somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা বাংলাদেশী হব কবে???

১০ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগ লেখি খুব বেশীদিন হয়নি। এর মধ্যে অবশ্য ব্লগের বিভিন্ন রকম ট্যাগের সাথে পরিচয় ঘটে গেছে। এই লেখাটার পর আমিও ম্যালা রকম ট্যাগ খেতে পারি, যদিও এ নিয়ে বেশী পরোয়া করি না। আপনি আমকে কাঁঠাল বললেই সেটা কাঁঠাল হবেনা, সেটা আমই থাকবে, মাঝখান থেকে আপনি মূর্খ প্রমাণিত হবেন, ব্যাপারটা এটুকুই!
এখন ব্লগে ঢুকলেই মূলত দুই দল ব্লগারকে চোখে পড়ে। এক, জামায়াতের কুখ্যাত কিছু রাজাকারের ফিরিস্তি গেয়ে লেখা ব্লগ আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের শাস্তির দাবিতে লেখা কিছু ব্লগ। এদের আবার মূল স্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ছাড়া আর অন্য কোন ইস্যু নেই, এটাই আপামর জনগণের একমাত্র সমস্যা। কিছুদিন আগেও ব্লগ গরম ছিল সীমান্তে ভারতের অন্যায় হত্যাকান্ড নিয়ে, এখন উত্তাল আছে হিনা রাব্বানীর "সব ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার" নামে ফাজলামী আর নির্লজ্জতা নিয়ে। কিছুদিন আগে আমরা কে কে মেনন আর সোনিয়া গান্ধীর পশ্চাৎদেশ ধুয়েছি, আর এখন আর হিনাকে নিয়ে মাস্টারবেট করে ৭১' এর শোধ তুলছি। আমরা ভারতের সাথে খালেদার গদিতে উঠার নতুন চালেও নাচছি, আবার সবভূলে ইউনুসকে বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা বানিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হল, এত যে কিছু আমরা করছি, সেটাও একসাথে, সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে করতে পারছি না। সীমান্ত ইস্যুতে অনেক হাম্বালীগার কোন কথা বলেনি, দু একটা উল্টে আমাদের ভূল ধরেছে, এবং ভারতের কাছে আমাদের বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্ঠির দেনা স্বরণ করিয়ে দিয়েছে। আবার যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে অনেকের সাথে তারাও স্লোগানে ময়দান ফাটাচ্ছে, কেউ কেউ একটু বেশীই ফাটাচ্ছে, আবার সীমান্তে মানবতাবাদিরা চুপ মেরে গেছে, এবং ওদের কেউ কেউ আবার নিজামি, গো আজমদের পা চেটে কুত্তাগুলোর হয়ে ব্লগে দালালী করতে এসেছে। আমার এসব দেখে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। কেন হিনা রাব্বানীরা বাংলাদেশকে সব ভূলে যেতে বলার সাহস পায়? কেন কে কে মেননরা সীমান্তে হত্যাকান্ডকে স্বাভাবিক বলার সুযোগ পায়? কেন স্বাধীনতার ৪১ বছর পরেও যুদ্ধাপরাধীরা আমার দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়? উত্তরটা নিজেকে নিজেই জিগ্যেস করি, পাই এবং পেয়ে চুপ হয়ে যাই। কারণ এতগুলো প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিকেই আংগুল তাক করে। ভারত পাকিস্তানের চরিত্র উদ্ধার করে আমরা গালি দেই, উগ্র, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি, নিজেদের দিকে আমরা তাকিয়ে দেখেছি? ভারতে কোন সন্ত্রাসী হামলা হলে সরকার- বিরোধীদল পাকিস্তানের দিকে আংগুল তাক করে, পাকিস্তানে কিছু হলে সেটা তালবানদের হামলা জেনেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তারা ভারত আর আমেরিকার দিকে আংগুল তাক করে আমাদের দেশে কিছু হলে সরকার আর বিরোধীদল একজন আরেকজনের দিকে আংগুল তাক করে! আমরা নিজেদের কি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিতে পেরেছি? বলতে খারাপ লাগে, তবুও বলতে হয়, ত্রিশলক্ষ শহীদ কি তবে জীবন দিয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেচে খাওয়ার জন্য? দুলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতকি শেয়ার বাজারে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষের আত্মহত্যা করার জন্য? মানুষের এত ত্যাগ কি বেকারদের কাজ না পেয়ে বসে থাকার জন্য ছিল?

আমরা আজও নিজেদের কোন জাতীয় স্লোগান ঠিক করতে পারিনি। জয় বাংলা বললে সেটাতে কেউ ভারতের দাদাবাবুদের গন্ধ খুজে পাই আবার বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বললে সেটা পাকিস্তানের অনুকরণ হয়ে যায়। আজও এই দেশে কিছু মানুষ মনে মনে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা ভারত মাতা কি জয় আউরায়! নিজেদের মধ্যে দলাদলি হানাহানি নিয়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে অন্যরা এসে খুব সহজেই আমাদের বাঁশ মেরে যাওয়ার সুযোগ পায়। আমরাই কি আমাদের এসব অকর্মণ্য দুর্নীতিবাজ নেতাদের ভোট দেই না? মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের আমরা জংগী, সাম্প্রদায়িক বলে দূরে সরিয়ে রাখি, অথচ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ডিগ্রীধারীরা যখন চাকরীর নামে মোটা অংকের উতকোচ চান, তখন সেটা আমাদের মনে কোন দাগ ফেলে কি? ফেলে, ঘরে ফিরে পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাই, তুমিও বড় পাশ দিয়ে ওখানকার অফিসার হও, তুমিও এরকম টাকা আয় করতে পারবে!!! হায় রে আমাদের শিক্ষা, হায়রে আমাদের মুল্যবোধ!!! বেকার হয়ে বসে আছি, ব্যাংকের কোন এক চাকরীর জন্য অ্যাপ্লাই করে শুনলাম, পরীক্ষা হবে নামমাত্র, ১০ লাখ টাকা দিলে লিখিত থেকে ভাইভা, সব জায়গায় পাশ করিয়ে দেবে! তাহলে মেধার মূল্য কই? কেন অন্যরা এসে আমাদের অপমান করবে না? আজ যদি আমরা নিজেরা উন্নতি করতে পারতাম জাতি হিসেবে, তাহলে কি ভারত পারত কথায় কথায় গুলি করে পাখির মত মানুষ মারতে? পারত বৈষম্যমুলক অর্থনীতির ফাঁদে ফেলতে? আমরা পাকিস্তানকে পারতাম না সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য বাধ্য করতে? পারতাম না হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে? আমরা সেটা পারি না। আমরা বাংলাদেশী হতে পারিনা! আমরা পারি নিজেদের মধ্যে দলাদলি করতে আর কামড়াকামড়ি করতে! এখানে এই ব্লগে রাজাকারগুলো এমন কিছু মন্তব্য করার সাহস পেয়েছে, যে স্তম্ভিত হয়ে গেছি! পরে কিছু ছাগুফাইটারদের মন্তব্য পড়েও হতবাক হয়েছি আর বুঝেছি কেন ঐসব রাজাকার এভাবে কথা বলে! আমরা ওদের প্রতিরোধের বদলে যে এভাবে ওদের আরো বংশবৃদ্ধির ব্যবস্হা করে দিচ্ছি, তা ঐসব ছাগুফাইটার নামক বলদগুলোকে কে বোঝাবে! (আমার নামেও ছাগু ট্যাগ লাগা একরকম নিশ্চিত এই লাইণের মাধ্যমে!)
পুলিশ ওদের পিটায় আর ওরা গ্রাম গন্জে গিয়ে মানুষরে বুঝায় যে দ্বীনের জন্য ওরা কতই না কুরবানী দিচ্ছে! আর ওরা পুলিশ পিটিয়ে এসে বলে যে আমরা জিহাদ করে এসেছি! ফলে আরও কিছু বংশধর তৈরী হয়, আরও কিছু নতুন ছাগু তৈরী হয়! কেউবা শহরে, কেউবা বিদেশে বসে বড় বড় কয়েক লাইন লিখে বিস্ময় প্রকাশ করে আর বলে এদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। কেউ এটা দেখে নাযে, এরা কি ভাবে তৈরী হচ্ছে!!! আমরা আমাদের দেশে কিভাবে রাজাকার তৈরী করছি!

সময় হয়েছে এক হওয়ার, আগে বাংলাদেশী হওয়ার! তারপর সকল অপমানের, সকল অপরাধের জবাব দেওয়ার!
কিন্তু, আমরা বাংলাদেশী হব কবে???
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×