না !

চিত্র - ২৬ রোদের প্রচন্ড তাপ এড়াতে গাছে উঠে পড়া ঢাউস সাইজের শামুক ।

চিত্র - ২৭ বিলুপ্তির পথে মিষ্টি পানির রঙিন কাকড়া ।

চিত্র - ২৮ খাবার নিয়ে ঘরে ফেরা ক্রিষ্টেল স্ত্রী বাজপাখি, মায়ের মমতায় মাখামাখি ।

চিত্র - ২৯ বিলুপ্তির পথে এডিথকোলিয়া গ্রান্ডিস ।

চিত্র - ৩০ বিচিত্র অর্কিড “কারাল্লুমা সোকোত্রানা”

বদলে যাচ্ছে পৃথিবী । ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে সোকোত্রার গায়েও । ছোট্ট একটি এয়ার পোর্টও তৈরী হয়েছে দল বেঁধে আসতে থাকা ভ্রমন পিপাসুদের জন্যে । এভাবে হয়তো একদিন সোকোত্রা পাল্টে যাবে , প্রাগৈতিহাসিকতার গর্ব মুছে যাবে তার । সাই-ফাই চলচ্চিত্র থেকে বেড়িয়ে আসা কোন ভিনগ্রহ মনে হবেনা আর তাকে।

বহুদূরে , একাকী থেকে থেকে, আধুনিক পৃথিবীর ছোঁয়া বাঁচিয়ে যে মানুষেরা এতোদিন ধরে রেখেছে তাদের সংস্কৃতি, তাদের ভাষা, এতোদিন যে বৃক্ষরাজী আর প্রানীকূল ২০ মিলিয়ন বছরের বৈরী আবহাওয়ার ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে সয়ে এসেছে তাতেও কি একদিন লাগবে গ্রহন ?

সর্বশেষ : গ্রহন লাগতে শুরু করেছে এই লগ্নেই । পৃথিবীর ইডেন বাগানে ঢুকে পড়েছে সাপ । রাজনৈতিক বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে সোকোত্রার আকাশে । আরব আমীরাতের লোলচক্ষুর দৃষ্টিতে পড়েছে সে । অতি সম্প্রতি আমীরাতের সেনা বাহিনী ইয়মেনের হাত থেকে জবর দখল করে নিয়েছে সোকোত্রা । বলছে , আমীরাত নাকি ৯৯ বছরের জন্যে লীজ নিয়েছে দ্বীপটি । কার কাছ থেকে লীজ নিয়েছে , সে ব্যাপারটি পরিষ্কার নয় । তাদের উদ্দেশ্য, এখানে নাকি একটি বানিজ্যিক বন্দর গড়ে তোলা হবে ।

স্বর্গের পতনের এই শুরু .....


কৃতজ্ঞতা অন্তর্জালের কাছে ।
তথ্যসূত্র ও ছবি -
https://en.wikipedia.org/wiki/Socotra
http://www.dailymail.co.uk/sciencetech/article-2431857/The-lost-world-Socotra-remote-island-plants-20-MILLION-years-old.html#ixzz3kelJH39A
http://www.biologie.uni-rostock.de/wranik/socotra/texts/31.htm
http://www.aljazeera.com/indepth/inpictures/2015/02/precarious-living-yemeni-island-socotra-150213145010826.htm
http://hadhramouts.blogspot.com/2014/02/socotra-sights-and-people.html

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৫
৬৯টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×