বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম এবার বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের একটি দল নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করাতে বাংলার আপামর জনগণ খুশি হয়েছে। যারা ক্রিকেট খেলা বুঝেন না, গ্রামের সেই সহজ সরল লোকেরাও বাংলাদেশ জিতেছে শুনে আনন্দ প্রকাশ করেছে। আমিও যে খুশী নই তা নয়। তবে আমার কাছে একটা ব্যাপার খুব খারাপ লাগে। যখন বাংলাদেশ টীম হারে তখন কিছু মিডিয়া এবং কিছু ধারাভাষ্যকার এমনভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে যে মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারগণ বলদ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই যেমন জাফরউল্যাহ সরাফত তার ধারা বর্ণনায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যর্থতার এমন বিশ্লেষণ করেন যেন মনে হয় তিনি জাতীয় দলের কোচ। আমার তখন প্রশ্ন জাগে খেলার আগে কেন খেলোয়ারদের এইসব পরামর্শ দেয়া হলো না। খেলার পরে শুধু বলা হয়, অমুক করা হলে দল জিততো। আবার দল জিতার পর সেই জাফরউল্যাহ সরাফত তার বোল পাল্টে কি যে প্রশংসা করলেন জাতীয় দলের মনে হলো জাতীয় দল স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। তাই এসব সমালোচকদের আমি একদম অপছন্দ করি।
আপনারা যা-ই মনে করুন না কেন, আমি চেয়েছিলাম বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড এর সাথে সিরিজ জিতুক কিন্তু শেষের ম্যাচটা হারুক। কারণ এই যে, নিউজিল্যান্ড দলকে হোয়াইট ওয়াশ করলো, এতে করে বাংলাদেশ দলের কনফিডেন্স যেমন বেড়ে যেতে পারে তেমনি উল্টোটাও হতে পারে। অর্থাৎ ওভার কনফিডেন্ট হয়ে সামনের বিশ্বকাপে গা ছাড়া ভাব নিয়ে খেলে ভরাডুবিতে ডুবাতেও পারে। যদি শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ হারতো তাহলে অন্তত চিন্তা করার একটা অবসর পেতো যে, আমাদের আরো ভাল প্র্যাকটিস করতে হবে। এখন যদি সরকার আর বিভিন্ন কোম্পানী বাংলাদেশ দলের এমন সাফল্যে পুরস্কার আর উপহারের বন্যা এনে দেয় তবে সে বন্যায় ভেসে যাবে তাদের কঠোর মনোযোগীতা। এমন প্রমাণ আমরা এর আগে পেয়েছি। ৯৯ এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর বাংলাদেশের সে কি উল্লাস। সারা দেশে রংয়ের ছড়াছড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা বললেন- ৭১ আমরা একবার পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিলাম, এবার আমাদের সোনার ছেলেরা আবারও পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। অতি আদরের সন্তানের ভবিষ্যত যে রকম হয় আরকি।
আজ কালের কণ্ঠ পত্রিকা পড়তে গিয়ে দেখতে পেলাম হেডলাইনে নিউজিল্যান্ডের নামটা কালো শেডিং এর ভিতর উল্টো করে লেখা হয়েছে। এর মানে বোঝানো হয়েছে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে উল্টিয়ে দিয়েছে। দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। কারণ, হতে পারে হোয়াইট ওয়াশ, তাই বলে অন্য একটি দেশকে আমরা কখনো খাটো করে দেখতে পারি না। আমাদের এমন মানসিকতার জন্য আমরা পরাজিত হই বার বার। নিউজিল্যান্ড কেমন দল তার প্রমাণ পাওয়া যাবে বিশ্বকাপে যদি বাংলাদেশের সাতে তাদের দেখা হয়। আর একটা জায়গায় প্রমাণ দেখা যাবে। যদি কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড এর মাটিতে গিয়ে স্বাগতিকদের হারিয়ে সিরিজ জয় করে নিয়ে আসে তবেই প্রমাণিত হবে বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ দলের অনেক উন্নতি হয়েছে বলা যায় কিন্তু প্রচন্ড শক্তিধর দল হয়ে গেছে এমন যারা বলছেন তারাই দলকে ডুবাবেন। আমি মনে করি কালের কন্ঠের আজকের হেড লাইনে নিউজিল্যান্ডকে শুধু খাটো করা হয়নি অপমান করা হয়েছে। এমন একটা আপত্তিকর হেডলাইন যদি বিদেশের কোন পত্রিকায় বাংলাদেশের ব্যাপারে করা হয় তাহলে আমাদের কেমন লাগবে? মনে হবে সেই পত্রিকাটা পুড়িয়ে ফেলি।
এখন সময় বেশি নেই। তাই একটি জয়ের উপর দাড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। আমাদের মিডিয়া ম্যানদের উচিত হবে বাংলাদেশ দলের আরো কোথায় কোথায় গ্যাপ রয়েছে, কোথায় কোথায় আরো উন্নতির দরকার, কোন খেলোয়ারের কি কি ভুলভ্রান্তি দূর হলে বিশ্বকাপে আমরা ভাল করতে পারবো সেই বিষয়ে গবেষণাধর্মী লেখালেখি করা। বিশেষ করে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ এটি নিয়মিত করলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপেও একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে দেশের মান রাখবে আশা করি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




