somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শূন্যস্থান পূরন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মহল্লায় পাশাপাশি বাড়ি গুলি দূর থেকেই কেমন যেন ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি লাগে। পাশাপাশি বাড়ির মাঝখানে খালি প্যাসেজ চলে গেছে। মহল্লার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হেটে যেতে প্রায় ১০মিনিট বা তার একটু বেশি সময় লাগে। প্রায় ১৫ফিট মত চওড়া, লম্বা রাস্তার দুপাশে সারি সারি করে কখনো ৬ তলা, কখনো ৭ তলা বাড়ি, ২/৩ তলা কোনো বাড়িই নেই। এখনকার বাড়ির মালিকরা ২ তলা বা ৩ তলা বাড়ির কথা চিন্তাও করেন না। সৌখিনতার বদলে জায়গা করে নিচ্ছে বিত্তর প্রদর্শন, সাথে আয় বৃদ্ধির চিন্তা ভাবনা। অবশ্য এই চিন্তা যুগের সাথে যে খুব বেশি অমূলক তা নয়। সব কিছুর দাম বাড়ছে, বেশি আয় দরকার তাই হয়ত থাকবার রুম গুলি ছোট হয়ে যাচ্ছে, নামে মাত্র বারান্দা হচ্ছে, ছাদে ছোট ছোট রুম হচ্ছে এবং তা ভাড়াও দেয়া হচ্ছে, তালা ঝুলছে ছাদে। উঠান! সে তো জাদুঘরে জায়গা নিয়েছে কবেই। বাড়িগুলি দেখতে দেখতে হাটছে আর ভাবছে হোসেন। তবে বাড়ি গুলি বাইরে থেকে দেখতে বেশ। সুন্দর করে রং করা, ডিজাইন, ভেতরে কি খবর কে জানে?

মহল্লার বাড়িগুলি এক সারিতে ৫টা কি ৬টা করে, তারপর পরের সারি তে আবার ৫/৬ টা করে সাজানো। দুই সারির মাঝ খানে রাস্তা, যে রাস্তা এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় গিয়ে উঠেছে। এক সারির প্রতিটি কলাম বরাবর আবার ৮/১০ টি করে বাড়ি। এক কলামের বাড়ি থেকে আবার আরেক কলামের বাড়ির মাঝে একটি করে প্যাসেজ এর মত করে আছে। কলামের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় দুটি গেট দিয়ে, তার উপর তারজালি দিয়ে বন্ধ করা। কোন লোক চলাচল নিষিদ্ধ।

এমনই দুই বিল্ডিং এর মাঝামাঝি প্যাসেজ এর গেটের সাথে প্রায় লাগোয়া টং দোকানে রাত্রের শেষ চা খেতে আসে হোসেন প্রায়ই। চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আনুমানিক ১২টার মত বাজে ৷ হঠাৎ ই ধুপ করে শব্দ এলো। শব্দ শুনে মনে হোলো বন্ধ প্যাসেজের মাঝে কিছু একটা পড়েছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দোকানদার কে জিজ্ঞেস করল কিসের শব্দ এটা? দোকানদারের উত্তর
- আর কইয়েন না মামা, এই রাত আইলেই চুরের মত সব বাসার লোকেরা বারান্দা, নইলে জানলা দিয়া ময়লা বাইন্দা, ময়লা ফালায়। কোনদিন যে ময়লার ভাগার হইয়া যায় কে জানে! প্রতিউত্তরে হোসেন শুধু বলল, ও আচ্ছা।

এরপর এক মাসের উপর হোলো, মহল্লার সেই দোকানে চা খেতে যাওয়া হয় নি৷ বহুদিন পর চা খেতে ওই প্যাসেজের সামনে গিয়ে দাড়াতেই বিকট গন্ধ এসে নাকে ঠেকল, দাড়ানো যাচ্ছে না। চায়ের দোকানটা নেই৷ বরং চায়ের দোকানের জায়গায় প্যাসেজ ঠেলে ময়লা আবর্জনা এসে জায়গা করে নিচ্ছে আস্তে আস্তে। আর রাস্তায় মানুষজন প্রায় নাক চেপেই দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। হোসেন সরে এল। খানিকটা দুরে গিয়ে দাড়ালো। চা পাবে কোথায় এখন? আসে পাশে তো চায়ের কোনো দোকান ও দেখা যাচ্ছে না। রাত ঘনিয়ে আসছে। একটু পড়েই এই মহল্লা ঘুমিয়ে পড়বে।

দুটি মানুষের মনের মাঝেও মনে হয় এমন কিছু জায়গা থাকে। যেই জায়গাটা এমন পরিস্কার থাকে, সেখানে কত কিছু স্বাদের চর্চা চলে। আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা এই পরিস্কার বিষয়গুলি বোধহয় ওই পরিস্কার প্যাসেজ জুড়েই খেলে বেড়ায়। মনের অজান্তে অথবা লুকিয়ে ওই ছোট ছোট নোংরামি, ওই জেনেও না জেনে করা ভুল, মিথ্যা আস্তে আস্তে ময়লা করে ফেলে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনরা সকালে এসে হয়ত মহল্লার বাড়ির পাশের এই জায়গাটা পরিস্কার করে দিয়ে যাবে। কিন্তু এই মনের আবর্জনা পরিস্কারের লোক কই?

ভুল বোঝায় প্রিয় হয়ে যায় অপ্রিয়,
ভুল করায় বন্ধু হয়ে যায় চোখের বালি
জমে থাকা ক্ষোভে সংসার হয়ে যায় অশান্তির জায়গা।
কেন এমন হয়? যেন নিজেকেই প্রশ্ন করে হোসেন। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরায় হোসেন, দীর্ঘ টানে ধোয়া ছাড়ে৷ প্যাসেজের দুই পাশে দুটি লোহার গেট দেয়া। আটকানো থাকে প্রায় ই। যে তদারকি করে তার কাছেই হয়ত চাবিটা থাকে। মনের প্যাসেজের সেই দরজাটা সম্ভবত অহংবোধ। সেটার চাবি যার যার নিজের কাছে থাকে। নিজের নিয়ন্ত্রনেই থাকে৷ শুধু ব্যাপার হোলো ইচ্ছা বা অনিচ্ছার

সিগারেট ফেলে হোসেন হাটা শুরু করে। কি যেন ভাবছে, অন্যমনস্ক। হয়ত মন পরিস্কারের রাস্তা পেয়ে গেছে।
মনে যে শূন্যস্থান ছিল, তা হয়ত এবার পূরন করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×