somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত ৮বছর যা দেখিনি এখন তাই দেখতে হচ্ছে !!! এর নাম কি দিন বদল???

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সাধারণত কারো বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পছন্দ করি না। বিশেষ করে সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে পছন্দ করি না। আমার পূর্ববর্তী পোস্টগুলো দেখলেই তা সহজে বুঝবেন যে কেউ। কিন্তু যখন ঘরের কাছে এমন কিছু ঘটতে থাকে যা মেনে নেয়া যায় না তখন বাধ্য হয়ে লিখতে হয়। তবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি, এখন থেকে সব ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধেই আমি লিখে যাবো। সব দলের সরকারের বিরুদ্ধেই।

গত আট বছরে আমাদের এলাকায় যা হয়নি তা এবার হচ্ছে। হচ্ছে শুধু না, বেশ রমরমাভাবেই হচ্ছে। আর তা হলো যাত্রা। যাত্রা বলতে আপনি কি বোঝেন? যা বোঝেন তা না। এ যাত্রা সে যাত্রা না। গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় আমাদের এলাকায় কেউ যাত্রা করার সাহস পায়নি। একবার কয়েকজন মাতাল নেতা উদ্যোগ নিচ্ছিল, কিন্তু এলাকার মুরব্বীগণ প্রতিবাদ করেছিল। তারা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করে এবং এলাকার শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের বলা হয়। পরে ক্ষমতাসীন নেতারা তাদের অধস্তন মাতাল নেতাদের সামাল দিয়ে তৎকালীন আয়োজনের যাত্রাভঙ্গ করে।

এবারেও প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন মনে হয় যন্ত্র হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগের নেতাদের মুখের বাণী তাদের কাছে গীতার বাণীর মত পবিত্র মনে হয়। তাই তারা সাধারণ মুরব্বীদের কথা রাখলেন না। ক্ষমতাসীন নেতাদের ধরা হলো। তারা মুরব্বীদের বোঝালেন দেশের সংস্কৃতি বিকাশের জন্য যাত্রাপালা হতে যাচ্ছে। সাধারণ শুদ্ধ যাত্রাপালা। এখানে কোন ধরণের খারাপ কাজ হবে না, জোয়া হবে না। শুধু যাত্রা আর পুতুল নাচ। দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার। আপনারা ঠান্ডাভাবে ইবাদত করতে থাকেন। এ নিয়ে আপনাদের মাথা ঘামাতে হবে না। কোন ধরণের অসভ্যতা দেখলে আমরাই যাত্রা বন্ধ করে দেব।

অতঃপর অনেক প্রতীক্ষার যাত্রাপালা শুরু হলো। প্রথম দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গিয়ে উদ্বোধন করে আসলেন। প্রথম দিন বেশ ভাল কিছু আয়োজন ছিল। অনেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাত্রা উপভোগ করলেন। আমার বাসা থেকে যাত্রার প্যান্ডেলের দূরত্ব হাফ কিলোমিটার। প্রথম ৩ দিন ভালই ছিল। তৃতীয় দিন চ্যানেল আইয়ের ক্ষুদে গানরাজদের একটা দল এসে যাত্রার আগে গান গাইল। আমি ভাবলাম যাক তাহলে, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। কিন্তু আমার ভাবনার গুরেবালি পড়লো ৪র্থ দিন। চতুর্থ রজনী থেকে শুরু হলো হাউজি, পঞ্চম দিনে বাহিরে জোয়ার আসর। তারপর একে একে আরো খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি এখনো যেতে পারিনি। আমার বন্ধুদের কাছে শুনলাম- রাত বারোটার পর শুরু হয় আসল যাত্রাপালা। অর্ধনগ্ন রমনীদের উত্তেজনাকর নৃত্য আর মদের রমরমা ব্যবসা। রাত বারোটার পর আর সিনিয়র জুনিয়র নেই, নেতা কিংবা পাবলিকের বাধ্যবাধকতা নেই। অষ্টম শ্রেণীর ছোট্ট বালক থেকে শুরু করে পঞ্চশোর্ধ মাতাল নেতাদের আসর হয়ে ওঠে। যার টাকা আছে সেই সেখানে রাজা। রাতে অবাধে মদ খাওয়া চলছে। চলছে নগ্ন নৃত্য। টাকা দিয়ে পতিতাদের যেভাবে নাচতে বলা হচ্ছে সেভাবেই নাচ দেখাচ্ছে। কখনো টাকার জন্য সম্পুর্ণ উলঙ্গ হয়ে নাচ দেখাচ্ছে। আর যাই হোক, এলাকার উঠতি বয়সি ছেলেরা খুব ফুর্তিতে আছে। এখন আর কেউ প্রতিবাদ করে না। যারা আয়োজক তাদের হাত অনেক দূর পর্যন্ত। সরকারের কল কাঠি নাড়ে তারা।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এসব ঘটছে যেখানে, সেখান থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসনিক বড় কর্তাদের কোয়াটারের দূরত্ব বড়জোর বিশ গজ। অর্থাৎ অফিসার্স কোয়ার্টারের পর একটা রাস্তা। রাস্তার ওপাশে টিএন্ডটি মাঠের মধ্যে অশ্লিলতার খেলা। এপাশে সকল শব্দ পেয়েও নির্বিকার অফিসার। সরকারকে এত ভয় পেয়ে দেশসেবা কিভাবে করবে এরা? আর আমাদের এলাকার সাংবাদিকরা একটাও তো মানুষের বাচ্চা না (দুজন মাত্র আছে যাদের গুনতিতে ধরা হয় না)। সব শালায় দালাল আর লোচ্চা টাইপের লোক। আমি সাংবাদিকদের খুব ঘনিষ্ট বলে আমার এলাকার সাংবাদিকদের সবার চরিত্র মুখস্ত। সবাই হাউজিতে মাগনা খেলে, যাত্রায় ফ্রি ঢুকে আর বিনা পয়সায় মদ খেতে পারে। তাই এখন পর্যন্ত এসব অসভ্যতার বিরুদ্ধে তাদের কলম চলছে না। আমি যখন এ লেখাটা লিখছি তখন আমার থেকে মাত্র ৫ গজ দূরে দুজন সাংবাদিক (একজন আবার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি) আর একজন থানার এসআই আলাপ করছে গত রাতে তারা হাউজিতে কে কত জিতেছে আর কোন পতিতার নাচ সবচেয়ে জোসের হয়েছে। আমার মন চায় রাত বারোটার পর পুরো যাত্রা প্যান্ডেলটা এক হাত দিয়ে উঠিয়ে উল্টিয়ে দিতে পারতাম।

আমরা কি এমন সরকারের জন্য নৌকায় ভোট দিয়েছিলাম। এই কি তাহলে দিন বদলের নমুনা? আমার ছোট ভাইয়ের চরিত্র নষ্ট করার ফাদ পেতে দিন বদল করা হচ্ছে?

অনেক কষ্ট নিয়ে নিজের এলাকার কষ্টের কথা লিখলাম। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৫৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×