somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারিস অলিম্পিক, দরবেশিয়া হুজুর ও বাংলাদেশী সেকিউলারিজম

১৪ ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. সেকিউলারিজমের তীর্থভূমি ফ্রান্স ও এবারের অলিম্পিক

"ছবির দেশ, কবিতার দেশ' ফ্রান্স শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রগতিশীলতার সবক দিয়ে আমাদের উত্তরাধুনিক করে তুলেছে। সেই ফরাসি বিপ্লব থেকে দীক্ষা নিয়ে ক্যাথলিক চার্চের আধিপত্য গুঁড়িয়ে রাষ্ট্র সেকিউলার হলো - যেখানে 'ধর্মহীন' রাষ্ট্র আবার নাগরিকদের স্বাধীন চিন্তা/মতের স্বাধীনতা এমনকি ধর্ম পালনের অধিকার দিয়ে রেখেছে। উত্তরাধুনিকতায় সেকিউলারিজমের বিপত্তি বাড়লো যখন সামাজিক জীবনে সব নাগরিককে অন্য সবার মত 'সমান' হতে বলে যেখানে জাত-ধর্মের দৃশ্যমান পার্থক্য থাকা বাঞ্ছনীয় নয় আর তাই তো পাবলিক স্ফেয়ারে মুসলিম নারীদের পার্থক্য সৃষ্টিকারী আবায়া-স্কার্ফ পরায় খড়্গ নামে আইনি বিধিনিষেধের। সব ছাপিয়ে ফ্রান্স নিজের অলিম্পিক দলে মাথায় 'পট্টি বাঁধা' নিষিদ্ধ করে। যখন প্যারিস অলিম্পিকের পর্দা উঠলো তখন পর্যন্ত এই সুদূরের বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সেকিউলারিজমের ঝান্ডা সুউচ্চে ধরে রেখেছে তাই তো চরম উন্নয়নে আধুনিক 'স্মার্ট' সরকার জঙ্গি তাড়িয়ে দেশকে ধর্মহীন করে বিশ্বে অনন্য নজির তৈরী করেছে। মাঝে মধ্যে রাজনীতিতে ধর্মীয় উস্কানি আর শরিফ-শরিফার মতো অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে সরকারের আধুনিক ভাবমূর্তি পঙ্কিল করার পাঁয়তারা করে গেছে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি।

সময়ের পরিক্রমায় দুই সপ্তাহ আমূল সংস্কার বা পরিবর্তনের (রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক মানদন্ডে ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিসরে) ক্ষেত্রে চোখের পলক ফেলা দূরত্ব। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে ফরাসি দলের মাথা ঢাকা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কেন যেন সারা দুনিয়ার মানুষের সমালোচনা কুড়ালো কেবল। বৈশ্বিক খেলাধুলার এই জমজমাট আসরের সব শেষ দিনে এসে চমক দেখালেন সিফান হাসান নামের ডাচ কৃষ্ণাঙ্গ দৌড়বিদ রেকর্ড গড়ে ম্যারাথনের সোনা জিতে।



আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে পছন্দ করি সেই ২০১৪ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে। তাঁর ১৫০০ মিটার দৌড়ের ফিনিশিং আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলো। এবার বুড়ো বয়সে ভেল্কি দেখিয়ে একই কায়দায় জিতলেন ম্যারাথন। আমার নিজের দৌড়ানোর অভিজ্ঞতা হাফ ম্যারাথন পর্যন্ত। তবুও তাঁর এই অতিমানবীয় দৌড় শেষ করার ধরন যদি আমি রপ্ত করতে পারতাম! যাহোক ম্যারাথন জিতে আরেক 'কুকীর্তি' করলেন পদক নেবার বেলায়। মাথায় হেডস্কার্ফ বেঁধে পডিয়ামে এলেন মেডাল নিতে। সিফান হাসান হেডস্কার্ফ পড়ে যেন ফরাসিদের Laïcité গরীমায় চপেটাঘাত করলেন।



আমাদের বাংলাদেশেও এই দুই সপ্তাহ এলো মহাকালের অভূতপূর্ব আয়োজনের সাক্ষী হয়ে। এতটাই চরমপন্থী এই সংঘটন যে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী অভ্যুত্থানে দেশ জঙ্গী-তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত না হয়ে বরং সেকিউলারিজমের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। কিভাবে? এবার আসি সেই গল্পে।

২. বাংলাদেশে সেকিউলারিজমের উৎকর্ষতায় রাজনৈতিক বাস্তবতা

বাংলায় সেকিউলারিজম ভাষান্তর হয়ে জনপ্রিয় ও সুভাষিত রূপ পায় ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দযুগলে। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের প্রাথমিক সংবিধানের চারটি প্রধান মূল ভিত্তির মধ্যে একটি এই ধর্মনিরপেক্ষতা। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই চার মূলনীতি আজও বলবৎ রয়েছে - "আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে"। কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে ফরাসিদের চেয়েও কত উন্নত তার সহজ উদাহরণ আমাদের রাষ্ট্র তাদের মতো 'ধর্মহীন' নয় - বরং আমাদের সংবিধানের অআকখ মানে ২ক ধারায় লেখা রয়েছে - "প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।" আরেব্বাহ এমন উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম আধুনিক সেকিউলারিজম দুনিয়ার আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতার পরাকাস্ঠা দেখানো এই জগাখিচুড়ি ধারণা খোদ সেকিউলারিজম শব্দটির অভিজ্ঞতামূলক অর্থের সাথে কেবল সাংঘর্ষিক নয় - পুরো বিপরীতমুখী। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য এমন কদাকার ধারণা আমাদের সংবিধানে চাপিয়ে বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতির বৈধতা দেয়া হয়েছে।

৩. শেযের কথা

কেবল গত পনের বছরের জাহেলিয়াতই নয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতালিপ্সু আওয়ামী লীগের একটাই মূলনীতি ছিলো আর তা ছিলো ক্ষমতাভিত্তিক আধিপত্যবাদ। যেকারণে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বয়ান অস্বীকারের তকমায় স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গী এবং শেষতক 'রাজাকার' অবিধা অবধারিত ছিলো। তাদের অরওয়েলিয়ান উন্নয়নে অংশীদারীত্বের দাবি নিয়ে অংশগ্রহনমূলক গণতন্ত্রে তাই বিরোধীদের নেতিবাচক ধারনার সাথে সম্পৃক্ত করতো। ছাত্র আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতেও অ-আওয়ামী ক্ষমতা প্রত্যাশীদের এ দেশকে তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত হবার গোঁমর ফাঁস হতো নানামুখে। ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও কল্পিত বিরোধীদের প্রতি হুংকার উঠতো - 'খেলা হবে'। শেষপর্যন্ত খেললো অকুতোভয় ছাত্র-জনতা। রাজনীতি-রাষ্ট্রনীতির ছাত্র ছিলাম বলে কিনা জানি না এসব নীরস বিষয়ে নিজের পান্ডিত্য দেখানোর সুযোগ কখনও ছাড়তে চাইনা। তবে আজ আর পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাব না। কিছু লঘু-তামাশায় লিখা শেষ করি।

৪. সেকিউলার জোকস (জোকসের নামে বাল-ছাল লিখায় লেখকের দূরভিসন্ধি প্রশ্নবিদ্ধ)



আওয়ামী-পরবর্তী তালেবানি সরকারের সময়ও রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা নতুন করে জাঁক গাড়লো গতকাল। 'খবরে প্রকাশ সালমানিয়া দরবেশিয়া মারকাজের সাবেক গদীনশীন পীর (সম্প্রতি গদিচ্যুত) কে দেশত্যাগের সুযোগ দিতে তাঁর দরবেশি লেবাস ও সুরতের উপর সংবিধানের (এখনও বলবৎ) মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হ্য়। যার ফলশ্রুতিতে তার নূরানী চেহারার "নূর 'আলা নূর" দাড়ি মোবারক বিসর্জন দিতে হয়েছে। উপরন্তু ইসলামি লেবাস ছেড়ে চাষার পোশাক লুঙ্গি-কুর্তা পরিধান নির্দেশ পরিকল্পে দেশের বিচারপতিরা ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছেন। পীর সালমানিয়া দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও তিনি অভিনব পন্থায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি তাঁর মাথার কেশ (পড়ুন BAL) কৃষ্ণ রঞ্জকে আবৃত করে সিফান হাসানের মতো প্রতিবাদ জানিয়েছেন।' এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল সাংবাদিক গোষ্ঠীর পুরোধা পুরুষ প্রথম গেলো পত্রিকার আনিসুল হকও তার বাল কালো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি জাতির স্যার (মীর) জাফর বাল কালো করে ভান হোহ এর মতো নিজেই নিজের তৈলে আপন তৈলচিত্র আঁকছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×