প্রতিদিন যৌতুকের বলি হওয়া অনেক নারীর কাহিনী পড়ি। এগুলো এখন অনেকটা কমন হয়ে গেছে। আবার এর মধ্যে এমনও থাকে যা কিছুটা রংচং মাখানো কল্পনাপ্রসূত আবার কোন কোনটা একেবারে স্বামীকে ফাসিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু আজ ৬ অক্টোবর ২০১০ একটি নিউজ দেখলাম পত্রিকায়, যৌতুক সংক্রান্ত, তবে বেশ খারাপ লাগলো মেয়ের অসহায়ত্ব নিজের মনে করে বিবেচনা করে। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। খবরের প্রথম দিকটা গতানুগতিক হলেও পরের দিকটা মর্মান্তিক লেগেছে আমার কাছে।
স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের পাশবিক অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন সালমা আক্তার (২২)। সিগারেটের আগুনে ঝলসে গেছে শরীরের বিভিন্ন অংশ। বিদ্যুতের শকে একেবারে পুড়ে গেছে হাতের দুটি আঙ্গুল। তারপরেও চলছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হুমকী। এ অবস্থায় পিতা-মাতাহীন দরিদ্র সালমা আক্তার মৃত্যুকেই এখন সবচেয়ে বেশি আপন মনে করছে। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানিয়ারা গ্রামে। জানা যায়, ২০০৬ সালে কালিহাতীর আগচাড়ান গ্রামের মৃত সুলতান মাহমুদের মেয়ে সালমা আক্তারের বিয়ে হয় একই উপজেলার বানিয়ারা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে কিসমত আলীর সাথে। সালমার জন্মের কিছুদিন পরেই তার বাবা সুলতান মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। দরিদ্র পরিবার ও অভাবের সংসারে টিকতে না পেরে তার মাতাও দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হয়ে দু বছরের ছোট্ট শিশু সালমাকে ফেলে চলে যান নতুন স্বামীর সংসারে। সেই শিশুকাল থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত চাচা-চাচীর সংসারেই মানুষ হয়েছে এতিম সালমা। অসহায় ও পিতা-মাতাহীন হলেও অনেক টাকা খরচ করে তাকে বিয়ে দেন তার চাচা-চাচী। পরে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে স্বামী কিসমত আলী প্রথম অবস্থায় দুই লাখ টাকা নেয় চাচা-চাচীর কাছ থেকে। কিসমত বিদেশ যায়, এক বছর আবার ফেরত আসে। এরপর আবার বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সালমা ও তার চাচার নিকট টাকা চাইতে থাকে। চাচা একজন দরিদ্র কৃষক। তার পে দ্বিতীয়বার টাকা দেয়া সম্ভব হয় না। শুরু হয় সালমার উপর নির্যাতন। ক্রমে তা বেড়ে প্রতিদিনের নিত্তকর্মে রূপান্তরিত হয়। প্রতিদিন চলে আদিমত্তার শারীরিক নির্যাতন। সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন দিয়ে ঝলসে দিতো সালমার শরীরের বিভিন্ন স্থান। ব্যথায় কাতরাতো সালমা। কিন্তু দেখার কেউ নেই। কারণ স্বামীর এ পাশবিক নির্যাতনে সম্মতি ছিল শ্বশুর-শাশুড়ির। সিগারেটের আগুনেও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন এতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সালমাকে ভাল করবে এই বলে কিসমত আলী সালমার হাতের দুটো আঙ্গুলের মধ্যে বিদ্যুতের তার পেচিয়ে শক দিতে থাকে। এতে সালমার হাতের দুটো আঙ্গুলসহ কয়েকটি স্থান পুড়ে যায়। একসময় সালমার অবস্থা গুরুতর হলে স্বামী কিসমত ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে এলেঙ্গা নামক স্থানে এনে একটি দোকানের সামনে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর কিসমত ফোন দিয়ে তার শ্বশুড় বাড়িতে জানিয়ে দেয় সালমাকে এলেঙ্গা বসিয়ে রেখে এসেছে, তারা যেন নিয়ে যায়। এ সময় সালমার অবুঝ একটি কন্যাও সাথে ছিল। ফোনে খবর পেয়ে সালমার চাচা-চাচী তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা জটিল দেখে সেখান থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসার পর তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার ডাক্তাররা সালমার হাতে পচন ধরায় তার দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলে। অবস্থার একটু উন্নতি হলে তাকে আবার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, কারণ ঢাকায় চিকিৎসার খরচ বহন করা তাদের পরিবারের পে সম্ভব নয়। হাসপাতালে শুয়ে সালমা তার অসহায় দিনগুলোর কথা সাংবাদিকদের বলেন।
ঘটনার এখানেই শেষ, কিন্তু প্রশ্নের কি এখানেই শেষ?
এরপর কি হবে? সালমার মত মাহীন বাবাহীন একটা মেয়ে কি সঠিক বিচার পাবে?
টাকা ছাড়া মামলা চালানো সম্ভব নয়, তার চাচা-চাচী কি এখন বছরের পর বছর উকিলদের টাকা দিয়ে মামলা চালাতে পারবে?
মামলা চালাতে গেলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে, এ অবস্থায় কি আপোষ করাটাই পরিবারের কাছে যুক্তিযুক্ত হয়ে দেখা দিবে না?
মামলায় শেষ পর্যন্ত হয়তো কিসমতের শাস্তি হবে, তারপর সালমার ভবিষ্যতের কি হবে?
কিসমতের পরিবার যদি এলাকায় প্রভাবশালী হয় তবে তারা কি কিসমতের শাস্তির পর আবার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সালমার উপর হামলা করবে না?
চরম নিরাপত্তাহীন এই দেশে একজন সালমাকে কে নিরাপত্তা দেবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




