আমার নানা বাড়ীতে একটা জুমা মসজিদ আছে। এই মসজিদে বছর বিশেক আগে একবার ‘সময়ে কিঞ্চিত মাথা গরম হওয়া’ সেকার বাপকে ইতেকাফে বসানো হয়।
সেবার ২৫ রমজানের দিন জামাত না পেয়ে মসজিদের বারান্দায় আসরের নামাজ পড়ে সবে সালাম ফিরিয়েছি। মসজিদে কারা যেন বাকবিতন্ডা করছে। অকস্মাৎ দেখি শেকার বাপ মসজিদ থেকে বেরিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়েছে, তার পেছনে ধর ধর বলে জনা কয় মুসল্লিও দৌড়াচ্ছে।
ক্ষীণ স্বাস্থ্যের সেকারবাপ মুসল্লিদের সাথে পেরে উঠেন নি। উনাকে চ্যাংদোলা করে মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে আসা হল। বিরাট জটলার ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে যা বুঝলাম তা হচ্ছে- ভাল ভাল খাবার এবং ডেলি ৫০টাকা হাজিরার প্রতিশ্রুতিতে উনাকে ইতিকাফে ঢুকানো হয়েছে। ২২/২৩ রমজানে হাজিরার সব টাকা পরিশোধ করার কথা কিন্তু ২৫ রোজা পর্যন্ত উনাকে কোন টাকা দেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত ভাল ভাল খাবার দেয়ার কথা সে জায়গায় গতকাল ইফতার করেছেন চাল আর পানি দিয়ে। সন্ধ্যা রাতে ‘এলোইচার’ শাক দিয়ে ভাত, ভোর রাতে ‘ঠোঁআশ ভাজি’।তাই এই ইতিকাফ করবেন না ঘোষণা দিয়ে তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান।
মাষ্টার পাড়া মসজিদে একবার দুই ‘কোয়াটার ম্যাড’কে ইতিকাফে বসানো হয়।কয়েকদিন পর নাক ডাকাকে কেন্দ্র করে দুজনের তুমুল কাইজ্জা।পরিনতিতে যোহর পড়া মুসল্লিরা এক দৃষ্টি নন্দন কুস্তি উপভোগ করেছিল।
আমাদের পাশের নতুন সমাজ মসজিদে একবার বেনামাজী,বে এলেম আলী মেস্তরিকে ইতিকাফে বসানো হয়। সে আমলেও উনার ডেলি দুই বান বিড়ি লাগতো। অভ্যাসটা মসজিদেও ছাড়তে পারেননি।২৬ রমজানে ইমাম সাহেব ফজর পড়াতে এসে দেখেন মসজিদ ধোঁয়ায় অন্ধকার। মসজিদে বিড়ি কেন খাইছে এই নিয়ে ইমাম,আলী মেস্তরি তর্কাতর্কি। এক পর্যায়ে ‘তুই থাক তোর এতেকাফ লই’ এই বলে আলী মেস্তরি মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান।
ফরজ ইবাদত ব্যতিত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যেসব ইবাদত করা হয় তার মধ্যে ইতেকাফ একটি অন্যতম ইবাদত।
ইতেকাফের জন্য ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার পর মসজিদ থেকে বের হবে। মহল্লার জামে মসজিদে ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়ার মানে হলো, সবার পক্ষ থেকে কমপক্ষে একজন হলেও আদায় করতে হবে। অন্যথায় পুরো এলাকাবাসী গুনাহগার হবে।
পুরা এলাকাবাসী গুনাহগার হওয়া থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য প্রায়শ দেখা যায়, টাকা পয়সা বা ভাল খাওয়া দাওয়ার লোভ দেখিয়ে শেকার বাপ টাইপের কাউকে,হাফ/কোয়াটার ম্যাড টাইপের কাউকে বা এলাকার ঘাটের মরা কোন বৃদ্ধকে অধিক সোয়াব আর সহজে বেহেস্তপ্রাপ্তির কথা বলে মসজিদে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এদের না থাকে ওজুর খেয়াল, না থাকে হুশ দিশা।বার্ধ্যক্যজনিত কারনে হুশ হারা অনেকের ‘মসজিদ খারাপ’ করারও ইতিহাস আছে।
ইতিকাফের মর্তবা,সোয়াব,গুরুত্ব অপরিসিম।এই সময়ে নানা সুক্ষ্য ও খুটিনাটি আমল রয়েছে যা আলেম ব্যাতিত বাঙ্গাল মানুষের জানা সম্ভব নয়।তাই ইতিকাফের মত গুরুত্বপুর্ন একটা ইবাদতে শেকার বাপদের না বসিয়ে কোন অভিজ্ঞ আলেমকে বসানোই অধিক যুক্তিযুক্ত।
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ব্যাতিক্রম থাকতে পারে তবে আমি কোন সময় কোন আলেমকে ইতিকাফে বসতে দেখিনি।আলেমরা দুনিয়াদারী নিয়ে মানুষকে ব্যাস্ত না থেকে আল্লাহ মুখি, মসজিদ মুখি হওয়ার ওয়াজ শুনিয়ে ৫০/৬০ হাজার হাদিয়া নিয়ে দুনিয়াবি ফায়দা হাসিল করেন।অথচ ৯/১০ দিনের জন্য দুনিয়া থেকে দূরে থেকে অপার রহমতের ইতিকাফ করতে তাঁদের দেখা যায়না।
আল্লাহ আমাদের সমাজগুলিকে ইসলামের বিধানমতো খোদার প্রেমে মগ্ন থাকা যথাযথ আলেমদের দ্বারা ইতেকাফ পালন করানোর তৌফিক দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:২৪