বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আহরণ করে সৌদিআরব থেকে। সৌদিআরবে পাঠানো শ্রমিকদের বড় একটা অংশ নারী। প্রতিদিন শতশত নারী গৃহকর্মী হিসেবে সে দেশে যাচ্ছে। তার বিপরীতে সৌদিআরব থেকে অনেক নারী লাশ হয়ে আসছে। তারপরও সে দেশে নারীদের গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো বন্ধ নেই। অনেক নারী ফিরে এসে তাদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? এর কি কোনই সমাধান নেই?
প্রথমেই আসা যাক কেন নারীরা লাশ হয়ে আসছে বা তাদের উপর কেন নির্যাতন চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে!
এর কারণ হিসেবে আমার যা মনে হয়:
১) যারা নারীদেরকে গৃহকর্মী হিসেবে নিচ্ছে তারা আসলে একেবারে কিনে নিচ্ছে। সে দেশে লোক পাঠানেরা জন্য যে সকল এজেন্টরা দায়িত্ব নিয়েছে তারা হয়তো কথিত গৃহকর্মী হিসেবে আসলে দাসী সাপ্লাই দেবার দায়িত্ব নিয়েছে। ঐ সমস্ত এজেন্টরা, যে সকল নারী বিদেশে যাবার জন্য আসছে তাদের থেকেও টাকা নিচ্ছে আবার সৌদি আরব থেকেও মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে টাকার বিনিময়ে কিনে নেয়া দাসীদের সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
২) গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া ঐ সমস্ত নারীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে বাবা-ছেলে উভয়েই। যে সমস্ত নারীরা রাজী হচ্ছে তারা বেশ ভালোই আছে। কিন্তু যারা রাজী হচ্ছে না তাদের উপরই নেমে আসছে মহা অত্যাচার।
৩) যারা গৃহকর্মী হিসেবে (আসলে দাসী) নারীদেরকে ব্যবহার করছে ঐ সমস্ত সৌদিয়ানরা হয়তো কোরআন-হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটাকে হালাল করে নিচ্ছে। কারণ দাস-দাসী প্রথা ইসলাম রহিত করেনি এই ফতোয়ায়।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, সৌদি আরবে ইসলামের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেও সে দেশে যেমন আবুবকর-ওমর (রা.) এর মতো সাহাবী ছিলেন তেমন আবু জেহেলের মতো বদ লোকও ছিলো।
এর থেকে উত্তরণের উপায় কি?
১) উপায় হিসেবে একটা কথা বলা যেতে পারে তা হচ্ছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে শ্রমিক পাঠানো।
২) নামে-বেনামে এজেন্টদের মাধ্যমে বিদেশে না যাওয়া।
৩) সরকারের হস্তক্ষেপ এবং দ্রুতাবাসগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা।
সৌদিআরব থেকে কতজন নারীর লাশ এসেছে, কতজন নির্যাতিত হয়ে ফিরে এসেছে সে হিসাব সবার কাছে আছে। কিন্তু গত দুইদিনে একজন নারীকে উদ্ধার করে যে পরিমান প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা দেখে নিজেরই লজ্জা হচ্ছে। এক ফেলানিকে যখন মেরে কাঁটাতারে ঝুলানো হলো দেশজুড়ে তোলপার শুরু হলো। সীমান্তে দু-একজন মানুষকে হত্যা করা হলে আমরা ভারতকে গালি-গালাজ করে একবোরে ধুঁইয়ে দেই। এটা বলছি না যে, ভারত যে সীমান্তে মানুষ মারছে সেটা ঠিক কিন্তু সৌদিআরবে যা হচ্ছে তা দেখে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো লোকগুলি কোথায় এখন? এক ফেলানীর জন্য ফেসবুক ইউটিউব গরম হলে হাজারো নারী গৃহকর্মী যারা সৌদিআরব থেকে লাশ হয়ে আসছে তাদের জন্য মুখে কুলুপ কেন? রেমিটেন্স বন্ধ হওয়ার ভয়ে? মুসলিম রাষ্ট্র বলে? তারা আমাদের কেমন বন্ধু এখনও টের পায়নি মনে হয় আমরা!
একটা কাজ করলে কেমন হয়? নারীদেরকে আর গৃহকর্মী হিসেবে আমরা পাঠাবো না। তাতে করে কি হবে! কিছু রেমিটেন্স হয়তো হারাবো, হয়তো পেঁয়াজের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা হবে, হয়তো গ্যাসের দাম ১৫০০ হবে, হয়তো বিদ্যুতের দাম আরো ৫ টাকা প্রতি ইউনিটে বেড়ে যাবে কিন্তু তরুণ-তাজা মা বোনদের লাশ, চিৎকার-হাহাকার আর সইতে পারছি না। ১৯৭১ সালে মা-বোনদের ইজ্জত খেয়েছে পাকসেনারা যুদ্ধের ময়দানে। আর ২০১৯ সালে এসে খাচ্ছে আরো একটি মুসলমান দেশ। পার্থক্য কোথায়? একদেশ খেয়েছে বাড়িবাড়ি গিয়ে আরেক দেশ খাচ্ছে নিজেদের দেশে দাওয়াত করে নিয়ে গিয়ে।
আপনারা আপনাদের মতামত জানাতে পারেন। আমি ভুল কিছু বললে শোধরে দেবার অনুরোধ রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৬