somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী.......বোমা বিস্ফোরণে সলিল সমাধি ! :|

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার পত্রিকা অফিসের পিয়ন - রত্তন। পুরোনাম ছিদ্দিকুর রহমান। লেখাপড়ায় ঢং ঢং। সেভেন- এইট পাশ। তবে কাজের ছেলে। কিছু করতে বললে বাড়তি কিছু সে করবেই নিজের মনমতো। ব্যাখ্যাও দেবে একটা না একটা। তার কাজ, পত্রিকা অফিসের ফাইফরমাস খাটা, প্রেসে লেখা পৌঁছে দেয়া, সেখান থেকে প্রুফ এনে আমার টেবিলে রাখা , কারেকশানের পরে আবার প্রেসে পৌঁছে দেয়া, পত্রিকা ছাপার কাজ কদ্দুর কি হলো তার খবরা খবর রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি তখন মেডিক্যালের ছাত্র এবং দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল জেলা প্রতিনিধি। পাশাপাশি বরিশাল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক "গণডাক" নামের কাগজটির জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবটাই আমার , নামেমাত্র সম্পাদক একজন থাকলেও । সাপ্তাহিক বলে কাজের চাপ বেশি থাকার কথা নয়। মেডিক্যালের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সাইকেল মেরে সদররোডে আমার পত্রিকা অফিসে এসে কিছু কাজ সেরে রেখে যাই। দুপুরের পরে আর মেডিক্যালের ক্লাস থাকেনা , তখন থেকে রাত অবধি আমার ঠাঁই পত্রিকা অফিসেই।
সময়কাল ১৯৭৩ কি ১৯৭৪। মেডিক্যালে বসেই শুনতে পেলুম শহরের আমবাগান এলাকার এক বাগানে কয়েকটা পিচ্চি ছেলে খেলার ছলে মাটি খুঁড়তে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া লম্বা মতো কিছু একটা জিনিষ নিয়ে খোঁচাখুচি করার সময় তা বিস্ফোরণে (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন পাকিস্তানী বিমানের ফেলা অবিস্ফোরিত শেল) ২জন ছেলে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। শহরে বেশ হৈ-চৈ। কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে খবরটি সংগ্রহ করে অফিসে এসে এই গরম খবরটি লিখে রত্তনকে দিয়ে বললুম- "এই নিউজটা এহনি প্রেসে দিয়া আয়। কাইল-ই তো পত্রিকা বাইরাইবে, এইডা লীড নিউজ হইবে। আমি কলেজ থাইক্কা দুফারে আইয়া নিউজ হেডিংটা লেইক্কা দিমু। এরমইধ্যে য্যানো নিউজটা কম্পোজ করা হইয়া যায়।"

বলে রাখা ভালো, সে সময়ে কিন্তু ট্রেডল মেশিনে ছাপার কাজ চলতো।
জরুরী খবর। কম্পোজ হলো কিনা নাকি প্রেসের লোকেরা ফেলে রেখেছে এ নিয়ে উদ্বেগ ছিলোই। আজকেই পত্রিকা ছাপার কাজ শেষ হবে এবং কাল সকালে তা বেরুবে।
তাই দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া ভুলে আমি সরাসরি প্রেসে।
এসেই চীফ কম্পোজার কাম মেকাপ-ম্যান হাবিব মিয়াকে জিজ্ঞেস করলুম - কদ্দুর ?
হাবিব মিয়া বললো, সব কাজ শেষ এমনকি মেকাপও নাকি শেষ। মেশিনে ওঠানো আছে প্রথম পাতা। আমি বললেই ছাপা শুরু হবে।
বললুম - "কই দেহি। লীড নিউজের হেডিংইতো দেই নাই। মেশিনে উডাইলেন ক্যামনে ? হেডিং দেছে কেডা ? দেহান... দেহান। "
হাবিব মিয়ার অম্লান জবাব- " আমরা দিমু ক্যা! হেডিং তো রত্তন দেছে।"
পাশে থাকা রত্তন বেশ বাহাদুরী ভঙিতে দাঁত বের করে বললো- "বাবু ভাই আমি দিছি। আপ্নের আইতে দেরী দেইখ্যা ........"
বললুম - "হাবিব মিয়া মেশিন প্রুফ দ্যান তাড়াতাড়ি।"
প্রুফ দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম! বড় বড় টাইপে লীড নিউজ লেখা - "বোমা বিস্ফোরণে ২জনের সলিল সমাধি।"
রাগে এবং হাসিতে মেজাজের চৌদ্দগুষ্ঠীর দফারফা। রত্তনকে জিজ্ঞেস করলুম - ওই হারামজাদা সলিল সমাধি কি ? পানিতে মরছে কেডা ?
রত্তনের বিকারহীন জবাব - "ক্যা বাবু ভাই, এক্সিডেনে মরলেই তো পেপারে ল্যাহে সলিল সমাধি। এইতো কয়দিন আগে একটা লঞ্চ ডোবজে। তহোন পেপারেই তো ল্যাকছে - সলিল সমাধি।"
আমি রাগ চেপে রেখে বললুম - "ওই..... সলিল সমাধি মানে কি জানোস ?"
রত্তনের সবজান্তা জবাব -" ক্যা এক্সিডেনে লগে লগে মইররা যাওয়া।"
আমি লা-জওয়াব তবুও বললুম - " হারামজাদা, থাবড়াইয়া কানসা ফাডাইয়া হালামু......."


ছবির সূত্রঃ নেট থেকে ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:১৩
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×