ডুমুর নাকি বেহেশতের ফল। এর গুনকীর্তন করে শেষ করা যাবে না। তাওরাত-ইঞ্জিলের বর্ণনায় আছে আদম হাওয়া নিষিদ্ধ ফল খাবার পর তাদের লজ্জা নিবারনের যে বোধ আসে সেই সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন ডুমুরের পাতা দিয়ে। ইহুদীদের কোনো এক ধারার অনুসৃত ধর্মীয় পাঠ্যে এও বলা আছে যে ঐ নিষিদ্ধ ফলটাই ছিলো ডুমুর। পেট ও অন্ত্রের নানা রোগে পৃথিবীর নানা অঞ্চলের লোকচিকিৎসায় ডুমুরের ব্যবহার কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। অধুনাকালে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রন এমনকি আফ্রোডিজিয়া মানে যৌন সামর্থ্য বাড়াতে বা বজায় রাখতে এর কদর দিনকে দিন বাড়ছে। এর আদি আবাস পশ্চিম এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। ফারসি ভাষায় এটি আঞ্জীর বলে পরিচিত।হঠাৎ করে কারণ ছাড়া আমার বিদেশি ভাষার জ্ঞান জাহির করার দরকার পড়লো কেনো? তাও ইংলিশ- ফ্রেঞ্চ বাদ দিয়ে আদ্যিকালের ফার্সি নিয়ে টানাটানি! আমরা কিন্তু অনেক ফার্সি শব্দ প্রচলিত বাংলায় ব্যবহার করি। ফল ফলাদির মধ্যে আঙ্গুর, আনার উল্লেখযোগ্য। এতো লম্বা ভুমিকার কারণ হলো পাঠকরাও যাতে সাবধান থাকেন যাতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছায় আঞ্জীর শব্দটির ধ্বনি বিপর্যয় না ঘটান। নানা জাতের এমন স্বাস্থ্যকর ফলটি আমাদের দেশে প্রচলিত ও পরিচিত নয় দেখে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু দিনকাল পালটে গেছে। ডুমুরের ফুল দেখা না গেলেও অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে সম্প্রতি আমাদের দেশে ডুমুরের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে চলুন ডুমুর আর জলপাই নিয়ে একটা ওয়াজ শুনে আসি। রোযা রমজানের দিনে এই ওয়াজ আমাদের অনেকের মাথা যা সাম্প্রতিক অনেক গরম খবরের ভাপে উত্তপ্ত তার সাময়িক তাপানুকুল সমাধান দিতে পারে।
ওয়াজটি ১৭ই রমজান রোজ শুক্রবার বসুন্ধরা জামে মসজিদে জুমার খুতবার বয়ানের অংশবিশেষঃ (সম্পূর্ণ খুতবা ঊদৃত করলে পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার কারন হতে পারে তাই সে পথে গেলাম না।)
[খতিব মাওলানা মামুনুল হক হেফাজতি ছাহেবের উচ্চারন, কথ্যভাষা রীতি যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে অবিকৃতভাবে উপস্থাপন করার। যাদের তাঁর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে বা তাঁকে কাছ থেকে জানেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকলো আমার বর্ণনায় কোনো ভুল হলে তা আমাকে ধরিয়ে দিলে আমি সংশোধন করে দিবো। এরকম কিছু ঘটে থাকলে আমি আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।]
“নাহমাদুহু আনু সাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম। আমহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আল আমিন। আসসালাতু আসসালামু আলা সাইয়্যিদুল মোরসালিন। ওয়ালা আলিহি ওয়া সাহবিহী আজমাইন। আম্মা বা’আদ। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। এহনও ঘড়িতে একটা বাজে নাই। খুতবা শুরু করনের কিছু সময় বাকি। আইজ একটু আগেই শুরু কইরা দিই। কি বলেন আপনারা সামনে যারা আছেন মুরুব্বিরা? রোযা রমজানের দিনে মসসিদে বইসা ইসলামের কথা শুনেও অনেক নেকি হাসিল করা যায়। ঠিক কিনা বলেন? যাই হোক সময় যহন হাতে আছেই একটু তয় বলি যে কালকে আমাদের কমিশনার সাব এফতারের এন্তেজাম করসিলেন কনভেনশন সেন্টারে। মাশাআল্লাহ্ অনেক আয়োজন সেলো। কত ফলমূল খানাপিনা; কাচ্চি! আমার পাশে যে মুরুব্বী এফতারে বসছিলেন তেনার পরিচয় দিতে চাই না। কিন্তু তারে এক নামেই সবাই চিনে। তিনি লোভ সামলাইতে না পাইরা আযানের আগেইএকডা ফলে কামড় দিয়া কইলেন হুজুর এইডা কি ফল, খুব মজাতো খাইতে! এক্কেরে কচি লাগলো কচকচা!! আমি কইলাম আল্লাহ্ আজ্জাওয়াঝালের অশেষ নেয়ামত এইডা হইলো গিয়া ত্বীন ফল। তিনি কইলেন এইডা তো বাজারে দেহি নাই। আমাদের আলাপ কমিশনার সাবে শুনতেসিলেন। তিনি বললেন আরে আকবর ভাই এটাকে ডুমুর বলে। আগোরায় ষোল শ’ টাকা কেজি বিক্রি করে। বাংলাদেশেও এখন চাষ হয়। মুরব্বিরে আমি তহন বুঝাইয়া কইলাম যে ব্যাপারডা হইলো গিয়া যাহা ত্বীন তাহাই ডুমুর। সৈদি আরবে যেমুন বাংলায় আযান দেয় তেমুন ত্বীনের লগে আমাদের পরিচয় করাইয়া দিসে কোরআন শরিফ। কোরআনুল করিমে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, (বাই ডিফল্ট নাসিক্য সুর প্রত্যাশিত) ওয়াত্তিনি ওয়াজঝাইতুন। জানি আমাদের যুবক ভাইদের বয়ানে তেমন আগ্রহ নাই। মোবাইল টিপাটিপি কইরা হাতের প্র্যাকটিস চালাইতে খালি মুঞ্চায়! সবই বয়সের দোষ। ইংলিশে কয় এইজ ফল্ট। এহানের মুরব্বিরা যারা মক্তবে গেসেন তারা আমপারা/সিপারায় জবানি পরসেন তারাও হয়তো ভুইলা গেসেন। যাদের মনে আছে তারা বাসায় গিয়া কোরআন শরিফ খুইলা দেইখা পড়বেন। সুরার নাম আত- ত্বীন। মাদানি সুরা। পসানব্বই লম্বর সুরা। ছোট সুরা আটটা মাত্র আয়াত। এই রমজানে কোরআন শরীফ তেলাওয়াতে কত সওয়াব! যাহোক যা কইতে লইসিলাম... আপনেরা মনে মনে কইতেসেন হুজুরের আইজ কি হইলো কালকের এফতার বেশি খাইসে মনে অয় আগরতলা-খাডেরতলা কি সব কইতে লাগসে। না হাজেরান এফতার বেশি খাই নাই কিন্তু একটু বিস্তারিত কইলে আপনাদের দিলে ব্যাপারডা থাইকা যাইবো। আমি যে আয়াতটা পড়লাম তা বাংলায় তরজমা অইলো মানে আল্লাহ্ পাক কসম খাইলেন ত্বীন আর যাইতুন ফলের। এইহানে যে দুইডা বেহেশতি জিনিসের কথা আসছে তার পয়লাডা হইলো ত্বীন আর শেষেরটা জলপাই। এখন ফ্রশ্ন করতে পারেন অ্যানে পানি পাইলাম কই? আসলে আপনারা আরবি - উর্দু তো দূর বাংলায় কোনটার কি মানে তাই ধরতে পারেন না। আর আমার ইয়াং জেনারেশন বেরাদাররা ইংলিশে না কইলে বুঝেন না। কথা ঠিক কিনা বলেন? যেইডা কইতে লইসিলাম ইংলিশ ইয়েস নো ভেরি গুড কইলে ত্বীন আর যাইতুনরে বলে ফিগ আর অলিভ। যাউক এফতারের কাহিনিতে ফিরত যাই। দেখি ঐ মুরুব্বি তার ফোন বাইর কইর্যা খালি খাওন আর মাহফিলের ফোডো তুলতেসেন। আবার অনেকে তার সাথে আইসা সেলফিও তুলতাসে। তয় একটা ব্যাফার বুঝে আসে নাই দেহি যারাই ঐ মুরুব্বির সাথে সেলফি তুলতে আসছে সবাই তারে একটা কইরা তেলের শিশি ধরাই দিতেসে আর মুরুব্বিও কবুল করতেসেন। চুপে চাপে এইরম একখান কৌটা হাতে নিয়া পইড়া দেহি লেখা আছে এক্সট্রা ভারজিন অলিভ ওয়েল। আমি তারে কানে কানে কইলাম আর যাই করেন মুরুব্বি ফেইসবুক হোয়াটসআপে আমার ছবি দিয়েন না। এফতারের ছবি দিয়া শেষে জানের উপর খতরা আইতে পারে। এমনেই রিসোর্টে ঘুরতে গিয়া অনেক বেকায়দায় আছি। মুরুব্বি হাইস্যা কইলেন সেই বয়স তো পার করসি বহুত আগে হুজুর! আর আমার বাল বাচ্চাগো অনেক খরচ কইরা মানুষ করসি। তাদের স্বভাব যেমন এই বেহেশতি ফলের মতো মিষ্টি তাদের চরিত্রও ডুমুর ফুলের মতো পবিত্র।
যাউক আলোচনা আইজ আর লম্বা করমু না কারন আইজকার মূল খুতবায় যাওয়ার আগে বেশরিয়তি কঠিন গুনাহ জেনা ইংলিশে আপনেরা যারে বলেন অ্যাডাল্টেরি সে বিষয়ে কিসু বলার মাকসুদ আছে ইন শা আল্লাহ্..."
রিলেটেড টপিকঃ
প্রথম আলোয় সম্প্রতি প্রতিবেদন ছেপেছে যে বরেন্দ্রের মাটিতে মরুর ফল ত্বীন চাষ হচ্ছে।
আরেক প্রতিবেদনে পড়লাম ভোজ্যতেলে লিটার প্রতি পাইকারি দামে ৫ টাকা বাড়াতে বড় তেল-আটা-সুজি শিল্প গোষ্ঠীরা তৎপর।
নট অ্যাট অল রিলেটেড অফ টপিকঃ
ব্রোকেন নিউজ - বাংলাদেশ থেকে ‘সোবহানি’ জাতের ডুমুর রপ্তানি শুরু হয়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে এই করোনা পরিস্থিতিতে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে গত সপ্তাহে দুটি পৃথক চালানে দুবাইতে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ডুমুর রপ্তানি করা হলো। ডুমুর পরিবহন এই গরমকালে খুবই নাজুক হওয়ায় প্রচলিত কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করা যায় নি। আমাদের জন্য ডুমুর লাভজনক রপ্তানি সম্ভাবনা হওয়ায় এর উৎপাদন ও চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষায় জানা যায় কেবল সমন্বিত সোবহানি উৎপাদনের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জিডিপির অন্তত ৪২ ভাগ অর্জন করা সম্ভব। উল্লেখ্য আনভির অ্যাগ্রোটেক সিলেক্টিভ ব্রিডিং প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বানিজ্যিক ভিত্তিতে অর্গানিক ডুমুর চাষের এই উদ্যোগ নিয়েছে।
সোবহানি জাতের ডুমুর চাষে পানির পরিবর্তে তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলটির আকর্ষণীয় রং, ফ্লেভার, স্বাদ ধরে রাখতে এবং শেলফ লাইফ বাড়াতে বিশেষ পেটেন্টেড এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েলের ব্যবহার করা হয়। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির মাঝেও বিশেষ ভার্জিন অলিভ অয়েলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি দল করমুক্ত তৈল আমদানির খসড়া সংসদে উত্থাপন করেছে। সরকারি এই প্রণোদনাকে স্বাগত জানিয়েছে সাংবাদিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সভাপতি পীর নঈম ইমদাদ জানিয়েছেন এই আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে সোবহানি চাষে তৈল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে তারা তাদের পেশাগত দায় জলাঞ্জলি দিয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। জয় সোবহানি!!
আজাইরা প্যাচালঃ
সোবহানি ডুমুরের বিশাল বাজেটের বিজ্ঞাপন চিত্র শ্যুটিংয়ের জন্য নায়িকা পরিমনি দুবাই গেছেন বলে কালের ঘন্টা দৈনিকের বিনোদন ডেস্ক পত্রিকাটির প্রথম পাতায় আট কলামের রিপোর্ট করেছে। পরিচালক ও প্রযোজক আঞ্জির সোবহানের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ডুমুর মুখে হা করা ছবি দিয়ে ফেইসবুকে পরি লিখেছেন আঞ্জিরের চুল থেকে নখ পর্যন্ত বড় কলিজা দিয়ে আমার কলিজায় টোকা দেয়ার সময় তোলা।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ খাদ্যরসিক কোনো এক পারস্য রমণীর সৌজন্যে তার বিটসইটস ডট কম থেকে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:২২